Advertisement
E-Paper

ভিআইপি সঙ্কট

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় পূজামণ্ডপের বাহিরে গণতন্ত্র ছুটিবে, ব্যাপার তত সরল নহে। উসখুস শুরু হইয়াছে: মহানগরীর বড় বড় পূজাগুলি ইহারই মধ্যে ভিআইপি কার্ড ছাপাইয়া ফেলিয়াছে, তাহাদের কী হইবে?

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩১
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র

দুর্গাপূজার প্রস্তুতি লইয়া আহূত সভায় পুলিশ ও পূজা-উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব: মণ্ডপে ভিআইপি কার্ড তুলিয়া দেওয়া হউক। তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতি আদায়ে মঞ্চে নেতা-মন্ত্রী তথা মহানগরীর জনপ্রিয় কয়েকটি পূজার প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের সরাসরি প্রশ্নও ছুড়িয়াছেন, তাঁহারা ভিআইপি কার্ড তুলিয়া দিবেন তো? মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব সকলে করতালি দিয়া স্বাগত জানাইয়াছেন। সত্যই তো, সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইয়া প্রতিমা দর্শন করিবেন, আর ভিআইপি বলিয়া বিবেচিত মুষ্টিমেয় মানুষ অতিরিক্ত সুবিধা পাইবেন কী কারণে? উৎসবে সকলেরই অধিকার, ভিআইপি কার্ড সেই সমানাধিকারের দ্বারে মূর্তিমান বৈষম্য। পূজামণ্ডপে ভিআইপিদের অনায়াস আগমন-নির্গমন দেখিয়া সাধারণ মানুষ হতাশ ও ক্রুদ্ধ হন, প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরাইয়া দেন, এবং উপায়ান্তর না দেখিয়া পর বৎসর ভিআইপি কার্ড বাগাইবার আশায় পরিচিত পূজা উদ্যোক্তাদিগকে ব্যতিব্যস্ত করিতে থাকেন। অবশিষ্ট বৎসর তাঁহারা রামশ্যামযদুমধু, ভিআইপি কার্ডের সৌজন্যে উৎসবের ওই কয়টি দিন কংসরাজের বংশধর হইবার ছাড়পত্র পাইয়া যান।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় পূজামণ্ডপের বাহিরে গণতন্ত্র ছুটিবে, ব্যাপার তত সরল নহে। উসখুস শুরু হইয়াছে: মহানগরীর বড় বড় পূজাগুলি ইহারই মধ্যে ভিআইপি কার্ড ছাপাইয়া ফেলিয়াছে, তাহাদের কী হইবে? পূজার বিপুল খরচের অনেকাংশই বহন করেন বহু পৃষ্ঠপোষক। তাঁহাদের ভিআইপি কার্ড না দিলে মান যায়, ভবিষ্যতে আর্থিক সাহায্যেও কোপ পড়িতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ যাহা— কলিকাতার বহু পূজামণ্ডপই তৈরি হয় রাজপথ বা পাড়ার রাস্তার সিংহভাগ দখল করিয়া। ইতিমধ্যেই কলিকাতার অগণিত রাস্তা ও গলিপথ অবরুদ্ধ করিয়া পূজামণ্ডপ মাথা তুলিতেছে। নিকটস্থ গৃহবাসীগণ প্রমাদ গনিতেছেন। যাতায়াতের পথ এক্ষণেই নিতান্ত অপরিসর, পূজার কয় দিন অবিরল জনস্রোতে তো তাঁহারা নিজভূমে পরবাসী— নিজ গৃহেই ঢুকিতে না ভিআইপি কার্ড দেখাইতে হয়। প্রতি বৎসর এই একই চিত্র। একই দুর্দশা। নাগরিক থেকে পূজা উদ্যোক্তা, সকলেই ইহা বিলক্ষণ জানেন। মুখ্যমন্ত্রীও ব্যতিক্রম নহেন। দুর্গাপূজার প্রস্তুতিসভায় তিনি বরং এই গোড়ার সমস্যাটি লইয়া কিছু বলিতে বা করিতে পারিতেন। প্রতিমাদর্শনে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অন্ত আছে, উৎসব-আবহে হয়তো মানিয়াও লওয়া যায়, কিন্তু পূজার আগে-পরে সাধারণ নাগরিকের দুর্ভোগের শেষ নাই।

পূজা উদ্যোক্তাগণ বলিতে পারেন, ভিআইপি কার্ডের ভালমন্দ তাঁহারাই বুঝিয়া লইবেন। দুর্গাপূজা বহু মানুষের সম্মিলনে অনুষ্ঠিত হইলেও ইহা কোনও সরকারি কর্মকাণ্ড নহে, ভিআইপি কার্ড বা অন্যান্য পরিকাঠামোগত বিষয় লইয়া সিদ্ধান্ত তাঁহাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে তাঁহারা ইহা বলিবেন কি না, বা বলিতে পারিবেন কি না, তাহা ভিন্ন কথা। চাহিলেও সব মুখ ফুটিয়া বলা যায় না। হরিশ মুখার্জি রোড ও তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা হয়তো নির্ভয়ে বলিবার সুযোগ পাইলে বলিতেন, নিরাপত্তার বজ্র-আঁটুনিতে তাঁহাদের দৈনন্দিন জীবন ওষ্ঠাগত। হয়তো পাড়ায় চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা নাই, কিন্তু আপনমনে রাস্তায় বেড়াইবার, ভাল লাগিলে পথপার্শ্বে দুই দণ্ড বসিবার উপায়ও নাই। ভিআইপি সহিবার এবং বহিবার বিড়ম্বনা তাঁহাদের অপেক্ষা ভাল আর কে-ই বা জানেন!

Mamata Banerjee Big Budget Puja VIP Card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy