E-Paper

সুসংবাদ

সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ থেকে দেশে জিএসটি-র পরিবর্তিত হার প্রচলিত হওয়ায় বহুবিধ পণ্যের দাম কমেছে। আশা করা যায়, তার ফলে চাহিদা খানিক হলেও বেড়েছে। জিডিপির পরিসংখ্যানে তার সুপ্রভাব পড়বে বলেই আশা।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৮

সব পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার পৌঁছল ৮.২ শতাংশে। বেশ চমকে দেওয়ার মতোই পরিসংখ্যান, কারণ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান ছিল, এই হার থাকবে ৭ শতাংশের কাছাকাছি। সব মিলিয়ে অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার পৌঁছল প্রায় ৮ শতাংশে। পূর্বাভাস ছিল যে, অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে বৃদ্ধির হার তুলনায় নিম্নমুখী হবে। কিন্তু, প্রথম ছ’মাসের বৃদ্ধির হার আশা জাগাচ্ছে, পরিস্থিতি যতখানি খারাপ হবে বলে ভাবা গিয়েছিল, শেষ অবধি হয়তো তার চেয়ে ভাল ফলই পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার সম্বন্ধে আশাবাদী হওয়ার বিশেষ কারণ হল, এই সময়েই এক দিকে আমেরিকার শুল্কযুদ্ধ চরমে উঠেছিল, অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দামও ছিল টালমাটাল। তার পরও ৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির হার অর্থব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রমাণ। তবে পাশাপাশি এ কথা ভুললেও চলবে না যে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ভারতে উৎসবের ঋতু, ফলে ভোগ্যপণ্যের পিছনে ব্যয় এই সময়টিতে বাড়ে। উৎপাদক সংস্থাগুলিও সে কথা মনে রেখেই তাদের উৎপাদন বাড়ায়। কাজেই, তৃতীয় ত্রৈমাসিকের পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখতে হবে। অবশ্য, সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ থেকে দেশে জিএসটি-র পরিবর্তিত হার প্রচলিত হওয়ায় বহুবিধ পণ্যের দাম কমেছে। আশা করা যায়, তার ফলে চাহিদা খানিক হলেও বেড়েছে। জিডিপির পরিসংখ্যানে তার সুপ্রভাব পড়বে বলেই আশা। তবে, অক্টোবরেই শিল্পোৎপাদনের সূচক ১৩ মাসের মধ্যে নিম্নতম স্তরে পৌঁছনো উদ্বেগজনক।

বৃদ্ধির হারে অঙ্কটিকে ভাঙলে দেখা যাচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে ৩.৫ শতাংশ হারে। ভারতীয় কৃষির বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদি পরিসংখ্যানের নিরিখে হারটি ভাল। এবং, এ বছর বর্ষা যে-হেতু ভাল হয়েছে, ফলে কৃষির আয়বৃদ্ধির সুপ্রভাব পরবর্তী ত্রৈমাসিকেও থাকবে বলেই আশা করা যায়। নির্মাণ শিল্পেও আয়বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি হারে। পরিষেবা ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটেছে। সহস্রাধিক বাণিজ্যিক সংস্থাকে নিয়ে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, সেই সংস্থাগুলির বিক্রির বৃদ্ধির হারের চেয়ে মুনাফার বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য রকম বেশি। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতির হার নিম্নগামী হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে, এবং সংস্থার মুনাফায় তার প্রতিফলন ঘটেছে। ব্যক্তিগত ভোগব্যয় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়ে অর্থব্যবস্থার মধ্যে একটি ইতিবাচক হওয়া রয়েছে। মূলত গ্রামীণ ক্ষেত্রে তেজি চাহিদা এই বৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তবে, সঙ্কুচিত হয়েছে সরকারি ব্যয়। সুদ প্রদান ও ভর্তুকি বাদ দিলে সরকারের রাজস্ব ব্যয় বছরের প্রথম ছ’মাসে সঙ্কুচিত হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি।

এখন প্রশ্ন হল, বৃদ্ধির এই ভরবেগ কি সুস্থায়ী, না কি পূর্বাভাসের পথরেখা মেনে পরবর্তী ছ’মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নগামী হবে? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যে কোনও বড় বিপদে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় তার অভ্যন্তরীণ বাজার। এ বারও তা-ই ঘটেছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণ অবহেলা করে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধির হার উচ্চ কক্ষপথে ধরে রাখা কার্যত কঠিন। ফলে, এক দিকে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ভারতকে মনোযোগী হতে হবে, আর অন্য দিকে নতুনতর বাণিজ্যসঙ্গীর সন্ধানও অব্যাহত রাখতে হবে। তাকাতে হবে সুদের হারের দিকেও। মূল্যস্ফীতির বিপদ আপাতত তীব্রতা হারিয়েছে। ফলে, আগামী মনিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার আরও খানিক কমানোর কথা ভাববে কি না, সে দিকে নজর থাকবে। তবে, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মৌলিক লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া চলবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

GDP RBI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy