Advertisement
E-Paper

এই অপারগতা লঘু হবে কী ভাবে?

সঙ্কটের মেঘ যেন কাটে না কিছুতেই, শুধু ক্যাম্পাস বদলে বদলে ঘুরে বেড়ায়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৪
হিন্দু হস্টেলের ভিতরের মাঠ।— ফাইল চিত্র।

হিন্দু হস্টেলের ভিতরের মাঠ।— ফাইল চিত্র।

সহজ বিষয়কে অযথা জটিল করে তোলা যেন অভ্যাসগত হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলার শিক্ষাঙ্গনে। সমস্যার উদ্ভব হওয়ারই কথা নয় যে সব বিষয়ে, কোনও না কোনও পথে সেই সব বিষয়ও ঢুকে পড়ছে যেন সঙ্কটের সুড়ঙ্গে। প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তার পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এ বার প্রেসিডেন্সি। সঙ্কটের মেঘ যেন কাটে না কিছুতেই, শুধু ক্যাম্পাস বদলে বদলে ঘুরে বেড়ায়।

হিন্দু হস্টেল নিয়ে সমস্যা তুঙ্গে পৌঁছল। মেরামতি বা সংস্কারের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি। কিন্তু তিন বছর কেটে গিয়েছে, এখনও সংস্কার শেষ হয়নি। ছাত্রাবাসটির কোনও অংশই এখনও পড়ুয়াদের বসবাসের উপযুক্ত করে তোলা যায়নি। হস্টেলের সামনের মাঠটিও ঝোপে-জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে প্রায়।

পড়ুয়াদের থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থাপনা কোথায় হয়েছে? রাজারহাটে। পড়ুয়ারা বলছেন, থাকার জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাতায়াত করতেই বিপুল সময় বেরিয়ে যাচ্ছে রোজ। কিন্তু হিন্দু হস্টেলের সংস্কার কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। যেন এক অনন্ত অপেক্ষা, যেন সবই অনির্দিষ্ট।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

উপাচার্য দায় মাথায় নিয়েছেন। হিন্দু হস্টেলের সংস্কার তিন বছরেও শেষ করতে না পারার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আরও কয়েক মাসের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন সকলের থেকে। কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করতে পারেননি।

উপাচার্য ক্ষমা যাচনা করছেন— এর তাৎপর্য অবশ্যই অত্যন্ত গুরুতর। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবহেলা বা ঔদাসীন্য সংক্রান্ত চর্চা লঘু হয় না। হিন্দু হস্টেল নিয়ে খুব বেশি অনুভূতিপ্রবণ হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে কি? এমন প্রশ্নও ভাসিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য। অসমান্তরাল ঐতিহ্যের ছাত্রাবাসটি নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে অনুভূতির প্রাবল্য যদি থাকে, তা হলে উপাচার্যের আপত্তি কেন? এ প্রশ্ন তুলতেই হচ্ছে। হিন্দু হস্টেল তো প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আলাদা নয়। হিন্দু হস্টেলকে নিয়ে বা বেকার ল্যাবকে নিয়ে বা কোনও এক ক্যান্টিনকে নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে যে নানান অনুভূতির স্রোত, সে তো আসলে মূল প্রতিষ্ঠানটার প্রতিই আবেগ বাড়ায়। সে আবেগে উপাচার্যের সস্নেহ প্রশ্রয় থাকবে, এমনটাই তো কাম্য। কিন্তু একটা বিপ্রতীপ ভাবই লক্ষ্য করা গেল যেন উপাচার্যের কথায়।

আরও পড়ুন: আজ থেকে ক্যাম্পাসেই রাত কাটাবেন প্রেসিডেন্সির ৮০ পড়ুয়া

আবেগ, অনুভূতির কথা এক পাশে না হয় সরিয়েই রাখা যাক। ঐতিহ্য নিয়েও না মাথা ঘামানো ছেড়ে দেওয়া যাক। কিন্তু তা হলেও কি হিন্দু হস্টেলের গুরুত্ব ম্লান হয়? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ওই ছাত্রাবাসটি তো একটি বৃহৎ এবং অত্যন্ত অপরিহার্য পরিকাঠামোও বটে। সে পরিকাঠামোকে এ ভাবে বছরের পর বছর অকেজো করে রাখা কেন?

আরও কিছু মাস সময় চেয়েছেন উপাচার্য। যত দ্রুত সম্ভব কিয়দংশের সংস্কার অন্তত শেষ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশ্ন হল— পড়ুয়ারা রাজারহাটের ছাত্রাবাস ছেড়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাত কাটানো শুরু না করলে কি এই তৎপরতাটুকুও দেখাত প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ?

ছাত্রাবাস নিয়েই সম্প্রতি তীব্র সঙ্কট ঘনিয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পড়ুয়াদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সংবেদনশীল হলে ওই সঙ্কট তৈরিই হত না। সংবেদনশীল হওয়াটা কঠিন কাজও ছিল না মোটেই। কিন্তু ঔদাসীন্য বা স্বেচ্ছাচারের ভঙ্গি ছিল সম্ভবত কোথাও।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ুয়াদের সঙ্গে তুমুল বিরোধ তৈরি হয়েছিল কর্তৃপক্ষের। তৈরি হয়েছিল প্রবেশিকা নিয়ে। কর্তৃপক্ষ পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন শেষ পর্যন্ত। সব দেখেশুনে অনেকেরই মনেই হয়তো প্রশ্ন জেগেছে, সব ঠিকঠাকই যখন চলছিল, তখন এই অকারণ জলঘোলার কী প্রয়োজন ছিল?

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও সে রকম প্রশ্নই ওঠে। তিন বছর সময়টা তো কম নয়। ঔদাসীন্য না থাকলে কি হিন্দু হস্টেলের সংস্কারটা অনেক আগেই সেরে ফেলা যেত না? সহজ ভাবেই তো সংস্কারের প্রক্রিয়াটা শুরু করে দেওয়া গিয়েছিল। সহজ ভাবেই সেটা শেষ করে ফেলা গেল না কেন? ছাত্রাবাস ফিরে পাওয়ার দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলনে নামতে হল কেন?

গোটা রাজ্যটার শিক্ষাঙ্গন জুড়ে ছায়া ফেলতে চাইছে নৈরাজ্য। নিয়ন্ত্রকদের অতএব সতর্ক, সজাগ এবং সংবেদনশীল থাকতেই হবে সতত। এটুকু না বুঝতে পারলে যোগ্যতা-দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশ্ন তো উঠবেই।

Newsletter Hindu hostel Presidency University Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy