Advertisement
E-Paper

ধীরে ওয়েস্টমিনস্টার

এইখানেই প্রধানমন্ত্রী মে-র দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরাজয়। মতপার্থক্য সত্ত্বেও টোরি পার্টির মধ্যে ব্রেক্সিট প্রশ্নে এতখানি বিদ্রোহ তিনি সম্ভবত আশঙ্কা করেন নাই।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩৯

টেরেসা মে খুশি হইয়া ভাবিতেছিলেন, ব্রাসেলস হইতে সাফল্য কুড়াইয়া আনিলেন। দুর্ভাগ্য, তাঁহার খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হইল না। ব্রাসেলস-এ যে ‘ডিল’ই তিনি করিয়া আসুন, নিজের পার্লামেন্ট তাঁহাকে বুঝাইয়া দিল, দেশ তাঁহার সঙ্গে নাই। অতি সম্প্রতি পার্লামেন্টের ভোটে ব্রেক্সিট বিষয়ে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পাইলেন টেরেসা মে। পার্লামেন্টের এ বারের ভোটাভুটির মধ্যে অনেক রকম ভাগাভাগি, জটিলতা, কিন্তু মূল কথাটিতে কোনও অস্পষ্টতা নাই। প্রধানমন্ত্রী মে ব্রেক্সিট লইয়া যে ভাবে আগাইতে চাহিতেছেন, তাহা পালটাইতে হইবে। আরও ‘সফ্‌ট’ ব্রেক্সিট-এর জন্য চেষ্টা করিতে হইবে, যাহাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হইতে বাহির হইবার তাড়ায় ইইউ-এর সহিত দর কষাকষিতে ব্রিটেনকে বড় কিছু হারাইতে না হয়। পার্লামেন্ট-এর রায়ে পরিষ্কার— ব্রিটিশ জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশ অযথা হুড়াহুড়ি চাহেন না, পার্লামেন্টের আইনি মতপ্রকাশের অবকাশ রাখিতে চাহেন। একবগ্‌গা ভাবে অগ্রসর হইয়া দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বিপন্ন করার পক্ষে তাঁহারা ভোট দিতে নারাজ। এ দিকে ক্ষমতায় আসিবার প্রথম মুহূর্ত হইতে প্রধানমন্ত্রী মে ‘দ্রুত ব্রেক্সিট’-এর উপর জোর দিয়া আসিয়াছেন। বাস্তবিক, তাঁহার নিজের রাজনৈতিক জোরটিও তিনি এই ‘দ্রুত ব্রেক্সিট’ বিষয়ের উপরই রাখিয়াছিলেন। সুতরাং এ বারের পার্লামেন্টে তাঁহাকে যে ধাক্কা খাইতে হইল, তাহার মধ্যে মে-র রাজনৈতিক পরাজয় দেখিলে ভুল হইবে না। তাঁহার নিজেরই দলের কতিপয় এম পি তাঁহার বিরুদ্ধে ভোট দিয়াছেন, বিরোধীদের সহিত গলা মিলাইয়া প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীদের কথা শুনিয়া চলিতে পরামর্শ দিয়াছেন।

এইখানেই প্রধানমন্ত্রী মে-র দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরাজয়। মতপার্থক্য সত্ত্বেও টোরি পার্টির মধ্যে ব্রেক্সিট প্রশ্নে এতখানি বিদ্রোহ তিনি সম্ভবত আশঙ্কা করেন নাই। বিদ্রোহী টোরিদের জন্যই বিরোধীরা ব্রেক্সিট প্রস্তাবের পদ্ধতি বিষয়ে ভোট দিতে বসিয়া সামান্য ব্যবধানে জয় ছিনাইয়া লইলেন। ইহাও বোঝা গেল, ব্রেক্সিট লইয়া টোরি পার্টি বৃহত্তর সমাজ হইতে এই মুহূর্তে কতখানি বিচ্ছিন্ন। টোরিরা চাহেন চটজলদি সমাধান, তাহার জন্য কোনও দাম দিতেই অনিচ্ছা নাই, জাতীয় স্বার্থের কিছু ক্ষতি করিতেও নয়। বিপরীতে, ব্রিটিশ নাগরিকদের মনোভাব হইল, ইইউ হইতে বাহির হইবার সিদ্ধান্ত বহাল থাকিলে ভাল, কিন্তু বাহির হইবার জেদ এবং তাড়ায় অর্থনীতির আরও খানিকটা ক্ষতি করিলে জনসাধারণেরই বিপদ। সব মিলাইয়া ব্রিটিশ সমাজ আবারও প্রবল উত্তেজনাদীর্ণ, দ্বিধাবিভক্ত। সেই উত্তেজনা এবং দ্বিধা গত জুন মাসে একটি সমীক্ষায় স্পষ্ট প্রকাশিত হইয়াছিল। টোরি নেতারা সেই সময়ে কর্ণপাত করেন নাই।

সমস্যা বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যেও। ব্রেক্সিট প্রশ্নে প্রধান লেবার নেতা জেরেমি করবিন আবার এতটাই চরমপন্থী যে সেখানেও দলের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়া গিয়াছে। অনেকেই মনে করিতেছেন, করবিনের ‘বাড়াবাড়ি’ বাঞ্ছনীয় নয়, বরং লেবার দলের ‘মডারেট’ কণ্ঠ, অর্থাৎ যাঁহারা ব্রেক্সিটের প্রয়োজন স্বীকার করিয়া একটি যুক্তিসংগত পদ্ধতি ও সময়কালের প্রস্তাব করিতেছেন, তাঁহারাই সমর্থনীয়। গত সপ্তাহের ভোট এই মডারেট নেতাদের হাত শক্ত করিয়াছে। ‘সফ্‌ট’ ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপের সহিত এক বাজার ও এক কাস্টমস ইউনিয়নে থাকিবার প্রস্তাবে জোর দিয়াছে। টোরি বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসনের ব্রিটেনের নিজস্ব শর্তাবলির তাড়া অধিকাংশের গ্রহণযোগ্য নয়, বোঝা গিয়াছে। অর্থাৎ নীতিগত ও পদ্ধতিগত, উভয় দিক দিয়াই ব্রেক্সিট এখনও জটিল জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিদেশমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ও তাঁহাদের জনসমাজের মনোভাবের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব রহিয়াছে। ধীরে ওয়েস্টমিনস্টার, ধীরে!

UK Brussels Theresa May
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy