Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনশন ও সরকার

সত্য, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কথা বলিয়াছেন অনশনকারীর সহিত। কিন্তু তাহাতে কাজ হইবে, অতীতের অভিজ্ঞতা হইতে এমন আশ্বাস মিলিতে পারে কি?

অনশনরত এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের পাশে মন্দাক্রান্তা। —ফাইল চিত্র।

অনশনরত এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের পাশে মন্দাক্রান্তা। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন করিবে, গণতন্ত্রে তাহা আশ্চর্য নহে। একক ভাবে বা জোট বাঁধিয়া নাগরিক সরকারি নীতির প্রতিবাদ করিতে পারে, দাবি জানাইতে পারে, আইন অমান্য বা ধর্মঘটের ডাক দিবার মতো কার্যসূচিও গ্রহণ করিতে পারে। সরকারের নিকট প্রত্যাশা, মন্ত্রী ও আধিকারিকরা নাগরিক আন্দোলনের মোকাবিলা করিবেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রশাসনিক কুশলতার সহিত। নাগরিককে ‘বিরোধী’ বানাইয়া নির্মম হইতে পারে না সরকার। কিন্তু তাহাই করিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েক শত প্রার্থী নিয়োগের দাবিতে অনশনে বসিয়াছেন। কোন যুক্তিতে সরকার ছাব্বিশ দিন ধরিয়া তাঁহাদের উপেক্ষা করিয়া আসিতেছে? শেষ অবধি যে ‘সমাধান’ মিলিয়াছে, তাহাও পরিচিত— কমিটি গঠন করা হইয়াছে। নিয়োগে দুর্নীতি-সহ সকল অভিযোগের তদন্ত করিবে কমিটি। বেশ কথা। কিন্তু তাহাতে এত বিলম্ব কেন, যখন প্রতিটি দিন অনশনের যন্ত্রণা তীব্রতর হইবে? আশঙ্কা হয়, ইহা প্রতিবাদী নাগরিককে ‘শিক্ষা’ দিবার চেষ্টা। এই প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি রাজ্যবাসীকে যারপরনাই আঘাত করিয়াছে। সেই বেদনা হইতেই বিশিষ্ট নাগরিকরা বার বার সরকারকে আলোচনায় বসিতে অনুরোধ করিয়াছেন। ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ভাবমূর্তি রাখিবার তাড়নাতেই কি সরকারের অমানবিক মুখ?

সত্য, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কথা বলিয়াছেন অনশনকারীর সহিত। কিন্তু তাহাতে কাজ হইবে, অতীতের অভিজ্ঞতা হইতে এমন আশ্বাস মিলিতে পারে কি? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করিয়া ছাত্রদের অনশন হইতে হস্টেলে স্থান পাইবার দাবিতে প্রেসিডেন্সি কলেজে অনশন, ছাত্রদের কোনও আন্দোলনই পার্থবাবু সামলাইতে পারেন নাই। তাঁহার দলীয় পদমর্যাদা যাহাই হউক, বিরুদ্ধ নানা পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করিবার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কিংবা ব্যক্তিত্ব, কোনওটিই তাঁহার আছে বলিয়া মনে হয় না। অথচ বিবিধ স্বার্থ হইতে উদ্ভূত নানা বিরুদ্ধ দাবির সংঘাত বাধিলে তাহার সমাধান সূত্রের সন্ধান রাজনীতিরই কাজ। আক্ষেপের কথা, তৃণমূল কংগ্রেস বয়কট করিতে যত স্বচ্ছন্দ, আলোচনা করিতে ততটা নহে। মেডিক্যাল কলেজে নূতন হস্টেলের দাবি তুলিয়া ছাত্রেরা যে অনশন করিয়াছিল, সেই সঙ্কটও অনেকটাই তৃণমূলের চিকিৎসক নেতাদের সৃষ্টি। সেই দিনও সরকারের বিলম্বে প্রাণসংশয় দেখা দিয়াছিল। নাগরিক সমাজ ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন হইয়া প্রশ্ন করিয়াছিল, সরকারের কি নাগরিকের জীবনরক্ষার দায়বদ্ধতা নাই? আজ ফের সেই প্রশ্নের প্রতিধ্বনি উঠিতেছে।

শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে অন্যায় হয় নাই, নিয়োগের শর্ত বোঝেন নাই প্রার্থীরা। অনশনরত প্রার্থীদের অভিযোগ, মেধাতালিকার ক্রম অনুসারে নিয়োগ হয় নাই, পক্ষপাতিত্ব হইয়াছে। সরকার-নিযুক্ত কমিটি তাহার বিচার করিবে। কিন্তু শিক্ষক-নিয়োগের বিভিন্ন পরীক্ষার মেধাতালিকা লইয়া বার বার কেন প্রশ্ন উঠিতেছে? সকল পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর কেন প্রকাশিত হইবে না? শিক্ষক নিয়োগের তথ্যে স্বচ্ছতা থাকিবে না কেন? তাহা না থাকিলে দুর্নীতির সন্দেহ জাগিবেই, প্রতিকারের দাবিও উঠিবে। এই সঙ্কট সরকারের নির্মাণ। তাহার নিরসনের দায়ও সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee SSC Student Movement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE