Advertisement
E-Paper

উচিত শিক্ষা?

রাজ্য পড়ুয়াদের পড়ার চাপ হালকা করতে বলেছে, পাঠ্যক্রমে এসেছে যোগ ও শরীরচর্চা, শিক্ষক-ছাত্রের সুষ্ঠু অনুপাতের দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে যাতে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের নজরে থাকে।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫১

সময়ে প্রজেক্ট জমা দিতে না পারার ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করেছিল জয় লোবো। একটু রোদ, খানিকটা বৃষ্টি, জীবনে দ্বিতীয় আর একটা সুযোগের যে প্রার্থনা ফুটে উঠেছিল গিটার বাজিয়ে গাওয়া তার শেষ গানে, তার পিছনে ছিল গাঢ় অন্ধকার, প্রত্যাশার গুরুভার— কলেজের, পরিবারের, সমাজের। থ্রি ইডিয়টস দিনশেষে এক সিনেমা, কিন্তু রাজস্থানের কোটায় গত সপ্তাহে এক দিনে তিনটি ছাত্রের আত্মহত্যা রূঢ়, করুণ এক বাস্তব। বিহারের অঙ্কুশ ও উজ্জ্বল, মধ্যপ্রদেশের প্রণব ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারির সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন; বাড়ি, পরিবার, প্রিয়জন থেকে বহুদূরে— এবং যে কারণে কোটার কোচিং সেন্টারগুলি ‘কুখ্যাত’, সেই অস্বাভাবিক নিয়ম, অগণিত পরীক্ষা, বিশ্রামহীন রুটিনের মধ্যে। ভাড়াবাড়ি বা পেয়িং গেস্ট ব্যবস্থায় কোনও মতে থাকা, দিনে পনেরো-ষোলো ঘণ্টা পড়াশোনা, এক ঘণ্টা বেশি ঘুমোতে চাইলে কর্তৃপক্ষের ভর্ৎসনা ও ধিক্কার— এই জীবন তাঁরা নিতে পারেননি। তাঁরা জীবনে সফল হতে চেয়েছিলেন, হয়তো এ ভাবে নয়। কী ভাবে, তাঁদের কাছে কেউ জানতে চায়নি— আত্মহত্যার আগের রাতে অঙ্কুশের ঘর থেকে কান্নার শব্দ শোনা গিয়েছিল, কেউ জিজ্ঞাসা করেনি অল্পবয়সি ছেলেটির কী হয়েছে।

২০২২ ফুরোতে চলল, এ বছর কোটায় চোদ্দো জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন, এই তথ্যও কি সমাজ ও প্রশাসনের শিউরে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট নয়? জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস বুরো-র দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও আত্মহত্যার সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট বেরিয়েছে এ বছর অগস্টে, সেখানে লেখা— গত পাঁচ বছর ভারতে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যা বেড়ে চলেছে, ২০২১-এই বেড়েছে ৪.৫ শতাংশ! সমাধান বাতলেছেন অনেকেই, কিন্তু হস্টেলের ঘরে সিলিং ফ্যান খুলে অন্য পাখা লাগালেই আত্মহত্যা কমে যায় না। অনেকগুলি রাজ্য পড়ুয়াদের পড়ার চাপ হালকা করতে বলেছে, পাঠ্যক্রমে এসেছে যোগ ও শরীরচর্চা, শিক্ষক-ছাত্রের সুষ্ঠু অনুপাতের দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে যাতে শিক্ষকেরা অন্তত ছাত্রছাত্রীদের নজরে রাখতে পারেন। এত কিছুর পরেও ঘটে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, সমস্যাটা আরও বড়। একটি-দু’টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হতে পারা না-পারার ব্যাপার এ নয়, আসল কথা: ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা পড়ুয়াদের উপর সিলেবাসের বোঝা আর পরীক্ষার রুটিন চাপিয়েই খালাস, তাদের মনের খবর রাখার তার কোনও দায় নেই। আরও জরুরি হল এখনকার অর্থনীতি ও বিশেষত কর্মক্ষেত্রের বাস্তবতার সঙ্গে আজকের পড়ুয়াদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া, শিক্ষা-প্রশাসনের সিলেবাসে যা কস্মিন্কালেও নেই। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে একত্র করে এ কাজ করা দরকার সরকারের, দেশের আইনপ্রণেতাদের। পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনায় বিব্রত রাজস্থান সরকার এখন কোচিং সেন্টারগুলিকে নিয়ম হালকা করার নির্দেশ দিয়েছে, এও সাময়িক সমাধান বই কিছু নয়। এক দিকে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর ভারসহ করা, অন্য দিকে পড়ুয়ার মনের খবর রাখা— এই দু’টি অবিলম্বে নিশ্চিত করা জরুরি। নয়তো ছবিতে জয় লোবো, বাস্তবে অঙ্কুশেরা ফিরে ফিরে আসবেন, সমাজকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে।

Student Suicide Kota Hostel Engineering Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy