Advertisement
E-Paper

পুলিশের স্পর্ধা

নিরীহের দমন-পীড়ন ও প্রভাবশালীর আজ্ঞাপালনের জন্য এ দেশের পুলিশের ‘সুনাম’ আছে। এ দেশের কারাবন্দিদের সাতষট্টি শতাংশ যে বিচারাধীন, অনেকে কারামুক্তির পূর্বে জীবন হইতে মুক্তি পায়, তাহাতেও পুলিশের অবদান কম নহে

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

পুণেতে তিন পুলিশ আধিকারিক যাহা করিলেন, তাহাতে দেশবাসী হতবাক। ইহারা কি পুলিশ, না কি নেতাদের খানসামা? বিচারাধীন মামলার নথিপত্র সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ করিতে পারে পুলিশ? মাওবাদী সন্দেহ করিয়া পাঁচ সুপরিচিত বিদ্বজ্জনকে গ্রেফতার করিয়াছিল পুলিশ। তাঁহাদের মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র, যাহা আদালতে পেশ হয় নাই, তাহা জনসমক্ষে প্রকাশ করিয়াছেন পুণের তিন পুলিশকর্মী। সুপ্রিম কোর্ট কেন এই মামলা-সম্পর্কিত আবেদন গ্রহণ করিয়াছে, কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার খারিজ করিয়া গৃহবন্দি করিবার নির্দেশ দিয়াছে, সে প্রশ্নও তুলিয়াছেন। এই স্পর্ধা অকল্পনীয়। সর্বদা আইন বাঁচাইবার ‘দুর্নাম’ পুলিশের নাই। বহু মামলায় দেখা যায়, পুলিশই কাঠগড়ায় উঠিতেছে। কিন্তু হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পুলিশ বিচারপতিদের না জানাইয়া সর্বসমক্ষে আনিতেছে, এমন নজির দুর্লভ। সুপ্রিম কোর্ট এবং মুম্বই হাই কোর্ট, উভয়ই তীব্র ভর্ৎসনা করিয়াছে পুলিশকে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সরকার পক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়াছেন পুলিশকে সংযত করিতে, তাহাকে সীমার মধ্যে রাখিতে। সমাজের বুঝিতে বাকি থাকে না, কী করিয়া এমন বিধিবহির্ভূত কাজ করিতে সাহসী হইয়াছে পুলিশ। সুধা ভরদ্বাজ প্রমুখ পাঁচ বিদ্বজ্জনকে ‘মাওবাদী’ সন্দেহে গ্রেফতার করিয়া পুলিশ যে মামলাটি দাঁড় করাইতে চাহে, তাহার প্রস্তুতিতে আইনের জোর কম এবং রাজনৈতিক চাপ অধিক, এই সংশয় জাগে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অছিলায় বিরোধীকে বিপন্ন করিতেছে পুলিশ, এই মর্মে একাধিক শহরে প্রতিবাদ হইয়াছে।

নিরীহের দমন-পীড়ন ও প্রভাবশালীর আজ্ঞাপালনের জন্য এ দেশের পুলিশের ‘সুনাম’ আছে। এ দেশের কারাবন্দিদের সাতষট্টি শতাংশ যে বিচারাধীন, অনেকে কারামুক্তির পূর্বে জীবন হইতে মুক্তি পায়, তাহাতেও পুলিশের অবদান কম নহে। বিপন্নের প্রতি পুলিশ কত নিষ্ঠুর, অথচ অভিযুক্তকে বাঁচাইতে কত তৎপর, তাহা কাঠুয়া এবং উন্নাওয়ের দুইটি ধর্ষণের মামলার দিকে চাহিলেই চলে। বিজেপির বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষিতা নাবালিকা কন্যার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তো গ্রহণ করেই নাই, পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা করিয়াছে। কন্যার পিতা পুলিশ হাজতে নিহত হইয়াছেন, পুলিশের অত্যাচারই মৃত্যুর কারণ বলিয়া সন্দেহ। দরিদ্র প্রান্তবাসীর উপর পুলিশের নির্যাতন লইয়া সরব লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভাবে পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনিয়াছে। সেই অভিযোগের পিছনে যুক্তিগুলি সাধারণত আইনগত নহে, রাজনীতিগত। স্বাভাবিক, কেননা এ দেশের অধিকাংশ রাজনীতিকের কাছেই আনুগত্য বিষয়টি অধিকার অপেক্ষা অনেক পছন্দের। একই কারণে, জনসমর্থন যত ক্ষীণ হইয়া আসে, পুলিশের উপর রাজনৈতিক নির্ভরতাও ততই বাড়িয়া চলে। কে রাজনৈতিক দলের কর্মী, আর কে পুলিশকর্মী, বিভেদ করা কঠিন হইয়া পড়ে। নন্দীগ্রাম আক্রমণে ‘চটি-পরা পুলিশ’-এর তাণ্ডব কিংবা সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, এ রাজ্যের নাগরিককে স্মরণ করাইবার দরকার নাই।

এমন পরিস্থিতিতে, পুলিশ আধিকারিকরা সর্বসমক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করিয়া ‘জনতার আদালত’-এ অভিযুক্তদের দোষী হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ব্যস্ত হইবেন, তাহাতে আশ্চর্য কী। ফৌজদারি আইনের ধারা, তদন্তের কুশলতা, সাক্ষী সংগ্রহ, নথিপত্র পেশ, এগুলি ক্রমেই এ দেশের পুলিশবাহিনীর কাছে অপ্রয়োজনীয় হইতেছে। নেতাদের বয়ান অনুযায়ী বিষয়টির গ্রাহ্যতা তৈরি করিতেই অধিক মনোযোগ দেখা যাইতেছে। উচ্চ আদালতের কাজে ব্যাঘাত ঘটাইয়া বিচারবিভাগের অমর্যাদা করিবার অপচেষ্টাও পুলিশের অত্যধিক রাজনীতি-মুখিতার ফল।

Audacity Police Bhima Koregaon Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy