জল বন্ধ হোক, কেউই চাই না আমরা। হাজার হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে সভ্যতার প্রথম অঙ্কুরটা মাথা তুলেছিল যে নদের অববাহিকায়, সেই নদের প্রবাহ শুকিয়ে যাক, ভারতবাসী মন থেকে তা কিছুতেই চাইতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও হয়তো চান না। সিন্ধু জল চুক্তি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা তাঁকে শুরু করতে দেখছি যদিও। তবু বিশ্বাস রাখি, পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য অন্য কোনও পথ মোদী খুঁজে নেবেন নিশ্চয়ই।
কিন্তু সে সব তো আমাদের বিশ্বাস, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের সৌজন্য, আমাদের অনুভূতির কথা। তার সুবাদে হয়তো এ যাত্রা রক্ষা পাবে জল চুক্তি। কিন্তু সন্ত্রাসে রক্তাক্ত হতে হতে পশ্চিম দিগন্তে অপরিমেয় তিক্ততার মেঘ দেখছে যে ভারত, সেই ভারত যদি আজ যাবতীয় মূল্যবোধ, যাবতীয় সৌজন্য, যাবতীয় মানবিক অনুভূতি দূরে সরিয়ে রাখে, তা হলে পাকিস্তানের কী হবে?
অসীম নিঃসঙ্গতার ঘেরাটোপে আজ ইসলামাবাদ। জল চুক্তি ভেঙে দেওয়াটা যে অনুচিত, ইসলামাবাদের হয়ে সে কথাটা বলার মতো উল্লেখযোগ্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আজ এ বিশ্বে।
করুণা হচ্ছে এই পাকিস্তানকে দেখে। পাক প্রধানমন্ত্রীর প্রধান কূটনৈতিক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজের কণ্ঠস্বর যেন বিধ্বস্ত আজ। সিন্ধু জল চুক্তি থেকে ভারত একতরফা ভাবে সরে যেতে পারে না কিছুতেই, বললেন সরতাজ। এই ভাবে চুক্তিভঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর, এমনও বলা হল। কিন্তু নামান্তরের সেই যুদ্ধ যদি ভারত শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেই দেয়, তা হলে কী হবে? কোন পথে মোকাবিলা হবে? সরতাজ আজিজ থেকে নওয়াজ শরিফ, কারও কাছেই এর উত্তর নেই। পাশ থেকে একে একে সরেছে সব মিত্র। উদ্যত এক বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে পাকিস্তানের কণ্ঠস্বরে আজ আতঙ্ক মিশ্রিত আর্তি যেন এক!
ভারত জল চুক্তি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক কোনও চুক্তি এ ভাবে একতরফা ভেঙে দেওয়া কূটনৈতিক রীতির পরিপন্থী। কিন্তু সন্ত্রাসের গর্ভগৃহ হয়ে ওঠার চেষ্টায় এত গভীর এক অন্ধকূপে নেমেছে পাকিস্তান, যেখানে আলোর রেখা পৌঁছতেই চাইছে না। দীর্ঘ দিনের পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা পাশে নেই। গোটা ইউরোপ বিরুদ্ধে। ইসলামি বিশ্ব পাশে দাঁড়াবে বলে নওয়াজ শরিফরা আশা করেছিলেন। কিন্তু ইসলামাবাদের হাতে সন্ত্রাসের খড়্গটা এতই প্রকাশ্যে লকলক করছে যে কোনও বিবেচক রাষ্ট্রই পাকিস্তানের হয়ে সরব হতে চায় না। নওয়াজদের শেষ আশা ছিল চিন। কিন্তু ভারত-পাক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কোনও ইচ্ছা যে নেই, বেজিং তা বেশ স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়েছে।
অতএব, অসীম নিঃসঙ্গতাই ভবিতব্য। সন্ত্রাসে সওয়ার হয়ে প্রতিবেশীকে বিধ্বস্ত করার অঙ্গীকার ছিল নিজের কাছেই। বাহন আজ লাগামছাড়া। পরিস্থিতি আজ নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে। সওয়ারি নিজেই সন্ত্রস্ত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy