Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজয়িনী

শিবাঙ্গীর পদটি নৌবাহিনীতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিমান লইয়া জলপথে নজরদারির দায়িত্ব তাঁহার উপর। প্রয়োজনে আহতদের উদ্ধার করিবার কাজটিও করিবেন তিনি। সুতরাং, ‘মেয়ে বলিয়া’ তাঁহাকে কম গুরুত্বের কাজ দিয়া পার্শ্বে সরাইয়া রাখা হয় নাই।

স্বপ্নপূরণ: প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নৌসেনায় যোগ দিলেন বিহারের তরুণী শিবাঙ্গী স্বরূপ।

স্বপ্নপূরণ: প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নৌসেনায় যোগ দিলেন বিহারের তরুণী শিবাঙ্গী স্বরূপ।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

অভিনন্দন শিবাঙ্গী স্বরূপ। অভিনন্দন শুধুমাত্র নৌবাহিনীতে প্রথম মহিলা পাইলট হিসাবে তাঁহার যোগদানের জন্য নহে। ভারতীয় কন্যাদের ঘিরিয়া একের পর এক দুঃসংবাদের যে কৃষ্ণমেঘ গত কয়েক দিন যাবৎ পাক খাইতেছে, শিবাঙ্গীর সংবাদটি তাহার মাঝে খানিক স্বস্তির, খানিক আনন্দের ছোঁয়া আনিয়াছে। আরও এক বার জানাইয়াছে, এই দেশের মেয়েরা শুধুই অত্যাচারিত হইয়া সংবাদে উঠিয়া আসেন না, নিজ কৃতিত্বের জোরেও তাঁহারা সংবাদ শিরোনামে স্থান করিয়া লন। ইতিপূর্বে ভারতীয় মেয়েরা বহু বার সেই কৃতিত্বের পরিচয় রাখিয়াছেন। কিন্তু মেয়েদের উপর ঘটিয়া চলা সাম্প্রতিক নারকীয় ঘটনাগুলি সুমধুর স্মৃতিগুলিকে যেন কিছু সময়ের জন্য বিস্মৃত করিয়া দিয়াছিল। অতীতের সেই গৌরবগাথা পুনরায় স্মরণ করাইয়া দিল শিবাঙ্গীর সাফল্য।

শিবাঙ্গীর পদটি নৌবাহিনীতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিমান লইয়া জলপথে নজরদারির দায়িত্ব তাঁহার উপর। প্রয়োজনে আহতদের উদ্ধার করিবার কাজটিও করিবেন তিনি। সুতরাং, ‘মেয়ে বলিয়া’ তাঁহাকে কম গুরুত্বের কাজ দিয়া পার্শ্বে সরাইয়া রাখা হয় নাই। দেশসুরক্ষার গুরুদায়িত্বটি তাঁহার হস্তে অর্পিত হইয়াছে। গর্বের বিষয়। গর্ব এই কারণে যে, দেশের অন্য কর্মক্ষেত্রগুলিতে মেয়েদের উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়িলেও, সার্বিক ভাবে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীতে মেয়েদের যোগদানের হার এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। নৌবাহিনীতে মেয়েদের যোগদানের হার শতকরা ছয় শতাংশেরও কম। ১৯৯২ সালের পূর্বে শুধুমাত্র চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবে মেয়েদের নৌবাহিনীতে লওয়া হত। ১৯৯২ সালের পর সেই সুযোগ কিছুটা সম্প্রসারিত হয়। এবং নৌবাহিনীর বিশেষ কিছু শাখা মেয়েদের যোগ দিবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতদসত্ত্বেও শিবাঙ্গীর পূর্বে নৌবাহিনী কোনও মহিলা পাইলট পায় নাই। এবং তাৎপর্যপূর্ণ হইল, এখনও পর্যন্ত কোনও মহিলা সরাসরি নৌবাহিনীর জাহাজগুলিতে কাজ করিবার সুযোগও পান নাই। এই ক্ষেত্রে নৌসেনার যুক্তি, তাঁহাদের জাহাজগুলিতে এমন ব্যবস্থা নাই, যাহাতে মেয়েরা সরাসরি জাহাজ হইতে বিমান উড়াইতে পারেন। শিবাঙ্গী যে বিমানটি চালাইবেন, সেটিও উপকূল হইতে উঠা-নামায় সক্ষম, জাহাজ হইতে নহে। স্পষ্টতই, ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও মেয়েদের কাজ করিবার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করিতে পারে নাই।

সুতরাং শিবাঙ্গীর কাজটি সহজ ছিল না। সহজ ছিল না ভাবনা কান্তের কাজটিও। গত মে মাসে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসাবে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভাবনা যোগ দিয়াছেন। নৌসেনায় পাইলট হিসাবে যোগ দিবার অপেক্ষায় আছেন আরও দুই মহিলা। সেনাবাহিনীও মহিলা সহকর্মীর প্রতি দীর্ঘ দিনের আড়ষ্টতা কাটাইয়া উঠিবার প্রস্তুতি লইতেছে। কিছু কাল পূর্বেও যাহাকে মনে করা হইত, শুধুমাত্র পুরুষদেরই অনায়াস বিচরণক্ষেত্র, সেই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রগুলিতেও পদচিহ্ন আঁকিতেছেন ভারতের মেয়েরা। প্রমাণ করিতেছেন, তাঁহাদের জীবন শুধুই পুরুষদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করিবার জন্য নহে, রান্নাঘরেও সেই জীবন আবদ্ধ নহে। তাঁহাদের বিচরণের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত। রান্নাঘর-তুলসীমঞ্চের সীমানা ছাড়াইয়া বিমানের ককপিট পর্যন্ত। লিঙ্গবৈষম্যে জর্জরিত এক দেশের কাছে এই প্রমাণটুকুও তো পরম প্রাপ্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shivangi Swaroop Indian Navy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE