অন্ধকার ক্রমে গাঢ়তর হচ্ছে। অভিবাসন বেআইনি না হলেও, এবং সম্পূর্ণ সরকারি নীতি ও রীতি অনুযায়ী হলেও অভিবাসীদের উপর নেমে আসছে আক্রমণ, এ দেশে, বিদেশে, বিশ্বের নানা প্রান্তে। এ বার অভিবাসন-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ব্রিটেন। সম্প্রতি বর্তমান সরকারের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে লন্ডনের রাস্তায় নামেন লক্ষাধিক মানুষ। আন্দোলনকারীদের দাবি, অ-শ্বেতাঙ্গরাই সব কিছু দখল করে নিচ্ছে, তাই ব্রিটেনের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। অভিবাসন সরকারি নীতি, তাই স্লোগান ওঠে লেবার পার্টি-র নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের বিরুদ্ধেও। বিক্ষোভের অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন অতি-দক্ষিণপন্থী তথা জনপ্রিয় উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা টমি রবিনসন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি মূলত ইসলাম প্রধান দেশগুলিকে নিশানা করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। লন্ডনের রাস্তায় এই বিপুল জনস্রোত সামলাতে প্রথম থেকেই বহু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু জনতার সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। এ দিকে, অতি-দক্ষিণপন্থী আমেরিকান ধনকুবের ইলন মাস্ক এই সমাবেশেই ভিডিয়ো বার্তা পাঠিয়ে হিংসা উস্কে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
কেবল তো সরকারি নীতি নয়। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জমাট বেঁধেছে ক্ষোভ। সাম্প্রতিক বিতর্কের সূত্রপাত একটি গ্রেফতারিকে ঘিরে। লন্ডনবাসী নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে ইথিয়োপিয়া-র এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। অভিবাসীরা আইনি ছাড়পত্র না-পাওয়া পর্যন্ত যে সমস্ত হোটেলে থাকেন, সেগুলিকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল ওই ঘটনার পর। লক্ষণীয়, দারিদ্র, জলবায়ু পরিবর্তন বা রাজনৈতিক নিপীড়নের জেরে শয়ে শয়ে অভিবাসী পশ্চিমি দেশগুলিতে আশ্রয় নেওয়ার ফলে আজ ব্রিটেনের মতো ইউরোপের বহু রাষ্ট্রেই ‘অভিবাসন’ রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক কোনও সরকারই অভিবাসীদের নৌকায় চেপে ইংলিশ চ্যানেল পেরোনো আটকাতে পারেনি। আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করতে সরকার আইনত বাধ্য, যা করা হয় জনগণের অর্থেই। এ দিকে, ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার পর থেকে ব্রিটেনের অর্থনীতির দুরবস্থা, তার উপর মূল্যস্ফীতি, ব্রেক্সিট— সব মিলিয়ে চাকরি ও আবাসনের অভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বেড়েছে অপরাধের সংখ্যাও। এমতাবস্থায়, দেশে এখন অভিবাসীদেরই অধিকার বেশি— এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে, আর তাকে কাজে লাগিয়েই ব্রিটেন-সহ বহু দেশে জমি শক্ত করছেন দক্ষিণপন্থীরা।
প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দক্ষিণপন্থীদের সামনে কোনও ভাবেই মাথা নোয়াবে না সরকার, যদিও তিনি বিলক্ষণ জানেন, এই সমস্যার কোনও সমাধান খুঁজতে এ-যাবৎ ব্যর্থ হয়েছে তাঁর সরকারও। তা ছাড়া, এই রাজনৈতিক অসন্তোষের মাঝে জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) তো বটেই, জনসাধারণের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সমস্যার ক্ষেত্রেও কোনও লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেনি। সে ক্ষেত্রে জনমত এ বার রিফর্ম ইউকে-র মতো দক্ষিণপন্থী দলের দিকে ঘোরার সম্ভাবনাই প্রবল। স্টার্মার সরকারের সামনে এখন কঠিন পথ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)