Advertisement
E-Paper

দায়িত্ব

কথায় বলে, যে-কোনও অসুখের নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধের কাজটি অধিক কার্যকর। ডেঙ্গিও ব্যতিক্রম নহে।

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০০:২৫

নির্দেশ আছে, স্পষ্ট কর্মসূচি আছে, এমনকী নির্দেশ-কর্মসূচি না মানিলে পরিণাম কী হইতে পারে, তাহার বিস্তর উদাহরণও আছে। এতৎসত্ত্বেও পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং স্বাস্থ্য দফতরের টনক নড়ে না। ডেঙ্গি দমনের টনক। প্রতি বৎসরই বর্ষার পর হইতে মশাবাহিত রোগটির উপদ্রব অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, কোনও কোনও স্থানে তাহা মহামারির আকার লয়, প্রাণহানি ঘটায়। অথচ, প্রশাসনিক উদ্যোগ তেমন চোখে পড়ে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে ভাব দেখিলে বোধ হয়, মশাবাহিত রোগটির প্রাদুর্ভাব হইতে নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্বই যেন মশা এবং সাধারণ মানুষের। প্রশাসনের কোনও দায়িত্বই নাই। কিন্তু তাহা যে সত্য নহে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই তাহা স্পষ্ট। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলিয়াছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রশাসনেরও দায়িত্ব আছে। প্রসঙ্গত, কিছু দিন পূর্বেই তিনি গত বৎসর ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পঞ্চায়েতগুলির ব্যর্থতা লইয়াও সরব হইয়াছিলেন। বস্তুত, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতকে কী কাজ করিতে হইবে, কোন সময় হইতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে, তাহার স্পষ্ট নির্দেশ নবান্ন-র আছে। কিন্তু নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হয় না। এই বৎসরও যেমন দুইটি মাস অতিক্রান্ত হইলেও মাঝে-মাঝে ব্লিচিং ছড়ানো ব্যতীত কোনও উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নজরে আসে নাই।

অথচ পুর-প্রশাসন তৎপর হইলে যে সত্যই ফল মিলিতে পারে, তাহার নজিরও আছে। ২০১৬ সালে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি ‘মহামারি’র আকার লইয়াছিল। প্রচুর মানুষ অন্যত্র চলিয়া যান, প্রাণহানিও ঘটে। কিন্তু গত বৎসর ডেঙ্গি অন্যত্র থাবা বসাইলেও শ্রীরামপুরে তেমন আঁচড় কাটিতে পারে নাই। অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষা লইয়া স্থানীয় প্রশাসন গোড়া হইতেই কার্যকর পদক্ষেপ করিবার ফলে সর্বত্র ডেঙ্গিত্রাসের মধ্যেও শ্রীরামপুর একটি দ্বীপের মতো নিজেকে বাঁচাইতে সক্ষম হয়। অন্য উদাহরণটি দক্ষিণ দমদমের। ডেঙ্গি মরশুমের শুরুতে রোগাক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা যে-রূপ উত্তরোত্তর বাড়িতেছিল, পরবর্তী কালে তাহা অনেকটাই আটকানো সম্ভব হয় শুধুমাত্র নিয়মিত নজরদারি এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু সমস্যা হইল, অধিকাংশ সময় এই সামান্য উদ্যোগটুকুও লইতে দেখা যায় না। ফলে, রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অসম্ভব হইয়া পড়ে।

কথায় বলে, যে-কোনও অসুখের নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধের কাজটি অধিক কার্যকর। ডেঙ্গিও ব্যতিক্রম নহে। বস্তুত, নিয়মিত মশা-দমন কর্মসূচি, আবর্জনা পরিষ্কার, জল জমিতে না দেওয়া, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ, রাস্তার খাবারে নজরদারি এবং সচেতনতার প্রসার— এই কাজগুলি যদি প্রত্যেক স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের প্রাত্যহিক কাজের অন্তর্ভুক্ত করিয়া লয়, তাহা হইলে শুধুমাত্র ডেঙ্গি নহে, অনেক রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইহাই নাগরিকদের প্রতি প্রশাসনের দায়িত্ব। এই দায়িত্বটুকু পালন করিবার জন্য ঋতু অনুযায়ী প্রস্তুতি লওয়া, আলাদা করিয়া অর্থ বরাদ্দ করা বা রোগ ছড়াইলে প্রতিপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করিবার কোনও প্রয়োজন নাই। মারি লইয়া যাহাদের নিয়মিত ঘর করিতে হয়, প্রশাসনের তরফে এইটুকু দায়িত্ব পালনের আশা তো তাহারা করিতেই পারেন।

Dengue disease Prevention
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy