প্রতীকী ছবি।
আমেরিকায় একটি শরীরচর্চা সংস্থা সিদ্ধান্ত লইল, তাহাদের প্রতিটি জিম-এ অবস্থিত সমস্ত টিভি হইতে সংবাদ চ্যানেলগুলিকে বাদ দেওয়া হইবে। দেশ জুড়িয়া তাহাদের ১৩০টি শাখাতেই এই নিয়ম জারি হইল। কিছু গ্রাহক খুব খুশি। তাঁহারা বলিতেছেন, স্বাস্থ্যচর্চা করিবার সময় সংবাদগুলি অত্যন্ত নেতিবাচক আবহ তৈয়ারি করে। তাঁহারা জিম-এ আসেন স্বাস্থ্যের যত্ন লইতে, এবং ইতিবাচক পরিবেশ তাহার পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্যই, সংবাদ চ্যানেলগুলি যে সকল সংবাদ পরিবেশন করে ও তাহা সংক্রান্ত আলোচনায় যেমন দোষারোপ ও আক্রোশের বন্যা বহিয়া যায়, তাহাতে লোকের পৃথিবী ও জীবন বিষয়ে নৈরাশ্য জাগিবার প্রভূত সম্ভাবনা। হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, এবং বহু রাষ্ট্রনায়কও সেই হিংসায় ইন্ধন জোগাইতে ব্যস্ত। আমেরিকার ক্ষেত্রে হয়তো ইহা অধিক পরিমাণে সত্য। সেই দেশের জনজীবনেও বহু গন্ডগোল, প্রায়ই উন্মাদ বন্দুকবাজ নিরীহ মানুষকে খুন করে। ওজন তুলিতে তুলিতে ব্যায়ামকারীর মনে হইতেই পারে, এই বিশ্বে অার সুস্থ থাকিয়া হইবে কী। অন্য পক্ষেও বহু গ্রাহক আছেন। তাঁহারা তীব্র অসন্তোষ জানাইয়া বলিয়াছেন, জিম কর্তৃপক্ষ কি সেন্সর বোর্ড হইয়া গেলেন? কোনও গ্রাহকের খবর দেখিতে না ইচ্ছা হয়, তিনি অন্য টিভিগুলির পরদায় চক্ষু রাখিলেই মিটিয়া যায়। কিন্তু জোর করিয়া এক ধরনের চ্যানেলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলে, তাহা গ্রাহকদের মৌলিক অধিকারের উপরেই হস্তক্ষেপ।
কর্তৃপক্ষ বলিতেছেন, এই সংস্থা বিশ্বাস করে, একটি সুস্থতাকামী মানুষ যেমন সুস্থ শরীরের দিকে নজর রাখিবেন, সুস্থ মনের প্রতিও সমান যত্নশীল হইবেন, এবং দুইটি মিলিয়াই প্রকৃত স্বাস্থ্য গড়িয়া উঠিবে। ইদানীং সংবাদের গতিপ্রকৃতি দেখিয়া, তাহা বন্ধ করিয়া দেওয়া তাঁহাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে, কারণ দেহে পেশির সহিত, হৃদয়ে সুচিন্তা যোগও তো তাঁহারা করিতে চাহিতেছেন। বহু গ্রাহক তাঁহাদের নিকট নালিশ জানাইয়াছেন, সংবাদ দেখিলে তাঁহাদের মানসিক চাপ বাড়ে। তাহা সমর্থন করিয়া কেহ বলিয়াছেন, জিম-এ তিনি আসেন অবশিষ্ট পৃথিবীর দুশ্চিন্তা ভুলিয়া, নিবিষ্ট মনে কেবল নিজ শরীরের উন্নতির কথা ভাবিতে। তাই এই পদক্ষেপ স্বাগত। কেহ তাহার বিরোধিতা করিয়া বলিয়াছেন, তাঁহার ব্যবসা সামলাইতে হয় ও তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন, তাই জিম-এ আসিয়া সংবাদগুলি জানিয়া লইতে পারিলে এক বারে দুইটি কাজ হইয়া যায়, এই প্রকারের মাল্টি-টাস্কিং তাঁহার যাপনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই ব্যবসায়ীর সহিত সুর মিলাইয়া কেহ বলিতেই পারেন, সংবাদ সম্পর্কে অবহিত থাকা তাঁহার স্বাস্থ্যকে ভাল রাখে, কারণ সমগ্র বিশ্বে কী হইতেছে সে বিষয়ে সচেতনতা তাঁহার মতে অত্যন্ত ইতিবাচক এক প্রবণতা। অনেকে অবশ্য বলিতেছেন, অত কথায় কাজ কী, জিম-এর ওয়াই-ফাই ব্যবহার করিয়া নিজ মোবাইলে পছন্দের চ্যানেল দেখিয়া লইলেই তো হয়, কিন্তু তাহাতে কর্তৃপক্ষের অহেতুক কর্তালির প্রসঙ্গটি তাৎপর্যহীন হইয়া যায়।
কিন্তু ইহাও ভাবিবার, একটি স্বাস্থ্য-আখড়ায়, গুচ্ছ গুচ্ছ টেলিভিশন (তাহার পরদায় বিনোদন বা সংবাদ— যাহা সংক্রান্ত চ্যানেলই চলুক) আদৌ রাখিবার প্রচলন হইল কেন? ইহার উপযোগিতা কী? ইহা কি চর্চাকারীর চিত্তবিক্ষেপ ঘটাইবে না? অফিসের টেবিলে লুডো বোর্ড রাখিয়া দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কার্য? আধুনিক যুগে মানুষের যে আশ্চর্য অভ্যাসগুলি দেখা দিয়াছে: সে অন্যের সহিত কথা বলিতে বলিতে আশি বার মোবাইল তুলিয়া মেসেজ দর্শন করে ও তাহার উত্তর দেয়, গাড়ি চালাইতে চালাইতে মোবাইলে কথোপকথন সারিয়া লয়, গভীর প্রবন্ধ লিখিতে লিখিতে বারংবার মেল দেখিয়া মাথা নাড়ে— এই প্রবণতাগুলি নিবিষ্ট কর্মের আদর্শের বিরোধী। কেহ যদি মনে করেন সংবাদ শুনিবেন, তাঁহার উচিত একটি স্থানে বসিয়া নিবিড় ভাবে সংবাদটি শোনা। কেহ ব্যায়াম করিতে মনস্থ করিলে, তাঁহার উচিত সমগ্র মনোযোগ কেবল ব্যায়ামটির প্রতি নিবদ্ধ রাখা। মাল্টি-টাস্কিং কথাটির অর্থ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, বিভিন্ন কাজ যুগপৎ সমান খারাপ ভাবে সম্পাদন। পূর্বে শোনা যাইত, নোবেল-প্রাপক লেখিকা তাঁহার উপন্যাস লিখিবার সময় দিনের পর দিন ফোনটিকে অকেজো করিয়া রাখিতেন। ইদানীং লোকে ফোনে সিনেমা দেখিতে দেখিতে রাস্তা পার হইতেছে। হয়তো এইটিই এই যুগের সর্বাধিক পরিহার্য প্রবণতা, সংবাদ চ্যানেল দেখিবার অভ্যাস নহে।
যৎকিঞ্চিৎ
আগামী ১৮ মাসের মধ্যে কলকাতায় খুলবে ‘ল্যাম্বরগিনি’ গাড়ির শো-রুম। এক একটা গাড়ি তিন কোটি, পাঁচ কোটি। ক্ষতি নেই, এ শহরের কিছু লোকের হাতে অবিশ্বাস্য টাকা, এবং লাখো লোককে ‘দেখবি আর জ্বলবি’ থিমে চিড়বিড়োতে তাঁরা অতি যত্নবান। মুশকিল: গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে, যদি তৃণমূল-বিজেপি’র ধুন্ধুমার লাঠালাঠির মধ্যিখানে পড়ে যান! আর তা যদি হপ্তায় বার তিনেক ঘটে! তখন বেচারিরা অটো চড়বেন আর গাড়ি-সহ সেলফি সহযাত্রীকে দেখাবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy