Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অভাব ও অভ্যাস

সরকার যাহাকে নিশানা মনে করিয়াছিল, তাহা আরম্ভমাত্র। অর্থাৎ গ্যাস পৌঁছাইবার কাজটি দূষণহীন রন্ধনের প্রথম ধাপ। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ, এই চারটি রাজ্যের ছিয়াত্তর শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে গ্যাস আসিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

উন্নয়নের এক সঙ্কট এই যে, বহু ব্যয়ে ও পরিশ্রমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নাগরিকের ঘরে পৌঁছাইলেও তাহা অব্যবহৃত পড়িয়া থাকে। শৌচাগার নির্মাণ করিয়া সরকার বুঝিয়াছিল, ভারত সহজে স্বচ্ছ হইবার নহে। কারণ, শৌচাগার ব্যবহার করিতে গৃহস্থকে সম্মত করাইবার কাজটি কঠিনতর। সম্প্রতি মিলিয়াছে আরও একটি তথ্য। ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’র অধীনে রান্নার গ্যাস গ্রামীণ গৃহস্থালিতে পৌঁছাইয়াছে, কিন্তু ব্যবহার হইতেছে সামান্য। অধিকাংশ গৃহস্থালিতে এখনও কাঠ-ঘুঁটের উনানে রান্না করিতেছেন মহিলারা, বলিতেছে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা। নির্বাচনের পূর্বে এই তথ্যটি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলিতে পারে। এই প্রকল্পটির সাফল্য দাবি করিয়া বিস্তর প্রচার করে ভারতীয় জনতা পার্টি। সে দাবি সর্বৈব মিথ্যা, এমন নহে। বাস্তবিকই এই প্রকল্পটি দরিদ্রের ঘরে এলপিজি গ্যাসের স্টোভ ও সিলিন্ডার পৌঁছাইয়া দিয়াছে। সরকার উদ্যোগ না করিলে এবং ভর্তুকি প্রদান না করিলে তিন বৎসরে ছয় কোটিরও অধিক দরিদ্র পরিবার রান্না করিবার দূষণহীন জ্বালানি পাইত না।

কিন্তু সমীক্ষা বুঝাইতেছে, সরকার যাহাকে নিশানা মনে করিয়াছিল, তাহা আরম্ভমাত্র। অর্থাৎ গ্যাস পৌঁছাইবার কাজটি দূষণহীন রন্ধনের প্রথম ধাপ। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ, এই চারটি রাজ্যের ছিয়াত্তর শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে গ্যাস আসিয়াছে। কিন্তু মাত্র সাতাশ শতাংশ পরিবার মাটির উনান পরিত্যাগ করিয়া গ্যাস ব্যবহার করিতেছে। ছত্রিশ শতাংশ গ্যাস পাইয়াও মাটির উনানই কেবল ব্যবহার করিতেছে, বাকিরা দু’টিই কাজে লাগাইতেছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, উজ্জ্বলা প্রকল্পে সংযুক্ত দুঃস্থ পরিবারগুলির মধ্যে গ্যাস ব্যবহার না করিবার প্রবণতা অধিক। অর্ধেকেরও অধিক পরিবার রান্নার গ্যাস ফুরাইলে নূতন সিলিন্ডার কিনিতে অনাগ্রহী। ইতিপূর্বে সরকারি পরিসংখ্যান হইতে ইঙ্গিত মিলিতেছিল যে, উজ্জ্বলা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পরিবারগুলি রান্নার গ্যাসের নিয়মিত গ্রাহক হইয়া ওঠে নাই। নূতন সমীক্ষাটি সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করিল।

তাহার কারণটিও স্পষ্ট হইল। গবেষকদের মতে, গ্যাস অব্যবহারের কারণ কেবল অর্থের অভাব নহে, অভ্যাসের অভাব। রান্নার গ্যাস যে রন্ধনকারীর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল, সে কথাটি গ্রামের প্রায় সকলেই স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের ধারণা, কাঠের উনানে প্রস্তুত খাবার অধিক স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু। স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প রূপায়ণেও এমনই সঙ্কট হইয়াছিল। শৌচাগার পাইয়াও অনেকে বলিয়াছিলেন, উন্মুক্ত স্থানে শৌচ অধিক স্বাস্থ্যকর। অস্বাস্থ্যের কারণ কেবল অভাব নহে, স্বভাবও তাহার কারণ। অপর কারণ বৈষম্য। জ্বালানি সংগ্রহ ও প্রস্তুতির কাজটি পরিবারের মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। কাঠ কুড়াইতে, ঘুঁটে বানাইতে তাঁহাদের যথেষ্ট পরিশ্রম হয়, কিন্তু সেই শ্রম পরিবার চিরকাল বিনামূল্যেই পাইয়া আসিতেছে। অতএব বিকল্প জ্বালানির জন্য ব্যয়ের প্রয়োজন কী? পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতা মেয়েদের সামান্যই, তাই গ্যাস সিলিন্ডার ‘অকারণ ব্যয়’ বলিয়া পরিগণিত হয়। অতএব সরকারকে ভর্তুকি-প্রদত্ত এলপিজি-র মূল্য বুঝাইতে চাহিলে মেয়েদের মূল্য বুঝাইতে হইবে। কাজটি সহজ হইবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ujjyala Scheme Gas Mud Stove
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE