Advertisement
E-Paper

নেতা ও নীতি

মহাভারতে ছদ্মবেশী যক্ষের প্রশ্নের সম্মুখীন হইয়া যুধিষ্ঠির মনুষ্যজীবনের পরিচিত কতকগুলি অনুভূতির সংজ্ঞা দিয়াছিলেন। নিজ কর্তব্য না জানার নাম মোহ, কর্তব্য সঠিক রূপে পালন না করা আলস্য, নিজের কথা অধিক ভাবা গর্ব।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
—ছবি এপি।

—ছবি এপি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হইবে কি না সেই প্রশ্নে আমেরিকা উতরোল। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় কৃত সমীক্ষায় প্রকাশ, ৬৪ শতাংশ আমেরিকাবাসী বিশ্বাস করেন যে তাঁহাদের প্রেসিডেন্ট অপরাধ করিয়াছেন; ৪৫ শতাংশের মত, এই অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে ট্রাম্প দায়িত্ব লইবার পরেই। তাহা হইলে তো ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করা যাইতে পারে, এমত প্রশ্নের মুখে এই নাগরিকদেরই ৫৯ শতাংশ আবার ‘না’ বলিয়াছেন, ইহাও জ্বলন্ত সত্য। নেতাকে উৎখাত করা লইয়া জনমনে দোলাচল থাকিতে পারে, কিন্তু ইতিমধ্যে অপর এক মন্তব্যে তাবৎ চর্চার পালে হাওয়া লাগিয়াছে। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলিয়াছেন, ইমপিচমেন্ট অতি গুরুতর প্রক্রিয়া, ইহার ফলাফল রাষ্ট্র বা জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করিবার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ট্রাম্পের মতো মানুষের জন্য আমেরিকার মতো মহান ও ঐতিহ্যমণ্ডিত রাষ্ট্র দ্বিধাবিভক্ত হইবে, তাহা অকল্পনীয়। কারণ নেতাকে আলোচ্য হইতে গেলে তাঁহাকে যাবতীয় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হইয়া উঠিতে হয়, প্রয়োজন পড়ে তাহার নৈতিক ও বৌদ্ধিক যোগ্যতারও। ট্রাম্পের সেই যোগ্যতাই নাই। ইমপিচমেন্ট তো পরের কথা, তাঁহাকে লইয়া শব্দব্যয় অপচয়ের নামান্তর।

মহাভারতে ছদ্মবেশী যক্ষের প্রশ্নের সম্মুখীন হইয়া যুধিষ্ঠির মনুষ্যজীবনের পরিচিত কতকগুলি অনুভূতির সংজ্ঞা দিয়াছিলেন। নিজ কর্তব্য না জানার নাম মোহ, কর্তব্য সঠিক রূপে পালন না করা আলস্য, নিজের কথা অধিক ভাবা গর্ব। আমেরিকা যাইতে হইবে না, চোখকান খুলিয়া রাখিলেই চারিপাশে ভূরি ভূরি মোহগ্রস্ত, অলস ও গর্বোদ্ধত নেতার দৃষ্টান্ত মিলিবে। আশ্চর্য হইলেও সত্য, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এহেন নেতার বাহ্যরূপটি জনমোহিনী, তাহার পিছনে উচ্ছ্বসিত জনসমর্থন সতত ধাবমান। জনপ্রিয়তা একপ্রকার বর্মের কাজ করে, একবার পরিলে ধরাকে সরা জ্ঞান করিতে নেতার বিলম্ব ঘটে না। অতঃপর আরম্ভ হয় যাবতীয় নৈতিকতার জলাঞ্জলি পর্ব। আশ্চর্য ইহাই, নেতাদের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা ও অনৈতিকতার সম্বন্ধ বিপ্রতীপ নহে, বরং উহারা একে অপরকে পুষ্ট করিয়া থাকে। জনপ্রিয়তার গালিচা বিছানো পথে হাঁটিতে হাঁটিতে, দুই পার্শ্বের নীতি ও যুক্তি ধ্বংস করিতে করিতেই নেতা ক্ষমতার আসনে গিয়া বসেন। নৈতিকতা বর্জনই তাহার বাড়বাড়ন্তের পূর্বশর্ত, নেতা বিলক্ষণ বুঝিয়া গিয়াছেন।

ইহা নিশ্চিত ভাবেই এক সমস্যা। উদারপন্থী মানুষ ইহাকে কোন চোখে দেখিবেন, এই সঙ্কটের সমাধানেই বা তাঁহাদের ভাবনা কী, ভাবিতে হইবে। বৌদ্ধিক দিক দিয়া নিতান্ত অনধিকারী, নৈতিক ভাবে অধঃপতিত নেতাদের লইয়া সমাজ ও রাজনীতির পরিসরে যে গভীর মন্থন হয়, তাহার কি কোনও অর্থ আছে? কেহ বলিবেন, ইহাদের লইয়া চর্চা মাত্রেই সময় ও শব্দের অপব্যয়, বাক্‌স্ফূর্তি উপযুক্ত পাত্রে হইলেই মঙ্গল। আবার এইরূপও ভাবা যায়, এহেন নেতাদের দিকে আঙুল না তুলিলে, উহাদের অনৈতিক অস্তিত্বকে কাঠগড়ায় না তুলিলে ইহাদের সরাইবার যতখানি সুযোগ এক্ষণে বর্তমান, তাহাও হেলায় হারাইতে হইবে। প্রশ্ন করিবার কাজটি সহজ নহে, বিশেষত যেখানে নেতার পিছনে দণ্ডায়মান বৃহদ্বপু লোকপ্রিয়তা। এই নেতাদের লইয়া সমাজ কী করিবে, মুক্তচিন্তার মানুষদের তাহা সোজাসাপটা বলিবার সময় আসিয়াছে।

Donald Trump Impeachment USA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy