Advertisement
E-Paper

কাঁচি ও কমেডি

ভারতীয় সেন্সর বোর্ড পুনরায় তাহার প্রিয় খেলাটি খেলিতে শুরু করিয়াছে। তাহা হইল, অবান্তর আপত্তি তুলিয়া তর্ক তৈয়ারি। জেমস বন্ড-এর সাম্প্রতিক ছবি ‘স্পেক্টর’-এ, দুইটি চুম্বনের পঞ্চাশ শতাংশ তাহারা কাটিয়া দিয়াছে, অর্থাৎ, চুম্বনদৃশ্য রহিয়াছে, কিন্তু তাহার সময় কমিয়াছে। ম্লেচ্ছ শিল্পের এই প্রবৃত্তি-উপাসনাকে চিরকালই ভারতীয় সেন্সর অপছন্দ করিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৯

ভারতীয় সেন্সর বোর্ড পুনরায় তাহার প্রিয় খেলাটি খেলিতে শুরু করিয়াছে। তাহা হইল, অবান্তর আপত্তি তুলিয়া তর্ক তৈয়ারি। জেমস বন্ড-এর সাম্প্রতিক ছবি ‘স্পেক্টর’-এ, দুইটি চুম্বনের পঞ্চাশ শতাংশ তাহারা কাটিয়া দিয়াছে, অর্থাৎ, চুম্বনদৃশ্য রহিয়াছে, কিন্তু তাহার সময় কমিয়াছে। ম্লেচ্ছ শিল্পের এই প্রবৃত্তি-উপাসনাকে চিরকালই ভারতীয় সেন্সর অপছন্দ করিয়াছে। সম্প্রতি ‘দম লগাকে হেইশা’ হিন্দি ছবিতে ‘লেসবিয়ান’ শব্দটিকেই নীরব করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। এই দেশে নৈতিক মোড়লের কমতি কোনও দিনই পড়ে নাই, পাড়ায়, পার্কে, সংসদে ও ক্ষমতা-গদিতে, যৌবনবিলাসের শত্রু গিজগিজ করিতেছে। ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণ যে যৌনতাবিরোধিতা, ইহা লইয়া সাধারণ মানুষেরও প্রায় সন্দেহ নাই। তবে এই বিশ্বায়নের কালে, যখন অবৈধ পর্নোগ্রাফিক দৃশ্যও আন্তর্জালের দৌলতে সকলেই ফোনে ল্যাপটপে আকাঙ্ক্ষা করিবার সেকেন্ডের ভগ্নাংশে দেখিতে পাইতেছে, তখন দেশকে চুম্বন হইতে রক্ষা করিবার এই জেহাদ পরিহাসের বস্তুতেই পর্যবসিত। কিন্তু মূল প্রশ্নটি প্রযুক্তির নহে, যুক্তির। ভারতীয় সেন্সর বোর্ড সম্ভবত বলিতে চাহে, চুম্বন বা ওই প্রকার সকল ঘনিষ্ঠতাই শিল্পে বাধ্যতামূলক ভাবে পরিহার্য, সতত অ-প্রাসঙ্গিক। এই মানসিকতাকেই আক্রমণ করিয়া টুইটারে গড়িয়া উঠিয়াছে প্যারডি-চরিত্র ‘সংস্কারি জেমস বন্ড’, যে ঘণ্টায় চল্লিশ কিমি-র অধিক গতিতে গাড়ি চালায় না, সুন্দরী দেখিলেই হস্তে রাখি বাঁধিয়া দেয়, মদ্যপান না করিয়া গোমূত্রের ককটেলে মনোনিবেশ করে।

বন্ড চরিত্রটি যে যে কারণে জনপ্রিয়, তাহার একটি হইল তাহার পরোয়াহীন যাপনপদ্ধতি, সে বেধড়ক বন্দুক চালায় আবার যে কোনও রূপসির সহিত সমান দ্রুতগতিতে শয্যালীলায় ব্যস্ত হইয়া পড়ে। শতাংশ মাপিয়া তাহার চুম্বন খর্ব করিবার অর্থ তাহার বর্ণময় চরিত্রধারাটিকেই ব্যাহত করা। ইহাও প্রশ্ন তোলা যাইতে পারে, যদি সেন্সর বোর্ড চুম্বনকে অপছন্দই করে, তাহা পুরাপুরি করিতে পারে না কেন। সম্পূর্ণ চুম্বন না কাটিয়া তাহার অর্ধেকটা কাটিবার মধ্যে আপত্তির তীব্রতার অভাবই প্রতিভাত হইল না কি? যে কোনও আবেগ, এমনকী গোঁড়া সংস্কারবদ্ধতাও, অর্ধপাচ্য হইলে, হাস্যকর হইয়া উঠে। হয়তো বিলাতে বক্তৃতায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ‘রুপি বন্ড’ হইতে জেমস বন্ডের প্রসঙ্গে চলিয়া গিয়াছিলেন বলিয়া, মোদীভক্ত সেন্সরপ্রধান অতটা রূঢ় হইতে পারেন নাই। তবে সত্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ভারতীয় সেন্সর কি সচেতন ভাবে এই মধ্যযুগীয় আপত্তিগুলিকে শিরোভূষণ করিতেছে? তাহারা কি গালাগালি, যৌনতা, চপেটাঘাতহীন এক কৃত্রিম, ফিনাইল-শুদ্ধ সমাজ দেখাইতে চাহিতেছে চলচ্চিত্রে, যাহা বাস্তবের ঘটনা ও প্রবণতার সহিত বিচ্ছিন্ন? ইহা তো সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করিয়া খুন-ধর্ষণ রুখিবার প্রয়াসের শামিল। তদুপরি, সেই জবরদস্তি-প্রতিফলন হইবে এক বিকৃত, আড়ষ্ট ও রসহীন চিত্রায়ন, সেখানে যৌনতার আনন্দকেও অস্বীকার করিয়া এক অ-মানবিক অপরাধ সংঘটিত হইবে। আধুনিক শিল্পধারণার তুলনায় তাহা পিছাইয়া থাকিবে কয়েক শত মাইল। তবে, এই দন কিহোতে-সুলভ কর্মসূচি লইয়া চুম্বনকাল কর্তিত করিবার উদ্দেশ্য সম্ভবত গুরুভার কিছু নহে। হয়তো ইহাই সেন্সর চাহিয়াছিল, এই সন্ত্রাসদীর্ণ বিশ্বে কিছু হাসাহাসি হউক। এই দেশের শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান তো কোনও অভিনেতা নহে, স্বয়ং সেন্সর বোর্ড!

row controversy censor board kissing scene bond movie spectre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy