Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Plastic

চেতনাবিহীন

Plastic, Environmentসম্প্রতি ব্যবহার্য প্লাস্টিকের একটি বড় অংশই অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, পঞ্চাশ মাইক্রনের কম।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০০:৩৫
Share: Save:

সচেতনতা প্রসারে ধার্য হইয়াছিল একটি গোটা দিন। এক শ্রেণির মানুষের বদ-অভ্যাস সেই দিনটিকেও ঠাট্টার স্তরে নামাইয়া আনিল। গত ৩ জুলাই ছিল আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ-মুক্ত দিবস। লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী ‘এক বার ব্যবহার্য প্লাস্টিক’-এর ব্যবহার সম্পূর্ণ রোধ করা। অথচ, সেই বিশেষ দিনটিতেও অন্তত কলিকাতায় অবাধে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলিল। বিশেষজ্ঞরা ইতিপূর্বে বারংবার সতর্ক করিয়া বলিয়াছেন— প্লাস্টিক পচনশীল নহে। তাহা মাটিতে না মিশিয়া হাজার বৎসর ধরিয়া বর্জ্য হিসাবে পরিবেশে জমা থাকিতে পারে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ এবং বন মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি দিন ২০,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্যই মাটি এবং জলদূষণের অন্যতম কারণ। অতিমারির প্রাদুর্ভাব এই বর্জ্যের পরিমাণ আরও বহু গুণ বৃদ্ধি করিয়াছে। সমীক্ষা বলিতেছে, এই মুহূর্তে করোনাক্রান্ত সভ্যতা সঙ্কট আরও তীব্র করিয়া তুলিতেছে। প্রতি মাসে সারা বিশ্বে প্রায় ১২,৯০০ কোটি মাস্ক এবং ৬,৫০০ কোটি প্লাস্টিকের গ্লাভস পরিবেশে জমা হইয়া বন্য এবং সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন বিপন্ন করিতেছে। দুর্ভাগ্য, পরিবেশের এত বড় বিপর্যয়ের পরও মানুষ পরিবেশকে সম্মান দিতে রাজি নহে।

তাৎপর্যপূর্ণ— সম্প্রতি ব্যবহার্য প্লাস্টিকের একটি বড় অংশই অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, পঞ্চাশ মাইক্রনের কম। এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার লইয়া দেশে এবং এই রাজ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা আছে। আইন আছে। আইন অমান্যে শাস্তির ব্যবস্থাও আছে। অথচ, কার্যক্ষেত্রে কোনও কিছুই যথেষ্ট নহে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ হইতে গত বৎসরই ঘটা করিয়া জানানো হইয়াছিল, আগামী দুই বৎসরের মধ্যে দেশকে ‘এক বার ব্যবহার্য প্লাস্টিক’ হইতে মুক্ত করিবার কথা। রাজ্য সরকারও ঘোষণা করিয়াছিল, ২ অক্টোবর, গাঁধী জয়ন্তীর দিন হইতেই কলিকাতা পুর এলাকায় পলিব্যাগ, প্লাস্টিক স্ট্র, বোতল, প্লাস্টিক পাউচ-এর ন্যায় সামগ্রীর বিক্রি এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ হইবে। বিধি না মানিলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই জরিমানা করিবার কথাও শুনা গিয়াছিল। কিন্তু, গর্জন যত হইয়াছে, বর্ষণের দেখা যে তত মিলে নাই, ৩ জুলাইয়ের দিনটিই তাহার প্রমাণ। এখন শুনা যাইতেছে, যে সমস্ত বেআইনি কারখানা অবৈধ ভাবে এই প্লাস্টিকের ব্যাগ উৎপন্ন করিতেছে, তাহাদের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালাইবে। এত দিন তবে তাঁহারা কী করিতেছিলেন? ‘লকডাউনে নজরদারিতে ঘাটতি পড়িয়াছে’ গোছের যুক্তিও ধোপে টিকে না। লকডাউনের পূর্বে প্লাস্টিক লইয়া প্রবল কড়াকড়ি চলিত— এমন প্রমাণ মিলে নাই। বিকল্প পরিবেশবান্ধব সামগ্রীগুলিও মানে এবং দামে ক্রেতার নিকট যথেষ্ট আকর্ষক বলিয়া প্রতিপন্ন হয় নাই।

প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করিবার সমস্ত দায়িত্ব একা সরকারের— ভাবিলে ভুল হইবে। নিজের ভাল বুঝিয়া লইবার দায়িত্বটি জনগণকে লইতেই হইবে। প্লাস্টিক জমিয়া নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হইয়া শহরে জল জমিবার ভোগান্তি জনগণকেই প্রতি বর্ষায় পোহাইতে হয়, ডেঙ্গির শিকারও তাহাদেরই হইতে হয়। করোনাভাইরাস যে প্লাস্টিকে অধিক দিন বাঁচিয়া থাকিতে পারে, তাহাও অজ্ঞাত নহে। অথচ, বিক্রেতার নিকট হইতে প্লাস্টিকের ব্যাগ চাহিয়া লইবার অভ্যাস বন্ধ হইল না। এই নাগরিক অবিবেচনা ও স্পর্ধার মূল্য এখন গনিতে হইতেছে, ভবিষ্যতেও হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE