বর্হিবিশ্বে তাঁর পরিচিতি আর ডি ব্যানার্জী নামে। আমাদের কাছে তিনি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারক। ভাবতে ভাল লাগে, নবাবের এই জেলা তাঁরও জেলা। এই জেলাতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। শুধু কি তাই? ইতিহাসের প্রতি প্রাথমিক ভালবাসা তৈরিও এখানেই। তাঁর জন্মভূমি বহরমপুরের চারপাশে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস। এই ইতিহাসের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে শৈশবেই রাখালদাস বুঝে গিয়েছিলেন ইতিহাসের চিহ্নগুলো ছুঁয়ে দেখাতেই তাঁর আনন্দ। সুতরাং লক্ষ্য স্থির হতে দেরি হয়নি। ইতিহাসকে আশ্রয় করেই তিনি চাইলেন এগিয়ে যেতে। হাতের নাগালে রামদাস সেন, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, পূর্ণচন্দ্র নাহারের মতো এমন কিছু মানুষ ছিলেন যাঁদের দেখে এই কাজে তিনি লাভ করলেন প্রেরণা। ইতিহাস হয়ে উঠল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তার পরে এক দিন নিজেই গড়ে ফেললেন ইতিহাস।
ভাবতে ভাল লাগে, বিশ্বখ্যাত এই মানুষটি কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯০০ সালে এনট্রান্স পাশ করা পর্যন্ত এই শহরের রাস্তা ধরেই হেঁটেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডা দিয়েছেন এই শহরেরই নানা জায়গায়। তা ছাড়া যে নবাবসুলভ চালচলন এবং বেপরোয়া স্বভাব তাঁকে বিশিষ্টতা দিয়েছে, সমস্যাতেও ফেলেছে বারবার তার মূলটা তো এই জেলার আবহাওয়াতেই গড়া।
১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ১৯৩০ সালের ২৩ মে— রাখালদাসের মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবন। কর্মময় বলতে যা বোঝায়, তাই। বাবা মতিলাল ছিলেন বহরমপুর কোর্টের সফল আইনজীবী। ফলে পরিবারে অর্থের অভাব ছিল না। এ দিকে রাখালদাস মতিলালের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কালিমতীর আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র জীবিত সন্তান। ফলে আদরের আধিক্যও ছিল তাঁকে ঘিরে। এনট্রান্স পাস করার আগেই রাখালদাসের বিয়ে হয়ে গেল উত্তরপাড়ার জমিদার নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা কাঞ্চনমালার (যিনি পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে লেখিকা হিসাবে পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ করেন) সঙ্গে। পড়াশোনা অবশ্য এর জন্য বিঘ্নিত হল না। এনট্রান্স পাশ করেই রাখালদাস উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি দিলেন কলকাতায়। ১৯০৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পাশ করলেন। যদিও এই বছর বাবা মতিলাল পরলোকগমন করায় এবং পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর পড়াশোনায় সাময়িক ছেদ পড়ল। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে আবার পড়াশোনায় ফিরে এলেন অচিরেই। ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বিএ, ১৯১০ সালে ইতিহাস নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করলেন।