Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আদিবাসী ও বনবাসীদের প্রতি এই সরকারি ‘ঔদাসীন্য’

নীরবতার ষড়যন্ত্র

এর আগে ভারতীয় অরণ্য আইন (১৯২৭) ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) ঔপনিবেশিক স্বার্থের মডেলে তৈরি। এতে অরণ্যবাসী মানুষের বহুপ্রজন্মব্যাপী অরণ্য-নির্ভর অস্তিত্বের কথা কোথাও ছিল না। জঙ্গলে বন্দোবস্তের একমাত্র অধিকার ছিল জঙ্গল দফতরের আমলাদের।

অনিতা অগ্নিহোত্রী
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

বারো বছর হতে চলল অরণ্য অধিকার আইন প্রণীত রয়েছে। খসড়াতেই পরিবেশ মন্ত্রক ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এর বিরোধিতা করেছিল। আইনটি সূচিত হতেই এক বছর দেরি হয়। তার ওপর এর নিয়মাবলিতে ত্রুটি ছিল; ফলে এর অনুপালনে বহু বাধা আসে। তবুও, বনবাসী ও আদিবাসী মানুষের হাতে অরণ্যের ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়ার যে পদ্ধতি অরণ্য অধিকার আইন (২০০৬) সৃষ্টি করেছিল, তা ঐতিহাসিক। পঁচিশ কোটি মানুষ, এঁদের মধ্যে দশ কোটি আদিবাসী, বহু প্রজন্ম ধরে জঙ্গলে বাস করে আসছেন, চাষও করছেন আইনে চিহ্নিত বনভূমি বা সন্নিহিত অঞ্চলে। আট কোটি একরের বেশি অরণ্য, এক লক্ষ ৭০ হাজার গ্রামের জীবনযাপন তার সঙ্গে জড়িয়ে।

১৩ ফেব্রুয়ারির এক নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জঙ্গলে জমির ওপর যাঁদের অধিকারের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে, জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের অধিকৃত জমি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। ১৬টি রাজ্যকে দেওয়া এই নির্দেশে বিশাল উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে আদিবাসী অধিকার ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে। অরণ্যভূমির উপর ব্যক্তিগত অধিকারের যে ৪১ লক্ষ দাবি পেশ হয়েছে, তার মাত্র ১৮ লক্ষ অনুমোদিত, ৩ লক্ষ বিচারাধীন, ২০ লক্ষ অগ্রাহ্য বা খারিজ হয়ে গিয়েছে। সব রাজ্যের হলফনামা আদালতের কাছে জমা পড়লে সংখ্যা বাড়বে। এই পরিমাণ মানুষের উচ্ছেদ যে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা অনুমান করে ভয় হয়।

এর আগে ভারতীয় অরণ্য আইন (১৯২৭) ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) ঔপনিবেশিক স্বার্থের মডেলে তৈরি। এতে অরণ্যবাসী মানুষের বহুপ্রজন্মব্যাপী অরণ্য-নির্ভর অস্তিত্বের কথা কোথাও ছিল না। জঙ্গলে বন্দোবস্তের একমাত্র অধিকার ছিল জঙ্গল দফতরের আমলাদের। ভারতীয় অরণ্য আইন জঙ্গলের সম্পদের মূল্য নিয়ে যতটা চিন্তিত, অরণ্য সংরক্ষণের জন্য ততটা নয়। নতুন আইন আদিবাসী ও বনবাসীদের ১৪টি প্রাকবিদ্যমান অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল: (১) কৃষি ও বাসভূমির ব্যক্তিগত অধিকার, (২) বনজ সম্পদ সংগ্রহ ও বনভূমির উপর সামুদয়িক অধিকার, (৩) অরণ্যের পরিচালনা ও ব্যবহারের অধিকার।

ডিসেম্বর ২০১৬’তে আইনটির দশ বছর পূর্ণ হলে রাজ্যভিত্তিক কিছু সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত অধিকারের দাবির ৪০ শতাংশ মতো স্বীকৃত হয়েছে। যাঁরা জমিতে চাষ করে আসছেন বা বসবাস করছেন, বিশেষত আদিবাসী জনগোষ্ঠী, তাঁদের পাট্টা দেওয়ার কাজটি তুলনামূলক ভাবে সহজ। কিন্তু মাত্র ২০ লক্ষ একর বনভূমি, যা সম্ভাব্য পরিমাণের ৩ শতাংশ, তাতে অরণ্য ব্যবস্থাপনার সামুদয়িক স্বীকৃতি দেওয়া গিয়েছে। এ কাজটি অপেক্ষাকৃত কঠিন, কারণ অরণ্যের শাসক ও নিয়ামক হিসেবে যাঁরা ব্রিটিশ আমল থেকে কাজ করে এসেছেন, অরণ্য দফতরের সেই আমলাতন্ত্রের ক্ষমতায় এ হল সরাসরি আঘাত। অরণ্যকে গ্রামসভার তত্ত্বাবধানে আনার অর্থ: শিল্প ও পরিকাঠামোর জন্য জমির অনায়াস হস্তান্তর কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষমতার যে বৃত্ত শিল্পগোষ্ঠীর ইশারায় কাজ করতে অভ্যস্ত, তাঁদের সঙ্গে গ্রামসভা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অসম বিহার হিমাচল উত্তরাখণ্ড তামিলনাড়ু হরিয়ানা পঞ্জাব সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ আইন অনুপালনে সবচেয়ে পিছিয়ে। ব্যক্তিগত দাবির স্বীকৃতি ও সামুদয়িক অধিকারের স্বীকৃতি— দুই নিরিখেই। আবার ত্রিপুরা উত্তরপ্রদেশ তেলঙ্গানা অন্ধ্রপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান কর্নাটক ঝাড়খণ্ড ছত্তীসগঢ় ব্যক্তিগত অধিকারের স্বীকৃতিতে ভাল কাজ করলেও সামুদয়িক ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে। মাত্র চারটি রাজ্য দুই নিরিখেই ভাল কাজ করেছে। মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কেরল ও গুজরাত। সেখানে জনসমাজ ও স্থানীয় সংগঠনগুলিকে কাজে জড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন জেলাশাসকরা। মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলির মতো অতি-বাম সমস্যায় বিক্ষুব্ধ রাজ্যেও, রাজ্যপাল তাঁর পঞ্চম তফসিলে নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করে সামুদয়িক অরণ্য সংরক্ষণের কাজটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ ও কোরাপুটে কাজ করেছেন, এমন এক তরুণ জেলাশাসক জানালেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গ্রামসভাগুলিকে অরণ্য ব্যবস্থাপনায় সঙ্গে নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করা সম্ভব হয়েছে।

আইন প্রণয়নের পরেই ২০০৭ সালে বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি ও অন্য কিছু সংগঠন এই মর্মে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে যে, আইনটির সাংবিধানিক দৌর্বল্য আছে। প্রশ্ন তোলা হয়, জমি আবণ্টন রাজ্যের এক্তিয়ারে, কেন্দ্র এ বিষয়ে আইন কী ভাবে প্রণয়ন করে? এ-ও বলা হয় যে, বন কেটে বিস্তীর্ণ এলাকায় বসত করে তার পর ব্যক্তিগত অধিকার দাবি করা হয়েছে। ২০১৬ পর্যন্ত মামলা চলেছে ঢিমে তালে। রাজ্যগুলি সময় মতো হলফনামা দাখিল করেনি। বিচারকদের বেঞ্চ, ও সরকার পক্ষের কৌঁসুলি, দুইয়ের পরিবর্তন হয়েছে। আদিবাসী সংগঠনগুলি কিছু দিন ধরেই উদ্বেগে ছিল যে, আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আদালতে তেমন ভাবে আইনের পক্ষে কোনও মতামত দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে ১৩ ফেব্রুয়ারির নির্দেশ।

যত দূর জানা যাচ্ছে, এই মামলায় শুনানির শেষ দিনে আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন না। ফলে আদালতের সামনে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়নি। যেমন, অরণ্য অধিকার আইনে উচ্ছেদ সম্ভব, কিন্তু কারও দাবি গ্রামসভা স্তরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে মানেই উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয় না, আদিবাসীরা পরবর্তী স্তরে অর্থাৎ মহকুমা শাসক ও জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে পারেন। এখনও অসংখ্য মানুষ আবেদন করেননি। আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ না করে উচ্ছেদের প্রক্রিয়াও আরম্ভ করা যায় না। স্থানীয় বনবাসীদের ক্ষেত্রে অন্তত তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস বা কর্ষণের প্রমাণ দেখাতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ না করে উচ্ছেদ সম্ভব নয়, উভয় ক্ষেত্রেই। যে সব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করা হয়েছে, সেখানেও রয়ে গিয়েছে নানা সমস্যা, ভুল পাট্টা, দখলি জমির থেকে কম জমির পাট্টা, কোথাও বা গ্রামসভা সিদ্ধান্ত নেননি, নিয়েছেন স্থানীয় আধিকারিকরা।

যাঁরা মামলা দায়ের করেছেন তাঁরা কি সত্যিই অরণ্যের সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত? না কি গ্রামস্তরের বাস্তব দেখে বুঝে এসেছেন সব কিছু? অরণ্য আইন (১৯৮০) পাশ হওয়ার আগে ত্রিশ বছর ধরে মধ্য, উত্তর ও পূর্ব ভারতের অরণ্য অঞ্চলগুলির বিপুল নিধনযজ্ঞ কিন্তু আদিবাসী বা বনবাসীদের হাতে হয়নি। জঙ্গল বিভাগের ইজারাদার, অসৎ ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারী এবং সরকারি কর্পোরেশনগুলির নজরদারিতেই ঘটেছে এই ধ্বংস। নাশিক ও সুরাত জেলার সীমান্তবর্তী অরণ্যবাসী বৃদ্ধ আদিবাসীরা বলেন, ‘‘অরণ্য সেখানেই টিকে আছে, যেখানে আমরা বসবাস করি। আমরা কাঠকুটো, মধু, কেন্দু, মহুল সংগ্রহ করি। কিন্তু জীবন্ত গাছ কেটে ফেলি না। সরকারি কর্পোরেশনকে জিজ্ঞাসা করো, এখানকার অরণ্য কোথায় গেল?’’

গত বছর মার্চ মাসে নাশিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত যে কৃষক মার্চ হয়, তার দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, অরণ্যভূমি যা কর্ষিত হচ্ছে বহু বছর ধরে, তার মালিকানা ও পাট্টা। ওই অঞ্চলে ব্যক্তিগত মালিকানাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ বিশেষ এগোয়নি। যিনি চাষ করছেন পাঁচ কাঠা, তাঁকে পাট্টা দেওয়া হচ্ছে দু’কাঠার। উদ্বৃত্ত জমি বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে, সরকার পরে শিল্পগোষ্ঠীদের দিয়ে দেবে— এই তাঁদের সন্দেহ। সেচহীন জমিতে এঁরা কুয়ো খুঁড়তে পারেন না, পাম্প লাগাতে পারেন না, জঙ্গলের বন-আধিকারিকরা উৎখাতের ভয় দেখায়। একই শঙ্কা জানিয়েছিলেন ওড়িশার নিয়মগিরি পাহাড়ের ডোঙ্গারিয়া-কন্ধ আদিবাসীরা। যতটা চাষ হচ্ছে তার অনেক কম জমির পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। অধিগ্রহণ করতে হবে না, খাস জমি পিছনের দরজা দিয়ে নানা সংস্থাকে লিখে দেওয়া হবে।

সরকারি বিভাগগুলির ঔদাসীন্য কতটা নিজস্ব কর্মসংস্কৃতিগত, কতটা শিল্পগোষ্ঠীগুলির বাহুবলজনিত, ভাবা দরকার। যে দিন থেকে আইন এসেছে, পরিকাঠামো, শিল্প, খনির জন্য জমির ক্ষুধা বেড়েছে সে দিন থেকে। দেশে সত্তর শতাংশ তৃণভূমিতে জঙ্গল বিভাগের বাণিজ্যিক বনসৃজন হয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু অরণ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কাঠের জন্য বৃক্ষরোপণ চলেছে। ৫ লক্ষ হেক্টর অরণ্য গত দু’দশকে ধ্বংস হয়েছে খনি, শিল্প ও বাঁধ যোজনায়।

সালওয়া জুড়ুমের নামে গ্রাম কে গ্রাম জ্বালিয়ে উৎখাত করে ক্যাম্পে বসত করতে বাধ্য করা, গ্রামসভার নামে জিপে তুলে পঞ্চাশ জন আদিবাসীকে এনে জেলার দফতরে গ্রামসভার মিনিটে সই করানো, নিয়মগিরির গ্রামসভায় জনপ্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ প্রশাসকদের দুর্দান্ত উপস্থিতি, সবই কি সমাপতন? রাষ্ট্র যখন পুঁজির কণ্ঠে কথা বলে, তার নীরবতার অন্য অর্থ বোঝা যায়।

উচ্চতম কোর্টের নির্দেশ পালনের জন্য হাতে আর কয়েকটি মাস। উন্নয়নের পরিকাঠামো লেগে যাবে নির্বাচনের কাজে। এর মধ্যে ২০ থেকে ৪০ লক্ষ আদিবাসী বনবাসীর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ সম্ভব কি? পরিবেশ কর্মী ঋত্বিক দত্ত বলেছেন, ১৬টি রাজ্য অন্তত হলফনামা দিয়ে বলতে পারে যে, আইনগত ভাবে অধিকার স্বীকারের পর্বটি শেষ হয়নি। যত দিন না আপিলের সব ক’টি স্তর শেষ হচ্ছে, তত দিন উচ্ছেদ সম্ভব নয়।

ওড়িশা আদিবাসী কল্যাণ বিভাগ ২০১৭’তে একটি নির্দেশনামা বার করেছে। অধিকার প্রত্যাখ্যানের পর আপিলের হার এত কম যে, তারা ঠিক করেছে সমস্ত নামঞ্জুর মামলাকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নিজেরাই সমীক্ষা করবে মহকুমা ও জেলা স্তরে। এতে অবশ্য যুদ্ধকালীন ক্ষিপ্রতায় কাজ করতে হবে, অতিরিক্ত কর্মী লাগবে। তবু, ১৬টি রাজ্যের জন্য এটি হতে পারে একটি মডেল পদ্ধতি।

তবে সোনার তরবারিকে প্রতিহত করার মতো দরজা তো এখনও তৈরি হয়নি। বৃহৎ পুঁজির রাজনীতি এই সব পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। হাতে কিছু সময় আছে। বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা সরকার পক্ষের হয়ে আইনের ধারাগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ প্রস্তুত করতে পারেন উচ্চতম ন্যায়ালয়ের কাছে। ‌অবশ্য যদি এ ক্ষেত্রে সরকারি অনুপস্থিতির ‘নীরবতা’কে ‘সন্দেহের সুবিধা’ দেওয়া যায়!

তথ্যসূত্র: ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি, ২৪ জুন ২০১৭, ঋত্বিক দত্ত; দি কুইন্ট ডটকম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tribal Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE