Advertisement
E-Paper

কলকাতায় বেনজির, প্রশাসনের পক্ষেও গৌরবজনক নয়

প্রথমে তাপস পাল। এ বার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পর পর গ্রেফতার দুই তৃণমূল সাংসদ। এই গ্রেফতারি আইন মোতাবেক গৃহীত কোনও পদক্ষেপ, নাকি রাজনীতির প্যাঁচ, সে নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২১
বিজেপি রাজ্য দফতরে টিএমসিপি বিক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি রাজ্য দফতরে টিএমসিপি বিক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র।

প্রথমে তাপস পাল। এ বার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পর পর গ্রেফতার দুই তৃণমূল সাংসদ। এই গ্রেফতারি আইন মোতাবেক গৃহীত কোনও পদক্ষেপ, নাকি রাজনীতির প্যাঁচ, সে নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন, নোটবন্দির প্রতিবাদ করায় তৃণমূলকে বন্দি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্নও তুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা প্রশাসনিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ এবং বিজেপি তথা কেন্দ্রের তরফে উচ্চারিত আদ্যন্ত স্বচ্ছতার দাবির মধ্যে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, সে নিয়ে বিতর্ক এখন বিস্তর, বিতর্ক চলবেও। সে বিতর্কে যদি নাও যাই, তা হলেও স্বীকার করতেই হবে, তাপস পাল বা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিটা এমন একটা সময়ে এসে হল, যখন জনমানসেও সে নিয়ে কিছুটা সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে।

বেশ কয়েক বছর আগেই সামনে এসেছে রোজভ্যালি কাণ্ড। দীর্ঘ দিন তদন্তকারীরা স্তিমিত ছিলেন। এত দিন পর হঠাৎ নড়াচড়া শুরু হল, পর পর গ্রেফতারি শুরু হল। জাতীয় রাজনীতিতে যে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত, সেই সমীকরণের ভাঙা-গড়া নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনও সুপ্ত প্রয়াস যেন দৃশ্যমান এই গ্রেফতারির পটভূমিকায়। সত্যিই কি কোনও সংশয়ের অবকাশ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় সিবিআই-এর তো রয়েছেই, বিজেপি-রও রয়েছে। স্বচ্ছতা এবং ঋজুতার যে অঙ্গীকার কেন্দ্রীয় সরকারের কণ্ঠ থেকে বার বার উৎসারিত হয়, সে অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থেই খুব স্পষ্ট ব্যাখ্যায় সংশয়ের নিরসন ঘটিয়ে দেওয়া জরুরি। কেন্দ্র বা বিজেপি সংশয়ের নিরসন ঘটাতে পারবে কি না, সে উত্তর অচিরেই মিলবে। কিন্তু তার আগে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি উত্তর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেই হচ্ছে।

শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের গ্রেফতারি এ রাজ্যে বা এ দেশে প্রথম নয়, বিরলও নয়। উত্তর কলকাতার সাংসদের গ্রেফতারিতে ক্ষোভের সঞ্চার কোনও মহলে হয়ে থাকতেই পারে, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদর দফতরের দরজায় পৌঁছে যাবেন বিক্ষোভকারীরা, এমনটা কাম্য নয় কোনও পরিস্থিতিতেই।

একটি রাজনৈতিক দলের সদর দফতরের কাছে অন্য রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ এবং তার পর দু’পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ, লাঠি-বাঁশ-ইট নিয়ে পরস্পরের দিকে তেড়ে যাওয়া, শহরের রাজপথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়া— এমন ঘটনার নজির কলকাতার ইতিহাসে নেই। ইন্দিরা গাঁধী, জয়ললিতা, করুণানিধি, লালু প্রসাদ, শিবু সোরেনের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারির সাক্ষীও হয়েছে ভারত। তার জেরে ক্ষোভের আগুনও জ্বলেছে। কিন্তু প্রতিস্পর্ধী রাজনীতির সদর দফতর ক্ষোভ প্রকাশের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে, এমনটা সে ভাবে দেখা যায়নি।

এ কথা ঠিক যে জনরোষের স্ফূরণ সব সময় হিসেব কষে ঘটে না, নীতি-নৈতিকতার সুক্ষ্ম বাছবিচার মেনে চলে না। সুতরাং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির জেরে ক্ষোভের আঁচ বিজেপি দফতরের দরজায় পৌঁছে যাওয়া নিদারুণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আকস্মিক সেই স্ফূরণকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যে উপযুক্ত ভূমিকাটা থাকা জরুরি ছিল, তার অভাব স্পষ্ট ভাবেই দেখা গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলা, পথঘাট অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া, স্থানীয় নাগরিকদের সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার যে সব ছবি উঠে এল, তা প্রশাসনের পক্ষে বড় গৌরবজনক নয়।

কলকাতার পুলিশ-প্রশাসন যদি সঠিক ভূমিকা পালন করত সময়মতো, তা হলে কলকাতাকে এমন নজিরবিহীন অশান্তির সাক্ষী হতে হত না, লজ্জিত হতে হত না। ভবিষ্যতে কখনও পুলিশ-প্রশাসন এ হেন লজ্জার অংশীদার হবে না, মহানগরকেও এমন নজিরের সম্মুখীন হতে দেবে না, সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপটা হওয়া উচিত এ বার।

Anjan Bandyopadhyay NewsLetter TMC Rose valley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy