Advertisement
E-Paper

ক্লাসঘর তৈরির সময়ে ইট বয়েছেন শিক্ষকেরাও

পড়া আর খেলা চলছে সমান তালে। শিক্ষকেরা ছুটির দিনেও স্কুলে আসেন হামেশাই। কুলাই পদিমা নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্য পাঠের খোঁজ নিলেন শান্তনু বেরাযে ইংরেজি মাসে যে সব ছাত্র ছাত্রীদের জন্মদিন পড়ে, তাদের অভিভাবকরাই এই জন্মদিন উদ্‌যাপন সাহায্য করেন। আগত অতিথিরাও অনেক সময় অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করেন। 

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৯
যত্নে: স্কুলের দেওয়াল সাজাতে তুলি ধরেন শিক্ষকেরাও। নিজস্ব চিত্র

যত্নে: স্কুলের দেওয়াল সাজাতে তুলি ধরেন শিক্ষকেরাও। নিজস্ব চিত্র

অনেক সময়ই রবিবার বা অন্য ছুটির দিনে স্কুলে চলে আসেন। কখনও তাঁরা স্কুল চত্বরের বাগানে জল দেন, কখনও আবার স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের সময় ইট বইতেও দেখা যায় শিক্ষকদের।
পড়ুয়াদেরও যত্ন নেয় স্কুল। খুদে ছাত্রছাত্রীরা তাকিয়ে থাকে ইংরেজি মাসের শেষ বুধবারের দিকে। সে দিনই যে কাঁথি ১ ব্লকের কুলাই পদিমা নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্মদিন পালন করা হয়। কেক কাটা তো আছেই, সকলের জন্য ভুরিভোজের আয়োজনও থাকে। যে ইংরেজি মাসে যে সব ছাত্র ছাত্রীদের জন্মদিন পড়ে, তাদের অভিভাবকরাই এই জন্মদিন উদ্‌যাপন সাহায্য করেন। আগত অতিথিরাও অনেক সময় অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোতেও এই স্কুল সমান গুরুত্ব দেয়। ক্রিকেট, ফুটবল, স্কিপিং, দাবা, লুডো খেলার বন্দোবস্ত রয়েছে। ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে শিশু উদ্যান। সেখানে সাজানো দোলনা, স্লিপার, ব্যালেন্সিং বার। ক্যাম্পাসে আনাজ বাগানও রয়েছে। শিক্ষকদের তদারকিতে সেই বাগানে ফলে ঢেঁড়শ, লাউ, বেগুন, পেঁপে, সজনে ডাঁটা। আর সে সব মিড ডে মিলের তরকারি রান্নায় ব্যবহার হয়। খুদে পড়ুয়ারা খায় বলে বিদ্যালয় চত্বরের বাগানে আনাজ ফলাসে কোনও রকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।
এই সব কারণেই কাঁথি ২ চক্রের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পড়ুয়ারা স্কুলের টানেই স্কুলে আসে। কেউই বিশেষ অনুপস্থিত থাকতে চায় না। আর কেউ দু’-এক দিন স্কুলে না এলে, শিক্ষকেরা সটান পৌঁছে যান সেই পড়ুয়ার বাড়িতে। অনুপস্থিতির কারণ জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন। বিদ্যালয়ের পাঁচিল ও শ্রেণিকক্ষ নানা শিক্ষামূলক ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিক্ষকেরা অনেক সময় নিজেরাই হাতে রং-তুলি তুলে নেন।
১৯৪৫ সালে স্থাপিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৮ জন। শিক্ষক রয়েছেন চারজন। এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকাও স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। নিভা ঘোড়ই নামে এই শিক্ষিকা ২০০৯ সালে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের বিশেষ অনুরোধে এখনও বিদ্যালয় আসেন। নানা ভাবে সহযোগিতা করেন, কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই। স্কুলের উন্নয়নে বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক তন্ময় পণ্ডা, শ্যামল জানাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও নজরে পড়ার মতো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম মিশ্র বলেন, “আমাদের স্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে অন্য বিষয়েও শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিশেষ গুরুত্ব দেন। শিক্ষকদের মধ্যে বেশ একতা রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে।’’
ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্কুলবাড়ি এখন দো’তলা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিধায়ক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের তহবিল থেকে অতিরিক্ত কক্ষ নির্মাণের জন্য ৮ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দো’তলার নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা বর্তমান অভিভাবক বিপ্লব ভুঁইয়া বলেন, “আমরা যখন এই স্কুলে পড়তাম, তখন এত আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চেষ্টায় স্কুলের আধুনিকীকরণ হয়েছে। বিভিন্ন পাঁচিলে বোতল ঝুলিয়ে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগিয়ে যে ভাবে বিদ্যালয়কে সুসজ্জিত করা হয়েছে, তা এক কথায় অতুলনীয়।’’
এই সব আকর্ষণেই ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় হয়ে উঠেছে এই স্কুল। তৃতীয় শ্রেণির অঙ্কিতা গুড়িয়া বলে, “হাইজাম্প, লংজাম্প, দৌড়— সবই আমরা স্কুলে প্র্যাক্টিস করি। খেলার নিয়মের খুঁটিনাটি শিক্ষকরা হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছবি আঁকা, আবৃত্তি, নাচ-গানও শেখান। স্কুলে জন্মদিনে সবাই মিলে দারুণ মজা হয়।’’
স্কুলের এই ভূমিকায় খুশি প্রশাসনও। কাঁথি ১ ব্লকের বিডিও লিপন তালুকদার বলেন, “ওই বিদ্যালয়টি খুব সুন্দর ভাবে চলছে। বিদ্যালয়টিকে কী ভাবে আরও প্রশাসনিক সাহায্য করা যায়, সে জন্য ৫ ডিসেম্বর আমি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাচ্ছি। শুনেছি ওই দিনও স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্মদিন পালন করা হবে। গ্রামীণ এই বিদ্যালয়ে এমন ব্যবস্থা নিশ্চয়ই তারিফযোগ্য।’’ স্থানীয় গ্রাম সদস্য স্বপনকুমার জানাও মানছেন, “শিক্ষকেরা স্কুলের যত্ন নেন বাড়ির মতো করে। ছেলেমেয়েরাও বাড়ির পরিবেশ পায় স্কুলে এসে।’’

Education Academics Human Emotional Unique
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy