E-Paper

কমলা-সম্বাদ

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল সে দেশের একার মাথাব্যথা নয়। বিশ্ব জুড়ে একটা নতুন হিসাব কষার তোড়জোড় চলছে। সেই নতুন স্রোত এসে ধাক্কা দিয়েছে দিল্লি দরবারেও।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৫
(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন।

(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।

হঠাৎ যেন ‘জমে’ উঠেছে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-নাট্য। একে তো কিছু দিন আগেই নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে গুলি চলেছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে। এ বার প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবং সেই জায়গায় তিনি প্রস্তাব করে গেলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস-এর নাম। বয়স এবং স্বাস্থ্যের কারণে এ বার বাইডেনকে নিয়ে সংশয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাটরা। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে তিনি সরে দাঁড়ানোয় এ বার রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নির্বাচনী টক্কর জোরদার হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার জন্য ডেমোক্র্যাট শিবিরে কমলা হ্যারিসের প্রয়োজনীয় সমর্থন মিললেও তাঁর নামে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়ার কথা ডেমোক্র্যাটদের আসন্ন জাতীয় অধিবেশনে। তবে দৌড়ে তিনি বাকিদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। একে তো বাইডেন নিজেই তাঁর নাম প্রস্তাব করেছেন, তদুপরি, কমলার রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনি অভিজ্ঞতা প্রভূত। দেশ জুড়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও বেশ সন্তোষজনক।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল সে দেশের একার মাথাব্যথা নয়। বিশ্ব জুড়ে একটা নতুন হিসাব কষার তোড়জোড় চলছে। সেই নতুন স্রোত এসে ধাক্কা দিয়েছে দিল্লি দরবারেও। ভূরাজনৈতিক তথা কূটনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের দিক থেকে এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ— সাম্প্রতিক কালে যেখানে দু’দেশের সম্পর্ক এক অন্য মাত্রা অর্জন করেছে, বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। পরমাণু শক্তি-সহ বিবিধ কারণে অনাস্থার সম্পর্ক ছিল দুই দেশের মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, ওয়াশিংটনের তরফে বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বহু দিন ধরে পাকিস্তানকে কৌশলগত আনুকূল্য দেওয়া হয়, যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সময় পাল্টেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের পুরনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরেছে, নতুন বাধ্যবাধকতা এসেছে। সব মিলিয়ে গত দু’দশকে যেন একটা গতি এসেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে, যার ইতিবাচক প্রভাব কূটনীতিতে তো বটেই, পড়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কেও। ভারতের বাজারে আমেরিকান পণ্যের জন্য দ্বার অবারিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত লেনদেনও। আজ আমেরিকা যেমন ভারতের অন্যতম বৃহৎ ‘ট্রেডিং পার্টনার’, তেমনই ওয়াশিংটনেরও বাণিজ্যিক অংশীদারির তালিকায় দিল্লি রয়েছে প্রথম দশে। তা ছাড়া প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক সুরক্ষার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান কৌশলগত অংশীদার আমেরিকা।

গত আট বছরে ভূরাজনীতিতেও লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ট্রাম্প চিনের সঙ্গে চার দশকের পুরনো সম্প্রীতির সম্পর্ক-নীতির উল্টো পথে হাঁটেন। বাইডেনও তাঁর পূর্বসূরির পথ অনুসরণ করেন। ফলত, সমীকরণের নিয়ম মেনেই দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্রমশ মজবুত হয় ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক। লক্ষণীয়, কূটনীতিতে যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই চালিত হয় জাতীয় স্বার্থের দ্বারা। ফলে, ডেমোক্র্যাট না রিপাবলিকান— ভারতের জন্য কোন দলের প্রেসিডেন্ট উপযুক্ত হবেন, এই প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক। তবুও পালাবদলের হাওয়া কতটা দোলায় কূট-তরণীর পালটিকে, সেই আশঙ্কায় রয়েছে দিল্লি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

US President Election USA Donald Trump Kamala Harris Joe Biden

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy