Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Independence Day Speech

পরবর্তী কর্তব্য

প্রয়োজন রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের অর্থনৈতিক সংস্কারের। সরকারকে ব্যবসা পরিচালনা থেকে আরও সরে আসতে হবে, মন দিতে হবে শাসনে।

পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারত গত পঁচাত্তর বছরে বিস্তর উন্নতি করেছে।

পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারত গত পঁচাত্তর বছরে বিস্তর উন্নতি করেছে।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২২ ০৫:৩১
Share: Save:

দেশ স্বাধীনতার প্রথম পঁচাত্তর বছরে কী কী অর্জন করল, কোন সম্পদ খোয়াল, গত কয়েক সপ্তাহে বারংবার সেই হিসাব কষা হয়েছে। মিলিয়ে দেখা হয়েছে জমা-খরচের পাল্লা। এ বার সামনের দিকে তাকানোর পালা। আগামী পঁচিশ বছর কোন ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রগতি করা প্রয়োজন? প্রথমেই যে দু’টি ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করতে হয়, তার একটিতে ভারত ধারাবাহিক ভাবে খারাপ করেছে, অন্যটিতে মিশ্র ফল— স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা। অতিমারি ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার ফাটলগুলিকে প্রশ্নাতীত রকম স্পষ্ট করে দিয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উপস্থিতি কাম্য, কিন্তু তা যেন অকুশলী, অনুৎপাদনশীল না হয়। বিমার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকে সর্বজনীন করার নীতিটি কতখানি গ্রহণযোগ্য, তা আন্তর্জাতিক এবং ভারতের গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচার করা প্রয়োজন। জোর দিতে হবে এক দিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, এবং অন্য দিকে গবেষণার উপরে। শিক্ষায় যাতে কোনও বৈষম্য তৈরি না হতে পারে, তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্য। ডিজিটাল শিক্ষার বিস্তার ঘটবে— তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবারও বিস্তার ঘটে। পারিবারিক আর্থিক অনটন যাতে শিশুর শিক্ষার অধিকার খর্ব না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই হবে। অন্য দিকে, মাথায় রাখতে হবে নতুন যুগের প্রয়োজনের কথাও। আজকে প্রচলিত বহু কাজই কৃত্রিম মেধার কারণে কিছু বছরের মধ্যেই আর শ্রমিকের নাগালে থাকবে না। কিন্তু তৈরি হবে নতুন কাজ। তার জন্য যে সৃষ্টিশীল শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারত গত পঁচাত্তর বছরে বিস্তর উন্নতি করেছে, কিন্তু এখনও অনেক পথ চলা বাকি। সড়ক-বন্দর-বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, বাজারের সঙ্গে প্রান্তিক অঞ্চলের মসৃণ যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আরও অনেক পথ চলার আছে। এবং, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাথায় রাখতে হবে পরিবেশের ভারসাম্যের কথা। আগামী পঁচিশ বছরে পরিবেশের প্রশ্নটি আরও অনেক গুরুতর হয়ে উঠবে, কাজেই পুনর্নবীকরণযোগ্য সবুজ জ্বালানির পথে হাঁটা জরুরি। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে বাস্তুতন্ত্রের কথা। ‘উন্নয়ন’-এর নামে নির্বিচারে অরণ্য ছেদন, পাহাড়ে অপরিকল্পিত নির্মাণ ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। এবং, এই ক্ষেত্রগুলিতে স্থানীয় মানুষের মতামতকে যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়।

প্রয়োজন রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের অর্থনৈতিক সংস্কারের। সরকারকে ব্যবসা পরিচালনা থেকে আরও সরে আসতে হবে, মন দিতে হবে শাসনে। অন্য দিকে, সাঙাততন্ত্রকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। বাজার ব্যবস্থাকে তার পূর্ণ মহিমায় কাজ করার পরিসর দিতে হবে। তার জন্য নজরদারি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা বিধেয়। আরও একটি কথা মনে রাখা জরুরি— ভারতের জনবিন্যাস পাল্টাচ্ছে, আগামী বছরগুলিতে ক্রমেই প্রবীণ, নির্ভরশীল নাগরিকের অনুপাত বৃদ্ধি পাবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে এই প্রবণতাটি তার তীব্রতম স্তরে পৌঁছবে না, তা সত্য— কিন্তু প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন। তার জন্য বহুমুখী ও বহুস্তরীয় সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। লিঙ্গসাম্যের প্রশ্নটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এবং, আগামী পঁচিশ বছরের কর্তব্যতালিকায় যে বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, দেশে সামাজিক বিশ্বাসের মাত্রা বাড়াতে হবে। তার জন্য উদারবাদী গণতন্ত্রের অনুশীলন প্রয়োজন। রাষ্ট্র কোনও মতেই নাগরিকদের মধ্যে ভেদনীতিতে বিশ্বাসী হতে পারে না, তাকে সর্বজনীন হতেই হবে। আগামী পঁচিশ বছরে ভারত অতীতের ভুলগুলি সংশোধন করে এগিয়ে চলুক। উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Independence Day Speech 15th August Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE