Advertisement
E-Paper

মিথ্যা স্বর্গ, মিথ্যা ধর্ম

কলিকাতা পুলিশ এক ব্যক্তিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ভিডিয়ো চিত্র প্রচারের দায়ে গ্রেফতার করিয়াছে। যে পরিস্থিতিতে যে চিত্রটি যে ভাবে প্রচারিত হইয়াছে, তাহাকে বিপজ্জনক বলিলে কম বলা হয়।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষমতাবান। সাধারণ ক্ষমতা নহে, অসাধারণ ক্ষমতা। সমস্যা হইল, সোশ্যাল মিডিয়া অবাধ। অনিয়ন্ত্রিত। অনিয়ন্ত্রিত ও অবাধ বলিয়াই তাহার এমন ক্ষমতা। কিন্তু তাহা সমস্যা কেন হইবে? বন্ধনহীন স্বাধীনতা তো গণতন্ত্রের মৌলিক চরিত্রলক্ষণ। সোশ্যাল মিডিয়া সেই মাপকাঠিতে সসম্মান উত্তীর্ণ, সুতরাং তাহা গণতন্ত্রের স্তম্ভ। নূতন যুগের উপযোগী নূতন স্তম্ভ। সত্য, কিন্তু এই সত্যের অপর পিঠে আছে দায়িত্বের প্রশ্ন। ক্ষমতা থাকিলে দায়িত্ব থাকে। অসাধারণ ক্ষমতার দায়িত্বও অসাধারণ। যাহাকে বাহির হইতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহাকে দায়িত্ব পালন করানো তুলনায় সহজ। কিন্তু যে অনিয়ন্ত্রিত, সে যদি নিজে দায়িত্ব পালন না করে, তবে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই মুহূর্তে সেই সমস্যা অতিমাত্রায় প্রকট। বসিরহাটের অশান্তিকে উপলক্ষ করিয়া রকমারি কথা এবং চিত্র সোশ্যাল মিডিয়া যোগে প্রচারিত হইতেছে। তাহার মধ্যে রহিয়াছে নানা মিথ্যা কথা, মিথ্যা ছবি। অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের দাঙ্গাহাঙ্গামার পুরানো দৃশ্য বসিরহাটের ঘটনা বলিয়া চালাইয়া দেওয়া হইতেছে। কেহ বা কাহারা এই ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করিতেছে, অন্যেরা প্রবল বিক্রমে সেই বিভ্রান্তিকে ছড়াইয়া দিতেছে। সেই দ্রুত-প্রসরমাণ মিথ্যাবলি বহু মানুষকে উত্তেজিত করিতেছে, অশান্তি বাড়িতেছে। বিপজ্জনক, সর্বনাশা অশান্তি। এই সর্বনাশা ক্ষমতার মোকাবিলা করিতে না পারিলে ঘোর সংকট।

এই প্রেক্ষিতে কলিকাতা পুলিশ এক ব্যক্তিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ভিডিয়ো চিত্র প্রচারের দায়ে গ্রেফতার করিয়াছে। যে পরিস্থিতিতে যে চিত্রটি যে ভাবে প্রচারিত হইয়াছে, তাহাকে বিপজ্জনক বলিলে কম বলা হয়। এবং, যে তাহা করিয়াছে, সে ভুল করিয়া করিয়াছে— এমন কথা বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন। মনে রাখা দরকার, ‘না জানিয়া’ মিথ্যা ছড়াইবার অপরাধও এ ক্ষেত্রে নীতিগত ভাবে সমান অপরাধ। প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের গুজরাতের হিংসার ছবিকে বসিরহাট ২০১৭-র নামে চালাইবার অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়া বিজেপির যে জনপ্রতিনিধি আত্মপক্ষ সমর্থনে বলিয়াছেন, ‘ছবিটি কোথা হইতে আসিয়াছে জানি না, আমি কেবল উহা পাইয়া অন্যদের পাঠাইয়াছিলাম’, তিনিও সুস্থ নীতিবোধের পরিচয় দেন নাই। ইহা ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ নহে। গণতন্ত্রকে বাঁচাইবার জন্যই এই ধরনের সমাজবিরোধী আচরণের অভিযোগ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করিয়া আইনানুগ কঠোর শাস্তিবিধান জরুরি, যাহাতে অন্য কেহ এমন কর্ম করিবার দুঃসাহস না পায়।

কিন্তু প্রযুক্তি যেখানে পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে মিথ্যার বেসাতি প্রতিরোধের কাজ একা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নহে। এই দায়িত্ব সচেতন ও সুচেতন নাগরিকেরও। সোশ্যাল মিডিয়ায়— বা অন্য পরিসরে— যাহা প্রচারিত হইতেছে, তাহার সত্যতা যাচাই না করিয়া মানিয়া লওয়া এবং ছড়াইয়া দেওয়া দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নহে, বুদ্ধি-বিবেচনারও অভিজ্ঞান নহে। বরং, এমন কোনও ‘পোস্ট’ চোখে পড়িলে তাহা মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির নজরে আনাই বিধেয়। ফেসবুকের আধিকারিক আঁখি দাস জানাইয়াছেন, ‘রিপোর্ট’ করা হইলে তাঁহারাও ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। অতএব, মিথ্যার আগ্রাসন প্রতিরোধে নাগরিকের দায়িত্বও স্পষ্ট। নাগরিকরা সুস্থির কাণ্ডজ্ঞানের পরিবর্তে অস্থির উত্তেজনার বশীভূত হইলে বিপদ ঘটে। এই বিপদ বাড়িয়া যায়, যখন মিথ্যা প্রচারের পিছনে রাজনৈতিক দল বা অন্য ধরনের গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র থাকে। সারা দেশেই এখন তেমন সংগঠিত অপপ্রচারের লক্ষণগুলি অতি স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়াকে সেই ষড়যন্ত্রের প্রকরণ বানাইবার চেষ্টা অস্বাভাবিক তো নহেই, অপ্রত্যাশিতও নহে। সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করা গণতন্ত্রকে রক্ষার স্বার্থেই জরুরি।

Social Media Rumors Indecent Pictures Riot সোশ্যাল মিডিয়া democracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy