—ফাইল চিত্র।
এই বৎসর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষা লওয়া হইবে না— শিক্ষামন্ত্রীর সহিত রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হইল। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা বহু দূর হইয়াছিল। তাহাও বাতিল হইল। বন্ধ থাকিবে ভর্তির কাউন্সেলিংও। প্রশ্ন হইল, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির মাপকাঠি তবে কী হইবে? প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইহার সঙ্গে এক দিকে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ, এবং অন্য দিকে সামগ্রিক ভাবে মানবসম্পদের মানের প্রশ্নটি জড়িত। সমাধান হিসাবে বৈঠকে বলা হইয়াছে, উভয় ক্ষেত্রেই ভর্তি লওয়া হইবে শেষ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্নের অবকাশ আছে। গত বৎসর হইতে স্নাতকের পরীক্ষাগুলি অনলাইন হইয়াছে। বহু ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র পরিকাঠামোগত অসুবিধার কারণে যথাযথ ভাবে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারে নাই। স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ ফলই বিচার্য হইলে, তাহাদের মেধার প্রতি সুবিচার করা হইবে না। উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একই কথা। এই বৎসর উচ্চমাধ্যমিক বাতিল হইয়াছে। মূল্যায়নের যে পদ্ধতি স্থির হইয়াছে, তাহা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নহে। প্রাপ্ত নম্বরে শেষ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মেধার প্রতিফলন কত দূর ঘটিবে, তাহা লইয়া সন্দেহ আছে। উচ্চশিক্ষার মাপকাঠি হিসাবে এই নম্বরকে গণ্য করা হইলে মুড়ি-মিছরি এক দর হইবার সম্ভাবনাটি প্রবল। এবং ইহারই সুদূরপ্রসারী ফল হিসাবে ভবিষ্যতে মানবসম্পদের গুণমান উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিতে পারে। দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে চিত্রটি আদৌ আশাব্যঞ্জক নহে।
গভীরতর প্রশ্নটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের অধিকার সংক্রান্ত। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব পরিচালন সমিতি আছে। ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত তাহাদের উপরেই বর্তায়। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের অধিকার আছে ভর্তি সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়মাবলি স্থির করিবার। মুক্ত বাজারে নিজেদের স্বার্থেই তাহারা পরিস্থিতি এবং নিজেদের মানের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া সেরা ছাত্র বাছাই করিবে— নচেৎ সেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকাটি অনেকাংশে পর্যবেক্ষকের। সরাসরি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে নাক গলাইবার কাজটি তাহার নহে। কিন্তু, অধিকারের এই সীমারেখাটি সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভুলিয়াছে। ভুলিবার প্রমাণ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে স্পষ্ট। তিনি পূর্বে বারংবারই দাবি করিতেন— শিক্ষকদের বেতন দেয় রাজ্য সরকার, সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপে সরকার প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করিবে বইকি। এই নিয়ন্ত্রণকামী মানসিকতা কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় কাম্য নহে। নূতন শিক্ষামন্ত্রী ভিন্ন পথে ভাবিবেন, আশা। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা সরকার ভাবিবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুরোধ করিতে পারে, পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু নিজ সিদ্ধান্তটি চাপাইয়া দিতে পারে না। বিশেষত, যেখানে প্রশ্ন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের, এবং সার্বিক ভাবে শিক্ষার মানের, সেখানে এইরূপ পরীক্ষানিরীক্ষার কোনও জায়গা নাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অনলাইন ক্লাস হইতে বঞ্চিত বহু পড়ুয়া, তদুপরি যোগ্যতার সঙ্গেও আপস করিতে হইলে যে ক্ষতির সম্মুখীন তাহারা হইবে, তাহা অপূরণীয়। অতিমারি-অন্তেও তাহার রেশ থাকিয়া যাইবে বহু কাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy