Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩
Editorial News

এ অন্যায় সইলে কিন্তু ঘৃণার পাত্র হয়ে যাব

যারা অন্যায় করছি না, তারা সবাই মিলে প্রতিরোধ কি করছি? তা যদি না করি, তা হলে কসবা থানায় কর্তব্যরত গোটা বাহিনীটার মতো আমরাও অন্যায়টা সইছি।

ক্রমশ কি পিছনের দিকে হাঁটছি আমরা?

ক্রমশ কি পিছনের দিকে হাঁটছি আমরা?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কালিমা মুছতে পারেনি। তার আগেই সেই একই কালির ছিটে লাগল কলকাতা পুলিশের গায়ে। ঊর্ধ্বতন আধিকারিক তথা সহকর্মীকে জাত তুলে কটাক্ষ ও গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠল এক পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে। লজ্জার শেষ এখানেই নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা ঘটছিল এবং সাব ইনস্পেক্টরের অভিযোগ পেয়েও অভিযুক্ত কনস্টেবলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে জানা যাচ্ছে।

Advertisement

বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখতে পারছি না একে। একটা থানায় এক কনস্টেবল দিনের পর দিন তাঁর এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে বা সহকর্মীকে জাত তুলে আক্রমণ করেন— এই ঘটনায় কোনও একজনকে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করতে পারছি না। যে কনস্টেবল দিনের পর দিন এই অন্যায় করছিলেন, তিনি তো অবশ্যই দোষী। কিন্তু চোখের সামনে বা প্রকাশ্যে দিনের পর দিন এই অন্যায় হতে দেখেও যাঁরা তা সইছিলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়েও যাঁরা নীরব থাকছিলেন, তাঁরা কোন অংশে কম দোষী? নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ হিসাবে ধরে নেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রেই। এ ক্ষেত্রেও কসবা থানায় কর্তব্যরত প্রায় গোটা দলটার আচরণই ওই অশালীন আক্রমণের প্রতি সম্মতিসূচক হিসাবেই প্রতীত হচ্ছে।

কোন সমাজে বাস করছি আমরা? কোন সময়ে বাস করছি? ক্রমশ কি পিছনের দিকে হাঁটছি? অতি দ্রুত মধ্যযুগের দিকে ধাবিত হব, এমন কোনও ব্রত কি নিয়েছি? প্রথমে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরে কসবা থানা-দু’টো ঘটনাই কলকাতায় ঘটল। নবজাগরণের কলকাতা, ভারতের শিল্প-সাহিত্যকে একসময়ে পথ দেখানো কলকাতা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া কলকাতা, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত কলকাতা— সেই কলকাতায় উপর্যপরি দু’বার জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ বেআব্রু রূপ নিয়ে নিল! বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনের পর দিন চলছিল সভ্যতার এই অপমান, কসবা থানাতেও তাই, অভিযোগ অন্তত তেমনই উঠেছে। দুই ক্ষেত্রেই কোনও একজন নন অনেকে মিলে ঘটাচ্ছিলেন বা ঘটতে দিচ্ছিলেন এই চূড়ান্ত অসভ্যতা। অতএব বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা বিক্ষিপ্ত মানসিকতা হিসাবে চিহ্নিত করে কালি মুছে ফেলতে পরব না আমরা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Advertisement

আরও পড়ুন: কসবা থানার এসআই-কে জাত তুলে কটাক্ষ, কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এফআইআর

যে দু’টি পরিসরে এই লজ্জাজনক ঘটনা ঘটার অভিযোগ উঠল, তার একটি হল সারস্বত সাধনার সর্বোচ্চ স্তরের পীঠস্থান, অপরটি হল এক শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী। প্রথম পরিসরে ওই ক্ষুদ্রতা আটকে যাওয়া উচিত ছিল চেতনার কৌলীন্যে। দ্বিতীয়টিতে ক্ষুদ্রতা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া উচিত ছিল বাহিনীর শৃঙ্খলায়। কিন্তু উপলব্ধি বলছে কোনওকিছুই কাজ করল না, ক্ষুদ্রতার তীব্র উত্থানকে কোনওকিছুই আটকে রাখতে পারল না। এই উপলব্ধিও যদি লজ্জা না দেয়, তা হলে আমাদের বিনাশ রোখার সাধ্য কারও নেই। আমরা সবাই হয়ত এই অন্যায়টা করছি না, কেউ কেউ করছি। কিন্তু যারা অন্যায় করছি না, তারা সবাই মিলে প্রতিরোধ কি করছি? তা যদি না করি, তা হলে কসবা থানায় কর্তব্যরত গোটা বাহিনীটার মতো আমরাও অন্যায়টা সইছি। আপ্ত বাক্য হয়ে ওঠা পঙ‌্ক্তি বলে, অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহনকারী, দু’জনেই সম পরিমাণ ঘৃণার পাত্র।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.