E-Paper

সংরক্ষণ জট

আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া নিয়োগ বা ভর্তি করা যায় না, নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিচারাধীন বিষয়ের জটিলতা কাটিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াটি মসৃণ করতে রাজ্য সরকারও কি যথেষ্ট উদ্যোগী?

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৬:০১

নিয়োগের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি-জাল এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাটির জরাজীর্ণ দশা। তদুপরি, মামলা-মকদ্দমার কারণে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের ছন্দটিও অবরুদ্ধ। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, এমন সময়ে আবার সেই ছন্দপতন। শিক্ষা দফতর থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১০ মে অবধি আবেদনপত্র দেওয়া হবে, এবং শিক্ষার্থীরা তা পূরণ করে জমা দেবে। অতঃপর, মেধা তালিকা প্রকাশ এবং তদনুযায়ী ভর্তি— এমনটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু তেমনটি হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন থাকার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনও মেধা তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। সুতরাং, রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত।

একই রকম অনিশ্চিত উচ্চশিক্ষায় ভর্তিও। গত বছর রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ এবং রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বেশ কয়েকটিতে অভিন্ন কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে স্নাতক স্তরে ভর্তি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এই বছর সেই পোর্টাল চালু করা সম্ভব হয়নি ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতায়। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, জানতে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ এবং উচ্চশিক্ষা দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজ্যের প্রথম সারির দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তর মেলেনি। আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া নিয়োগ বা ভর্তি করা যায় না, নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিচারাধীন বিষয়ের জটিলতা কাটিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াটি মসৃণ করতে রাজ্য সরকারও কি যথেষ্ট উদ্যোগী? সমস্যাটি তো নতুন নয়। গত বছর কলকাতা হাই কোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া যাবতীয় ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে। এ বছরের মার্চে নতুন করে ওবিসি সমীক্ষার কাজ শুরু করার কথা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। আবেদন করেছে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই মামলার শুনানি স্থগিত রাখার। কিন্তু তত দিনে একাদশ ও স্নাতক স্তরে ভর্তির কী হবে, সেই ‘তুচ্ছ’ কথাটি অবহেলিতই থেকে গিয়েছে।

অথচ সকলেই বোঝেন, সরকারি শিক্ষা-পরিকাঠামোয় এই অনাবশ্যক বিলম্ব কত দূর ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে এখন নতুন সিমেস্টার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। একে দিশাহীন ছুটির ধাক্কায় শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠন অনিয়মিত। তদুপরি, বিলম্বে পঠনপাঠন শুরু হলে সেই ফাঁক পূরণ করার মতো যথেষ্ট শিক্ষকও নেই। অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা যেখানে পরবর্তী পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, সেখানে এতগুলি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী নিয়মের ফাঁসে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে না, পিছিয়ে পড়বে কিংবা অন্য স্কুলে যেতে বাধ্য হবে, এতটাই কি এ রাজ্যের দুর্ভাগ্য? রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের মর্জিমাফিক চলতে গিয়ে সরকারি স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই তার গুরুত্ব, মর্যাদা প্রায় হারিয়ে ফেলতে বসেছে। এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেই তার যথেষ্ট প্রমাণ। বাকিটুকু বজায় রাখতে হলে ‘আদালতের বিচারাধীন বিষয়’ বলে দায় ঝেড়ে না ফেলে অবিলম্বে ভর্তির জটিলতা কাটাতে হবে। তবে কিনা, অস্বচ্ছতা এবং অনিয়ম যেখানে প্রশাসনযন্ত্রের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে, এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রেও, সেখানে এই দায়িত্ববোধ— দুরাশামাত্র।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Students Education

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy