Advertisement
E-Paper

রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ আর বাড়াবেন না দোহাই

রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক এত নিবিড় হবে কেন? নেতা কবে মন্দিরে গেলেন বা তীর্থ করতে গেলেন, তা নিয়ে রাজনীতির খুব বেশি আগ্রহ থাকবে কেন? অন্য যে কোনও ব্যক্তির মতো মন্দির, মসজিদ, গির্জায় যাওয়া রাজনৈতিক নেতারও ব্যক্তিগত অধিকার।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
 রাহুল গাঁধীর কৈলাসযাত্রা। ছবি: কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া।

রাহুল গাঁধীর কৈলাসযাত্রা। ছবি: কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া।

ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস এতটা প্রত্যক্ষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে রাজনীতিতে, তা বোধহয় আগে কেউ ভাবতে পারেননি। ধর্মীয় বিশ্বাস যে কোনও ব্যক্তির নিতান্ত ব্যক্তিগত পরিসরের বিষয়। কিন্তু আজকের ভারতে নেতার ধর্মীয় বিশ্বাস স্পষ্ট করে সর্বসমক্ষে তুলে ধরা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্ভবত।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর কৈলাস সফর নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে। রাহুল কৈলাসে গেলেন, না কি যাননি, তা নিয়েই কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই তরজার সুযোগ কিন্তু বিজেপির হাতে তুলে দিয়েছে কংগ্রেসই।

মন্দিরে মন্দিরে ঘোরা একটা সময়ে শুধু বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল ছিল। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসও সেই রাজনীতিতে ভাগ বসাতে চেয়েছে। গুজরাত থেকে কর্নাটক, একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারাভিযান রাহুল গাঁধী শুরু করেছেন মন্দির থেকে। প্রচারের ফাঁকেও বিভিন্ন মন্দিরে হাজির হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাহুল গাঁধী কবে কোন মন্দিরে সফর করছেন সে ছবি কংগ্রেসের তরফে নিয়মিত তুলেও ধরা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

রাহুল গাঁধী তীর্থ করতে কৈলাস মানস সরোবর যাচ্ছেন— এ কথা আগেই জানা গিয়েছিল। পরে কংগ্রেসের তরফে রাহুলের কৈলাস যাত্রার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। তেমনই একটি ছবি নিয়ে তুলকালাম শুরু করে দেয় বিজেপি। ছবিটিতে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে রাহুল গাঁধীকে। কিন্তু লাঠিটির কোনও ছায়া পড়তে দেখা যায়নি। এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। কংগ্রেস ভুয়ো ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছে, রাহুল গাঁধী আসলে পায়ে হেঁটে মানস সরোবর যাননি— বিজেপির তরফে এমন কথা বলা শুরু হয়।

রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক এত নিবিড় হবে কেন? নেতা কবে মন্দিরে গেলেন বা তীর্থ করতে গেলেন, তা নিয়ে রাজনীতির খুব বেশি আগ্রহ থাকবে কেন? অন্য যে কোনও ব্যক্তির মতো মন্দির, মসজিদ, গির্জায় যাওয়া রাজনৈতিক নেতারও ব্যক্তিগত অধিকার। তিনি কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেন না, তা তিনি নিজেই স্থির করবেন। এ নিয়ে অন্য কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। বর্তমান ভারতে উল্টোটাই যেন ঘটছে। নেতা মন্দিরে গেলেন কি না, রাজনীতির আঙিনায় তা যেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কট্টরবাদীরা এই রাজনীতিই চায়। কিন্তু সেই ফাঁদে অন্য কোনও দলের পা দেওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন: রাহুলের কৈলাস সফরে চাপ বাড়ছে বিজেপির

রাহুল গাঁধী কৈলাস মানস সরোবর গেলেন, সে অত্যন্ত ভাল কথা। কিন্তু রাহুল গাঁধীর কৈলাস যাত্রার ছবি কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে প্রকাশ করার কী প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েই বিতর্ক উঠে গিয়েছে অতএব। আর কংগ্রেস যদি দলের সভাপতির কৈলাস যাত্রার ছবি প্রকাশ করেও থাকে, তা নিয়ে বিজেপির আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ার কী থাকতে পারে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। রাজনীতির অভিমুখটাকে খুব সঙ্কীর্ণ কোনও দিশায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না তো? প্রশ্নটা ওঠা উচিত তা নিয়েই।

পশ্চিমী দেশগুলির রাজনীতি কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিপক্কতা এবং পরিমিতি বোধের পরিচয় দেয়। নেতার ব্যক্তিগত জীবন বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে সচরাচর রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো হয় না ওই সব দেশে। কিন্তু আমাদের দেশে ইদানীং উল্টোটা হচ্ছে। রাজনীতির জন্য এ মোটেই খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়। পশ্চিমেও নিয়ম ভাঙার খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে রাজনীতির চেহারাটা অনেকখানি বদলে দিয়েছেন। তবু ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টাটা পশ্চিমে এখনও বেশ সচেতন ভাবেই বিদ্যমান। ভারতের উচিত সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণের চেষ্টা করা।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Rahul Gandhi Congress Kailash Mansarovar Yatra BJP অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় রাহুল গাঁধী মানস সরোবর কৈলাসযাত্রা কংগ্রেস বিজেপি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy