Advertisement
E-Paper

একই বৃন্তে

কলিকাতায় একটি সভায় প্রবীণ মনোবিজ্ঞানী আলেক্সান্দ্রিয়া বিলিংহার্স্ট বলিয়াছেন, ‘পূর্বরাগ’ পর্বে পুরুষ মেয়েটির প্রতি বিশেষ মনোযোগী থাকে। ক্রমে তাহার মনে যখন ‘জেলাসি’ বা ঈর্ষাবোধের উদয় হয়, তখন মনে করা হয় যে, এই বার বন্ধুত্বের গুটি ভাঙিয়া প্রেম বাহির হইল!

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০০:১৩

সকাল দেখিয়া দিন কেমন যাইবে তাহা অনেক সময়েই বোঝা যায় না। সূর্যকরোজ্জ্বল প্রভাত হইতে মেঘাচ্ছন্ন দ্বিপ্রহর— সুপরিচিত। তবে তাহার অধিক পরিচিত প্রেমের জোয়ারভাটা। আজ যাহাকে না দেখিলে এক মুহূর্তে কল্পান্তর মনে হয়, পাঁচ বছর পরে তাহার প্রতি প্রগাঢ় ঔদাসীন্য, এমনকী ভয়াল নিষ্ঠুরতা— কতই হইতেছে! নারী ও পুরুষ, দুই দিক হইতেই এমন পরিবর্তন সম্ভব, তবে বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহার শিকার যে নারী, তাহা দৈনিক সংবাদের ধারা হইতেই স্পষ্ট। কেন এমন ঘটে? এক কথায় উত্তর নাই। তবে মনোবিজ্ঞান নানা সূত্রের সন্ধান দিতে পারে। সম্প্রতি কলিকাতায় একটি সভায় প্রবীণ মনোবিজ্ঞানী আলেক্সান্দ্রিয়া বিলিংহার্স্ট বলিয়াছেন, ‘পূর্বরাগ’ পর্বে পুরুষ মেয়েটির প্রতি বিশেষ মনোযোগী থাকে। ক্রমে তাহার মনে যখন ‘জেলাসি’ বা ঈর্ষাবোধের উদয় হয়, তখন মনে করা হয় যে, এই বার বন্ধুত্বের গুটি ভাঙিয়া প্রেম বাহির হইল! এই ঈর্ষাবোধই প্রেমের অমোঘ শর্ত বলিয়া দশচক্রে স্বীকৃত। মনোবিজ্ঞানী বলিতেছেন, ওই বোধটির মূলে রহিয়াছে নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা। পুরুষ তাহার দয়িতাকে নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহে, সেই কারণেই তাহাকে লইয়া সহজে ঈর্ষান্বিত হয়। অর্থাৎ যাহাকে প্রেমের প্রমাণ মনে করা হয়, তাহা দখলদারির অভিজ্ঞান।

এই সূত্রটি অনুসরণ করিলে পুরুষের আচরণে আকাশপাতাল পরিবর্তনের চরিত্র বুঝিতে সুবিধা হইতে পারে, অন্তত বহু ক্ষেত্রেই। প্রথম পর্বে যে মনোযোগ, তাহাকে মেয়েটির মন জয় করিবার পরিকল্পিত কৌশল ভাবিবার প্রয়োজন নাই, অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই তাহা হয়তো আন্তরিক। কিন্তু সেই মনোযোগেও নিহিত থাকে নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা। কী রাজনীতিতে, কী প্রেমপথে— সেই আকাঙ্ক্ষা চরিত্রে ভয়ানক। যতক্ষণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত, ততক্ষণ মানুষ নিশ্চিন্ত। নিশ্চিন্ত যে, অপর মানুষটির সমগ্র সত্তা তাহার দখলে আছে। সেই নিশ্চিতিতে যখনই ব্যাঘাত ঘটে, তখনই বিপদ। পুরুষ চাহে, মেয়েটি তাহার প্রতি এবং একমাত্র তাহারই প্রতি নিবেদিত থাকুক। হয়তো ইহাতে তাহার আপন নিরাপত্তাহীনতা কিছুটা দূর হয়। অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া সে নিজেকে শক্তিশালী মনে করে, নিজের আত্মবিশ্বাস রক্ষণাবেক্ষণ করিতে পারে। সেই অধিকারবোধে আঘাত লাগিলে আসে প্রত্যাঘাত। অনেক সময়েই তাহা ভয়ানক।

তর্ক উঠিবে, অধিকারবোধ তো প্রেমেরই প্রকাশ, দয়িতাকে আপন করিয়া পাইবার আকাঙ্ক্ষামাত্র। উহাকে নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা দেওয়া বাড়াবাড়ি, অন্যায়। প্রেমের প্রাথমিক উন্মাদনার পর যাহা দুইটি মানুষকে পরস্পরের সহিত সম্পৃক্ত রাখে, তাহার মধ্যে অধিকারবোধ অন্যতম প্রধান। হয়তো সত্য। কিন্তু সম্পৃক্ত হওয়া মানে একে অপরকে পরিপূর্ণ করা, কুক্ষিগত করা মানে একে অপরকে গ্রাস করা। সত্যকারের সম্পৃক্ত থাকিতে হইলে অপরের স্বাধীন সত্তাটিকে যথার্থ স্বীকৃতি দিতে হয়। কিন্তু এই স্বীকৃতি দাবি করে অপরের প্রতি সহিষ্ণু মনোযোগ। তাহার অভাব ঘটিলে পড়িয়া থাকে ক্ষমতান্ধ অধিকারবোধ। সেই অধিকারবোধ বিপন্ন হইলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও ভয়ানক নিষ্ঠুরতায় প্রকাশ পায়। তাহা স্বাভাবিক— যাহাকে অনেক সময় ভালবাসা বলিয়া ভুল হয়, তাহার উৎস এবং নিষ্ঠুরতার উৎস একই।

Affection Love Jealousy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy