Advertisement
E-Paper

ক্ষমতার জন্ম

এ কালের রাজনীতিকদের কীর্তিকলাপ দেখিলে হয়তো রামকৃষ্ণদেব বলিতেন, মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প ছোবল দেওয়াও দরকার!

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৫
সুপ্রিম কোর্ট।—ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট।—ফাইল চিত্র।

মাঝে মাঝে ফোঁস করিতে হয়। বহুব্যবহারেও কেন এই উপদেশের মূল্য কমে নাই, তাহা জানাইয়া দিল নির্বাচন কমিশনের আচরণ। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তিরস্কারের সুরে বলিয়াছিল, কমিশন ভোটের প্রচারে কুকথা বন্ধ করিতে তৎপর নহে কেন? কমিশনের আইনজীবীর জবাব ছিল, তাহার হাতে ক্ষমতা নাই। সর্বোচ্চ আদালত সন্তুষ্ট হয় নাই, হুঁশিয়ারি দিয়াছিল যে, প্রশ্নের সদুত্তর চাহিতে কমিশন কর্তৃপক্ষকে আদালতে তলব করিতে পারেন বিচারপতিরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, বিধিভঙ্গকারীদের উপর কমিশনের শাস্তি নামিয়া আসিয়াছে। এবং, দণ্ডিতদের মধ্যে রহিয়াছেন যোগী আদিত্যনাথ এবং মায়াবতীর মতো ওজনদার নায়কনায়িকারাও। এমন তৎপরতায় সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার সন্তোষ প্রকাশ করিয়াছে। মহামান্য বিচারপতিদের সন্তোষের অন্তরালে ঈষৎ তৃপ্তিবোধ থাকিলে বিস্ময়ের কিছু নাই। তাঁহারা সামান্য ফোঁস করিয়াছেন এবং অবিলম্বে সুফল মিলিয়াছে। না মিলিলে হয়তো দংশনও করিতে হইত। যেমন করিতে হইয়াছে নির্বাচন কমিশনকে। অসংযত নেতানেত্রীদের নিছক তিরস্কার না করিয়া তাঁহাদের নির্বাচনী প্রচারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছেন নির্বাচনের পরিচালকরা। ঠিকই করিয়াছেন। এ কালের রাজনীতিকদের কীর্তিকলাপ দেখিলে হয়তো রামকৃষ্ণদেব বলিতেন, মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প ছোবল দেওয়াও দরকার!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রাজনীতিকদের কথা ছাড়িয়া দেওয়া গেল, কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবেই যথেষ্ট তৎপর ও কঠোর হইবে না? বিভিন্ন দলের, বিশেষত কেন্দ্রীয় শাসক দলের বড় মেজো সেজো নেতারা যত্রতত্র অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলিয়াছেন, নির্বাচনবিধির অনুজ্ঞাকে সরাসরি অগ্রাহ্য করিয়া সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের উস্কানি হইতে সেনাবাহিনীর নামে ভোট চাহিবার দুরাচারে মগ্ন হইয়াছেন। এমনকি, গভীর দুশ্চিন্তা ও লজ্জার কথা, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে কার্যত ভোটের ময়দানে টানিয়া আনিয়াছেন। কমিশনে নালিশ হইয়াছে, কাজ হয় নাই। শাসকের বশংবদতাই এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ, এমন সংশয় গভীর। শাসকরা যে বশংবদ নির্বাচন কমিশন চাহেন, তাহা অজানা নয়। সব শাসকই অল্পবিস্তর এই ব্যাধিতে ভুগিয়া থাকেন। এই রাজ্যের মানুষও তাহা বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে ব্যাধি চরমে পৌঁছাইয়াছে। এমন কোনও প্রতিষ্ঠান নাই, যাহাকে এই সরকার নিয়ন্ত্রণ করিতে, পারিলে দখল করিতে চাহে নাই। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আপন স্বার্থে ব্যবহার করিতে পারিলে ক্ষমতা দখলের বা বজায় রাখিবার সম্ভাবনা বাড়ে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন আধিপত্যকামী শাসকের অন্যতম প্রধান নিশানা হইবে, সে আর বিচিত্র কী।

ঠিক সেই কারণেই আপন স্বাধীনতা শতকরা একশো ভাগ প্রয়োগ করা নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক কর্তব্য। আশির দশকে টি এন শেষন সেই কর্তব্য পালন করিয়াছিলেন, হয়তো শতকরা একশো ভাগের বেশিই করিয়াছিলেন। তাহার জন্য শাসকরা কম ক্ষিপ্ত হন নাই, কেবল কেন্দ্রের শাসকরা নহেন, জ্যোতি বসুর মতো রাজ্যের নায়করাও। কিন্তু শেষন কর্তব্যপালনের স্বক্ষমতা প্রয়োগে অবিচল ছিলেন। সেই অবধি নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব নূতন মাত্রা অর্জন করিয়াছে। আজ যখন নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক জড়তা কাটাইয়া উঠিয়া সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে, সে আপন ক্ষমতা অনুভব করিতেছে, তখন হয়তো প্রয়াত শেষন অলক্ষ্যে দাঁড়াইয়া মুচকি হাসেন। তিনি জানিতেন, আপন ক্ষমতা অনুভব না করিলে ক্ষমতা নিষ্ফল, আর অনুভব করিলে সীমিত ক্ষমতাও রীতিমতো কার্যকর হইতে পারে। অতিরিক্ত টাকার খেলার প্রমাণ পাইয়া কমিশন যে তামিলনাড়ু ও ত্রিপুরার একটি করিয়া লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন আপাতত রুখিতে পারিয়াছে, তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে বড় সুলক্ষণ। আশা, ক্ষমতা ক্রমে আসিতেছে।

Supreme Court Election Commission সুপ্রিম কোর্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy