Advertisement
E-Paper

সম্পর্কের বিপর্যয় দেখলাম, আত্মসমর্পণ নয়, মোকাবিলা করতে হবে

আত্মীয়তার সংজ্ঞাটা নতুন করে শিখতে হবে বা লিখতে হবে এ বার। এ পৃথিবীতে পরম আপনজন কে বা কারা? নতুন করে আবার হয়তো জানতে হবে তা। নবতিপর অবলা আচার্যের নিদারুণ অবস্থাটাই এই রকম একটা ভাবনা উস্কে দিল মনে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আত্মীয়তার সংজ্ঞাটা নতুন করে শিখতে হবে বা লিখতে হবে এ বার। এ পৃথিবীতে পরম আপনজন কে বা কারা? নতুন করে আবার হয়তো জানতে হবে তা। নবতিপর অবলা আচার্যের নিদারুণ অবস্থাটাই এই রকম একটা ভাবনা উস্কে দিল মনে।

স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু অবলাদেবী নিজেকে নিঃসম্বল ভাবেননি কখনও। সাত পুত্র তাঁর। স্বামী রেখে গিয়েছেন অগাধ সম্পত্তিও। নিরাপত্তাহীনতার বোধটা স্বাভাবিক ভাবেই কখনও উঁকি দেয়নি মনে। সন্তানের চেয়ে আপন আর কে? সন্তানরাই বা মায়ের চেয়ে কাছের ভাববে আর কাকে? অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই নিশ্চয়তা আর সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তার এই বোধটা ঘিরে ছিল তাঁকে। পরমাত্মীয়ের বিয়োগ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আরও সাত পরমাত্মীয় ঘিরে থাকবে জীবনের অবশেষটুকুতে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বোধ হয় এমনটা ভেবেছিলেন অবলা আচার্য। নব্বই বছর বয়সে পৌঁছে বুঝেছেন, নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তার যে অনুভূতিটা তাঁর ছিল, তা কতটা অন্তঃসারশূন্য ছিল, কতটা ঠুনকো ছিল!

সন্তানের ভাড়া করা দুষ্কৃতীরা গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেল অবলা আচার্যকে। বনগাঁ থেকে বসিরহাটে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে গেল। সম্পর্কের সংজ্ঞাগুলি সম্পর্কে নতুন করে এ বার ভাবতে হবে বই কী? সৃষ্টির আদি থেকে যে সম্পর্কগুলিকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে জেনে এসেছি, বোধের উন্মেষকাল থেকে যে সম্পর্কগুলির মধ্যে পরমাত্মীয়তা খুঁজে পেয়েছি, সেই সম্পর্কগুলির অভ্যন্তরীণ পরিসরে এমন চরম বিদ্বেষ বাসা বেঁধে থাকতে পারে! ভাবতে কষ্টই হয়।

অবলা আচার্যের জীবনে ভয়ানক একটা বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাথার উপর থেকে ছাদটা সরে যাওয়াকে কিন্তু বিপর্যয় বলছি না। আসলে আস্ত জীবনবোধটাই গুলিয়ে গিয়েছে অবলা আচার্যের। জীবন সম্পর্কে একেবারে বুনিয়াদি ধারণা যেগুলো ছিল, সেগুলোই নড়ে গিয়েছে। কে আত্মীয়, কে অনাত্মীয়, কে আপন, কে পর, সে সম্পর্কে আজীবন লালিত ধারণাগুলোয় প্রবল একটা ধাক্কা লেগেছে। সেটাই সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। আদৌ কি আত্মীয় বলে কিছু হয়? নবতিপর মানুষটা হয়তো এমনই ভাবছেন এখন।

বিপর্যয়ের মুখে আত্মসমর্পণ কাম্য নয়। বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেই জীবনে ফিরতে হয়। অবলা আচার্যের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা যাতে সামাজিক বিপর্যয়ের আকার না নেয়, সে এই সমাজকেই নিশ্চিত করতে হবে। সম্পর্কের সংজ্ঞাগুলো যেন বদলে না যায় আচমকা। তেমন হলে একটা দুঃসহ ঝড় উঠে যাবে। আত্মীয়তার বাঁধনগুলো থেকে বিশ্বাসের শিকড় সমূলে উপড়ে আসবে।

বনগাঁর বা বসিরহাটের ঘটনাটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থাক। নিন্দার ঝড় উঠুক। পরিতাপ আসুক। যে ক্ষতস্থানটা তৈরি হল, সে অবিলম্বে ভরে উঠুক। প্রচেষ্টাটা এখন সেই দিশাতেই হওয়া উচিত।

আত্মমন্থনেরও একটা অবসর তৈরি করল ঘটনাটা। স্ব স্ব পরিসরে সম্পর্কগুলোর প্রতি আমরা নিজেরা কতটা যত্নশীল? পরম আপন মানুষগুলোর অবমূল্যায়ন করে ফেলছি না তো কোথাও? প্রত্যেকেরই উচিত নিজের মুখটা আরও এক বার আয়নায় দেখে নেওয়া।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Abala Acharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy