Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata news

সেই লজ্জাজনক অন্ধকারটা ঘিরে ধরছে অতি-দেশপ্রেমকে

কলকাতায় কাশ্মীরি এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে দেশভক্তিকে ঘিরে অন্ধকার কতটা গাঢ় এখন।

আক্রান্ত কাশ্মীরি শালওয়ালা শাকুর আহমেদ শাহ। —নিজস্ব চিত্র।

আক্রান্ত কাশ্মীরি শালওয়ালা শাকুর আহমেদ শাহ। —নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০০:১৩
Share: Save:

সেই লজ্জাজনক এবং ভয়ঙ্কর ইতিহাসটা ফিরে এল। অতি-দেশপ্রেম বা অতি জাতীয়তাবাদের নামে সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিসরে ঢেউ ওঠে যখন, তখনই এই লজ্জাজনক ছবিগুলো তৈরি হতে শুরু করে। কলকাতায় কাশ্মীরি এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে দেশভক্তিকে ঘিরে অন্ধকার কতটা গাঢ় এখন।

কাশ্মীরি বস্ত্র ব্যবসায়ী সফুর আহমেদ শাহ আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতায়। একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, প্রায় দু’লক্ষ টাকা ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে। যারা আক্রমণ করেছিল সফুরকে, তারা দেশভক্তের ছদ্মবেশে বলেই জানা যাচ্ছে। কোথায় বাড়ি, কী পরিচয়, কেন কলকাতায়— আচমকা হানা দিয়ে এই সব প্রশ্ন। যেন একদল ‘দেশভক্ত’ ঘিরে ধরেছে এক ‘দেশদ্রোহী’কে। কাশ্মীরি যুবক সফুর হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন, প্রশ্নগুলোর জবাবও দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার মাঝেই শুরু হয়ে গেল ছুরিকাঘাত, টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালাল হানাদাররা। পুলিশ সূত্রে অন্তত ঘটনার এইরকম বিবরণই মিলেছে।

ইতিহাসে চোখ রাখলেই জানা যায়, এ ছবি অত্যন্ত স্বাভাবিক। জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেম বা কোনও সংগ্রামের নামে যখন উগ্রতার চর্চা শুরু হয়, তখনই আঁধার ঘনাতে শুরু করে আর সেই আঁধারের সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। এ কোনও রাজনৈতিক প্রবনতা নয়, এটা আসলে স্বামাজিক প্রবনতা। আবেগের আধিক্যে বা উগ্রতায় সমাজ কখন, কী ভাবে এবং কতটা দুর্বল হয়, স্বামাজিক ছাঁকনিগুলো কখন অকেজো হয়ে পড়ে, ভাল-মন্দের ফারাক করার শক্তিটা কখন হারাতে থাকে স্বামাজিক চোখ, সে সব খুব ভাল বোঝে এই দুষ্কৃতীরা। তাই দুর্বল মুহূর্তগুলোকে আশ্রয় করে হানা দেয় তারা। কলকাতায় তেমনই ঘটল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: আবারও চমকে উঠল কলকাতা, কাশ্মীরি শালওয়ালার পেটে ছুরি মেরে টাকা লুট

এই উপসর্গ থেকেও যদি আমরা শিক্ষা না নিই, তাহলে নিজেদেরকেই আরও বড় সর্বনাশের পথে ঠেলে দেব। উপসর্গ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদের নামে আসলে উগ্রতার চর্চা শুরু হয়েছে। উগ্রতার চর্চা শুরু হয়েছে বলেই অন্ধকার এতটা গাঢ় হতে পেরেছে। অন্ধকার গাঢ় হতে পেরেছে বলেই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক সাধারণ নাগরিকের সতর্ক হয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। দেশভক্তি বা জাতীয়তাবাদকে বদনাম হতে দেওয়া চলে না আর। উগ্রতার বিসর্জন ঘটিয়ে আঁধার ঘোচাতে হবে এই মুহূর্তে। তাহলেই দেশের প্রতি, দেশবাসীর প্রতি তথা জাতির প্রতি প্রকৃত কর্তব্য পালন করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE