আমাদের দেশের রাজনীতিতে রোজার নামে এক অদ্ভুত ধারার প্রচলন হয়েছে। ইফতার পার্টির আয়োজন করে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের সংখ্যালঘুদরদি প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
সারা দিন উপবাসের পরে একটি নির্দিষ্ট দোয়ার মাধ্যমে ইফতার করতে হয়, দোয়াটি হল: ‘হে আল্লাহ্, আমি তোমার জন্য রোজা রাখিয়াছি এবং তোমার এই রুজি প্রদানের উপর নির্ভর করিয়াছি। হে পরম দাতা, তোমারই অনুগ্রহে ইফতার করলাম।’ ভোরের বেলায় যখন খাওয়া হয়, তখন নির্দিষ্ট প্রার্থনা করে উপবাস শুরু করতে হয়। সেটি হল: ‘হে আল্লাহ্, আমি তোমার খুশির জন্য পবিত্র রমজান মাসের আগামী কাল রোজা থাকিব বলিয়া নিয়ত করিলাম। উহা তোমার আদেশ (ফরজ)। অতএব, আমার রোজা কবুল কর। নিশ্চয় তুমি মহাজ্ঞানী ও সব কিছু শুনিতে পাও।’ রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে: ‘হে বিশ্ববাসীগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম (রোজা)-এর বিধান দেওয়া হল। যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য।’
এ থেকে বোঝা যায়, রোজা একান্ত ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। সেখানে দেদার পয়সা খরচ করে ব্যাপারটি উৎসবে পরিণত করে ইফতার পার্টির আয়োজন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করাটা ইসলাম অনুমোদন করেনি। এবং যাঁরা উপবাস করেননি, তাঁদের ইফতারে যোগদান করা ইসলামে অনুমোদনযোগ্য নয়। প্রশ্ন হল, যে সব ইফতার অনুষ্ঠান আমরা আজকাল দেখি, তাতে ক’জন আল্লাহ্-র আদেশ পালন করে যোগদান করছেন? বুঝতে অসুবিধে নেই, আসলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের খুশি করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এমনকী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ গত শনিবার ৪ জুলাই ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল। এ সব থেকে বোঝা যায়, এই উদ্যোগগুলি স্রেফ ভণ্ডামি।
আর একটা কথা। হজরত মহম্মদ বলেছেন, বিদ্যাশিক্ষা প্রত্যেক নরনারীর পক্ষে আবশ্যিক। রাজনৈতিক দলনেতারা যদি ইফতার পার্টিতে অর্থব্যয় না করে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেন, তা হলে তাঁরা বলতে পারবেন, আমরা মহানবীর দেখানো পথ অনুসরণ করেছি। ইফতার পার্টিতে যোগদান করে তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে হবে না।
পুনশ্চ: গাঁধীজি নিহত হওয়ার পরে দিল্লির রাজপথে সংখ্যালঘু মানুষ বুক চাপড়ে আর্তনাদ করেছিলেন, আমরা অভিভাবক হারালাম। মওলানা আজাদের মৃত্যুর পর সমগ্র ভারতবাসী শোকে মুহ্যমান ছিলেন। যত দূর জানি, গাঁধীজিকে কখনও টুপি মাথায় দিয়ে ইফতার পার্টিতে যোগদান করতে দেখা যায়নি, মওলানা আজাদকেও পূজা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বা ঠাকুর প্রণাম করতে দেখা যায়নি। শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেনকে কোনও ইফতার বা পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখা যায়নি। জওহরলাল নেহরু কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে শোনা যায় না।
আইনজীবী, কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy