Advertisement
E-Paper

অশুভ সঙ্কেত

ঋতুমতী হওয়ার বয়সে থাকা মহিলা আয়াপ্পার গর্ভগৃহে যেতে পারবেন না— এই নিয়মের অবলুপ্তি ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৬
ধর্নায় আয়াপ্পা স্বামীর ভক্তরা। ফাইল চিত্র।

ধর্নায় আয়াপ্পা স্বামীর ভক্তরা। ফাইল চিত্র।

এক দিকে শবরীমালা বিতর্ক, অন্য দিকে ছট পুজো— এই দুই ঘটনাক্রম দেশের দক্ষিণ প্রান্তের এবং পূর্ব প্রান্তের দু’টি রাজ্যকে এক বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়ে দিল। আদালতের রায়কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জনমোহিনী পথে এগোল দুই রাজ্যের ঘটনাপ্রবাহ। ফারাক শুধু একটাই— কেরলে সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেনি, বাংলায় সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়েই পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হল।

শবরীমালা বিতর্ক সম্পর্কে গোটা দেশ অবহিত এখন। অরণ্যাবৃত পাহাড়ের মাথায় আয়াপ্পা স্বামীর মন্দির। সে মন্দিরে দশ থেকে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত বয়সের মহিলাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। ঋতুমতী হওয়ার বয়সে থাকা মহিলা আয়াপ্পার গর্ভগৃহে যেতে পারবেন না— এই নিয়মের অবলুপ্তি ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত। সব বয়সের পুরুষের মতো সব বয়সের মহিলারাও যাতে ঢুকতে পারেন শবরীমালা মন্দিরে, কেরলের সরকারকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কেরল সরকার আদালতের নির্দেশ মানেনি, এমন নয়। শবরীমালা পৌঁছনোর পথে বিপুল পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। মন্দিরে পৌঁছতে ইচ্ছুক কোনও ভক্তকেই যাতে বাধা না দেওয়া হয়, প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয় সরকার। কিন্তু আয়াপ্পা ভক্তদের তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিরোধ, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দেশের শাসক দল বিজেপির প্রকাশ্য এবং উত্তুঙ্গ সওয়াল, কেরলের কংগ্রেস নেতৃত্বেরও প্রায় একই অবস্থান ইত্যাদি প্রশাসনকে ঘোর বিপাকে ফেলল। সুপ্রিম কোর্ট নিজের রায় ফের বিবেচনা করতে রাজি হল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: যে ভাবে হোক শবরীমালায় যাবই, খুনের হুমকি পেয়েও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই মহিলা

আরও পড়ুন: রায় যা-ই হোক, প্রথা তো মানতে হবে!

কেরলের এই ঘটনাপ্রবাহ সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে খুব শুভ, এমন নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যা হল, তা আরও দুর্ভাগ্যজনক! পরিবেশ আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর বিরুদ্ধে। সে নিষেধাজ্ঞার প্রতি প্রশাসন কতটা নিষ্ঠাবান, সম্ভবত তা প্রমাণের জন্যই ছট পুজোর দিন রবীন্দ্র সরোবরের গেটে পুলিশ দাঁড় করানো হল। কিন্তু তার পরে সেই পুলিশের সামনে দিয়েই দলে দলে লোক পৌঁছলো সরোবর তীরে, জলে মিশল ছট সামগ্রী, দেদার বাজি পুড়িয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে চলল সরোবর চত্বরের পরিবেশে বিষ মেশানোর পর্ব। পুলিশ কেন দাঁড় করানো হয়েছিল? পরিবেশ আদালতের রায় পালন করতে? নাকি সরোবরে ছট পুজোর আয়োজনকে নির্বিঘ্ন রাখতে? স্পষ্ট জবাব কে দিতে পারবেন, জানা নেই।

শবরীমালার ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম প্রায় নৈরাজ্য তৈরি করে আদালতের নির্দেশকে ব্যর্থ করার চেষ্টা| সে নৈরাজ্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না প্রশাসন।

ছট পুজোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের সঙ্গে পুণ্যার্থীদের কোনও সঙ্ঘাত দেখা গেল না। অসামান্য 'দক্ষতায়' সঙ্ঘাত এড়িয়ে যাওয়া হল। পরিবেশ আদালতের রায়কে প্রশাসন কার্যকর করার চেষ্টা করল, নাকি রায় বিফলে পাঠানোর পথ মসৃণ করল, তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় জাগল।

প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ বা ভূমিকা ঘিরে এতটা ধোঁয়াশা তৈরি হওয়া কাজের কথা নয়। কারও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বা সস্তায় লোকপ্রিয় হওয়ার জন্য প্রশাসন ধূর্তের মতো আচরণ করছে, এমন বার্তা পৌঁছনো মোটেই শুভ সঙ্কেত নয়।

Newsletter Sabarimala Temple Trupti Desai Protest শবরীমালা মন্দির ত্রুপ্তি দেসাই Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy