মা ও স্ত্রী-এর মুখোমুখি কুলভূষণ। —ফাইল চিত্র।
দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতা নতুন নয়। গত সাত দশকে চার বার পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে দু’দেশ। আর সন্ত্রাস, নাশকতা, সীমান্তবর্তী সঙ্ঘাতকে কেন্দ্র করে ছায়াযুদ্ধ নিরন্তর চলছে। কিন্তু এই অবিরাম বিদ্বেষের মাঝেও মানবিক আদান-প্রদানগুলো তো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি এখনও। তা হলে মানবিকতার পরিসরে নিজের এমন কদর্য একটা রূপ কেন তুলে ধরল পাকিস্তানি রাষ্ট্র? এমন সীমাহীন অমানবিকতা, অভব্যতা এবং অসৌজন্যের মাধ্যমে পাকিস্তান কোন লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইল?
কুলভূষণ যাদবের পরিজনরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন পাকিস্তানে গিয়ে, কোনও সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা তেমন ঘটনা ঘটাতে পারে না। কুলভূষণ যাদব পাকিস্তানের চোখে অপরাধী। কোনও সুষ্ঠু যুক্তি-তর্কের পরোয়া না করেই তাঁর জন্য প্রাণদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে দিয়েছে পাকিস্তানি রাষ্ট্র। কিন্তু কুলভূষণের মা বা কুলভূষণের স্ত্রী তো কোনও অর্থেই আম-নাগরিক ছাড়া অন্য কিছু নন। বিদেশের কারাগারে বন্দি সন্তান বা স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া বা দেখা করতে যাওয়া তো অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তা হলে তাঁদের জন্য এই প্রবল হেনস্থা এবং অপমানের আয়োজন কেন হল পাকিস্তানে?
অসংবেদনশীলতা এবং মর্ষকাম প্রকাশের যত রকম পন্থা রয়েছে, সেই সব রকমই সম্ভবত প্রয়োগ করল ইসলামাবাদ। যাবতীয় বৈবাহিক চিহ্ন মুছে ফেলতে বাধ্য করা হল কুলভূষণ যাদবের মা ও স্ত্রীকে। পোশাক বদলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হল। দীর্ঘ দিন পর যাঁরা পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদেরকে পরস্পরের সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলতে দেওয়া হল না। কুলভূষণের স্ত্রীয়ের পা থেকে জুতোটা পর্যন্ত খুলে নেওয়া হল। মিডিয়াকে কুলভূষণের পরিজনদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেই মিডিয়ার সামনেই তাঁদের ফেলা হল। নানা কটূক্তি হজম করতে বাধ্য করা হল। আর দিনভর এই সাক্ষাৎ পর্বের নানা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দাবি করা হল, মহানুভব রাষ্ট্রের মতো আচরণ করেছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: মঙ্গলসূত্র কই! চমকে ওঠেন কুলভূষণ
সাক্ষাৎ পর্ব বা সাক্ষাতের নামে প্রহসন পর্ব মেটার পর থেকেই ভারত তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আগেই অসন্তোষ ব্যক্ত করা হয়েছিল। এ বার বিদেশ মন্ত্রী নিজেও সংসদে বিবৃতি দিলেন। পাকিস্তানে কুলভূষণ যাদবের মা এবং স্ত্রীয়ের চরম হেনস্থা এবং অপমানের আখ্যান তিনি বিশদে ব্যাখ্যা করলেন। তীব্র নিন্দায় সরব হলেন। প্রায় গোটা সংসদই তীব্র ধিক্কার জানাল পাকিস্তানকে। কিন্তু যে নীচতার পরিচয় পাকিস্তান দিয়েছে, তার নিন্দার জন্য উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। কারণ এ আচরণ দুর্বোধ্য।
শান্তির নামে মুখোশ পাকিস্তানের তরফে নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার মুখে শান্তির কথা বলে আড়ালে ছুরি শানিয়েছে পাকিস্তান। এ বারও যে পাকিস্তান সেই চেনা ছকেই, তা নিয়ে আর সংশয় নেই। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান পাক সেনাপ্রধান, এমন বার্তা সুকৌশলে চারিয়ে দেওয়া হল এক প্রান্ত থেকে। অন্য প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অতর্কিতে হামলা চালাল পাক বাহিনী, খুন করা হল চার ভারতীয় সৈনিককে। শান্তির জন্য পাকিস্তানের আগ্রহ কতখানি, অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখনই। কুলভূষণ যাদবের মা ও স্ত্রী-কে বড়দিনে যে ভাবে ‘আপ্যায়ণ’ করল পাকিস্তান, তাতে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদের দ্বিচারিতা।
তবে এ বার শুধু দ্বিচারিতায় সীমাবদ্ধ রইল না পাকিস্তান। সীমাহীন নীচতা, দীনতা, সঙ্কীর্ণতা এবং অমানবিকতারও পরিচয় পাকিস্তান দিল। কুলভূষণ যাদবের পরিজনদের সঙ্গে যে আচরণ করা হল, আবার বলছি, সে আচরণ দুর্বোধ্য। কোনও সভ্য রাষ্ট্র, সংবেদনশীল রাষ্ট্র, ন্যূনতম সৌজন্যবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র এই পরিমাণ সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিতে পারে না। আন্তর্জাতিক আঙিনায় সম্মান আগেই অনেকখানি খুইয়েছে পাকিস্তান। কুলভূষণের সঙ্গে তাঁর পরিজনদের সাক্ষাৎপর্ব আরও বড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করাল পাক রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে। এর খেসারত দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy