Advertisement
E-Paper

অস্থির সংশয়ের পৃথিবীকে লিখনরীতিতে তুলে আনলেন কৃষ্ণপ্রিয়

প্রায় একশো পঁয়ষট্টি বছর আগে এ শহরের প্রথম ফুটপাত তৈরির পরিকল্পনা। পরিকল্পনা করেছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির কনজারভেন্সি অফিসার উইলিয়ম ক্লার্ক।

আশিস পাঠক

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ১৫:৩৩
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে। বহুচর্চিত শাক্ত পঙ‌্ক্তিটি একটা বই পড়ার শেষে বদলে গেল মনে মনেই, ফুটপাত বদলে যায় মধ্যরাতে। মধ্যরাতে কথাটা আক্ষরিক অর্থে না নেওয়াই ভাল। মধ্যরাত মানে আমাদের নিশ্চিন্ত নিদ্রার সময়। আর তখনই এক পরিবর্তিত জীবনের ছবি জেগে উঠতে থাকে চেনা কলকাতার অচেনা ফুটপাতে।

সেই অচেনাকে ভয় করেননি কৃষ্ণপ্রিয়, কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত। সেই কবে, প্রায় পঁচিশ বছর আগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর এই প্রথম বইটি, চেনা কলকাতার অচেনা ফুটপাথ। অচেনাকে চেনার জন্য ফুটপাত-জীবনের রীতিমতো গভীরে ঢুকেছেন এ বইয়ের লেখক। ইতিহাস ঘেঁটে তুলে এনেছেন কলকাতার ফুটপাত তৈরির বৃত্তান্ত।

প্রায় একশো পঁয়ষট্টি বছর আগে এ শহরের প্রথম ফুটপাত তৈরির পরিকল্পনা। পরিকল্পনা করেছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির কনজারভেন্সি অফিসার উইলিয়ম ক্লার্ক। পুরসভার ওল্ডারম্যানদের তিনি বুঝিয়েছিলেন, জমা জল থেকে মশা ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ ছড়ানো আটকাতে রাস্তার পাশের নর্দমাগুলোকে পাকা করা হলেও সেই উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হবে যদি না কংক্রিট দিয়ে সেগুলোকে ঢাকা দেওয়া হয়। আর পথচারীরা সেই ঢাকা দেওয়া নর্দমার উপর দিয়ে দিব্যি হাঁটতে পারবেন। সেটাই হবে ফুটপাত।

আরও পড়ুন: আমপান, করোনা, সব সঙ্কট থেকেই কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে

সে প্রস্তাবের জোরদার বিরোধিতা হয়েছিল। বিরোধের যুক্তি যা ছিল তা তার পরে প্রায় পৌনে দুশো বছর সত্য থেকে গিয়েছে। পুরসভার কর্তারা বলেছিলেন ওতে লাভ হবে না কিছুই, নেটিভরা রাস্তার মাঝখান দিয়েই হাঁটতে ভালবাসে। আর মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স তীব্র প্রতিবাদ করেছিল এই বলে যে, তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে সেই সব দোকানেরই ব্যবসা বেশি যেখানে খদ্দেররা গাড়ি থেকে নেমেই সোজা দোকানের সিঁড়িতে পা ফেলতে পারেন। ফুটপাত দিয়ে দোকানের পথ আগলালে ব্যবসা লাটে উঠবে।

এ ভাবে শুরু থেকেই ফুটপাত কল্লোলিনীর ইতিহাসে এক জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছে। সেই চরিত্রের সন্ধানে সাংবাদিক জীবনের একটা বড় অংশ দিয়েছেন কৃষ্ণপ্রিয়, বন্ধুদের ভালবাসার নামে যিনি ‘কেয়ার অব ফুটপাত’। মোট ছ’টা ভাগে ভাগ করা এ বইয়ে গোটা চব্বিশেক লেখা, পরিশিষ্ট আর সংযোজন মিলিয়ে। ভিখিরিদের হোটেল, ছেলেধরা আমজাদ, ডাকাত রণজিৎ সিং… এমন সব শিরোনামের লেখায় প্রথাগত গবেষণা থেকে জরা হঠকে এক মরমী কলম বিচিত্র সব ফসল ফলিয়েছে। সঙ্গে বেশ কিছু আলোক আর রেখাচিত্র। সব মিলিয়ে এ বই আর সংস্করণ মাত্র নেই, হয়ে উঠেছে একটা পুরোদস্তুর নতুন বই।

আমি আর আমার বেঁচে থাকা অবশ্য একেবারেই নতুন বই কৃষ্ণপ্রিয়ের। এ বইয়ে তাঁর আমি লেখায় তো বটেই, লেখা সাজানো, এমনকি বই তৈরির ধরনেও তাঁরই। গল্প, মুক্ত গদ্য, প্রবন্ধ, নিবন্ধ এমন কোনও ছকে বাঁধা আঙ্গিক নেই এ বইয়ে সংকলিত লেখাগুলোর। তবে প্রত্যেকটারই শিরোনাম আছে। বইটা পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে মনে হয়, সেটাও না থাকলে হত। এ আসলে লেখকের ফিনকি দিয়ে বেরনো ভাবনা, যেমন জমছে তেমনই বেরিয়ে পড়ছে। একটা লাইন লেখার পরে পরেরটা আপনিই হাজির হচ্ছে। এমন নিরোধহীন ভাবনাধারায় আবার শিরোনামের টুপি পরানোর মানেই হয় না। একটু তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না…

আরও পড়ুন: করোনার কোপে মালিক-ভাড়াটে, ভাড়ার কী হবে!

‘শঙ্করদা চিন্তিত। শঙ্করদা বিহ্বল।… ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ ‘‘ও শঙ্করদা কিছু কর না গো।’’ শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে দেখা যাক। শঙ্করদা কী করে ‘‘শঙ্করদা কী করবে? ওর কিছু করার ক্ষমতাই নেই।’’

পুনরাবৃত্তিটা এখানে সচেতন ভাবে করা। এ-ও আর এক রকম লিখনরীতি। অস্থির সংশয় এখন পৃথিবীর বুকে। সেই সংশয়েরই ঠেলা এই লিখনরীতিতে। সেই ঠেলাই হয়তো জন্ম দেবে বাংলা গদ্যে আর এক রকম অসম্ভবের ছন্দকে!

চেনা কলকাতার অচেনা ফুটপাথ। ৭৫০.০০।

আমি আর আমার বেঁচে থাকা। ৬৫০.০০।

(দুটিরই লেখক কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত, প্রকাশক ঋতবাক।)

Books Book Review Krishnapriya Dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy