Advertisement
E-Paper

ঘোড়াডুম সাজে

ভারতকে দশ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি বানাইবার প্রতিশ্রুতি শুনাইয়াছেন, বলেন নাই যে তাহার জন্য বৃদ্ধির হার টানা আট বৎসর বার্ষিক নয় শতাংশের অধিক রাখিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৮
—ছবি পিটিআই।

—ছবি পিটিআই।

পীযূষ গয়াল ব্যতিক্রমী বাজেট পেশ করিলেন। এই কারণে ব্যতিক্রমী বলা হইতেছে না যে, তিনি নীতিবোধ জলাঞ্জলি দিয়া ভোটের বৎসরে ‘পূর্ণাঙ্গ’ বাজেট তৈরি করিলেন। পূর্বেও এই প্রথাভঙ্গ হইয়াছে কি না, সেই তর্কও অপ্রয়োজনীয়— যদি হইয়াও থাকে, সেই অপনিদর্শনটির পুনরাবৃত্তি কাঙ্ক্ষিত ছিল না। পীযূষ গয়ালের বাজেট এই কারণেও ব্যতিক্রমী নহে যে, তিনি তাঁহার বক্তৃতাটিকে নির্বাচনী ইস্তেহারে পরিণত করিলেন। যে দলই ক্ষমতায় থাকে, ভোটের বৎসরে কোনও না কোনও ভাবে খানিক সুবিধা আদায় করিয়া লইতে চাহে। এই বাজেটে কী থাকিবে, কী থাকিতে পারে, সেই বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ ছিল না। এই বাজেট ব্যতিক্রমী, কারণ বাজেটে এমন বুক চিতাইয়া নির্বাচনী রাজনীতি করিবার দুঃসাহস ভারতীয় রাজনীতিতেও বিরল। তাহার জন্য তিনি অর্ধসত্য ব্যবহারে পিছপা হন নাই। যেমন, তিনি ন্যূনতম খরিদ মূল্য বৃদ্ধির উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু ব্যয়ের কোন হিসাবের উপর ৫০% বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল আর তাঁহারা কোন হিসাবের উপর বাড়াইয়াছেন, সেই কথা জানান নাই। যেমন, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় এই প্রথম তিন লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াইল বলিয়া বুক ঠুকিয়াছেন, কিন্তু বলেন নাই যে, তাহা মাত্র দেড় শতাংশ বাড়িল, অর্থাৎ প্রকৃত বরাদ্দ কার্যত কমিল। ভারতকে দশ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি বানাইবার প্রতিশ্রুতি শুনাইয়াছেন, বলেন নাই যে তাহার জন্য বৃদ্ধির হার টানা আট বৎসর বার্ষিক নয় শতাংশের অধিক রাখিতে হইবে। বিপুল খয়রাতির সংস্থান কোথা হইতে আসিবে, তাহার বিশ্বাসযোগ্য হিসাব এই বাজেটে নাই, তাহার পরিবর্তে আছে সরকারি আয়ের বৃদ্ধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অ-বিশ্বাস্য আশাবাদ।

এই বাজেট ব্যতিক্রমী, কারণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বন্যায় সরকারের নীতিগত অবস্থান ভাসিয়া গিয়াছে। ক্ষমতায় আসিবার পূর্বে নরেন্দ্র মোদী ছিলেন অনুদানের নীতির ঘোষিত বিরোধী। অথচ ক্ষমতায় ফিরিবার তাগিদে তিনি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ভরিবার প্রতিশ্রুতি বিলাইলেন। কৃষি ঋণে সুদ মকুবের কথা বলিলেন। বিশেষত সেই বাজেটে, যাহা কৃষকের আয়বৃদ্ধির প্রচারে পঞ্চমুখ। কৃষকের আয় যদি পাঁচ বছরে দ্বিগুণই হয়, তবে আর তাঁহাদের অর্থসাহায্য করিতে হয় কেন? কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও পীযূষ গয়াল কার্যত মানিয়া লইলেন, সরকার আর থই পাইতেছে না। ‘এতই যখন উন্নতি, তখন কর্মসংস্থানও নিশ্চয় হইতেছে’, এই ধোঁয়াশার বদলে হিসাব দাখিল করিতে পারিতেন তিনি। অস্বস্তিকর সরকারি পরিসংখ্যান লুকাইবার অজুহাত হিসাবে আগডুম-বাগডুম না বলিয়া সাফ বলিতেই পারিতেন, সত্যই ‘চার দশকে বেকারত্বের সর্বোচ্চ হারে’ পৌঁছাইবার কৃতিত্বটি তাঁহারা অর্জন করিয়াছেন কি না।

বাজেটটি ব্যতিক্রমী, কারণ নৈতিকতার সীমাকে এতখানি উল্লঙ্ঘন করা মুখের কথা নহে। নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন, এই বাজেটের মেয়াদ পরবর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত। ক্ষমতায় ফিরিবেন, সেই ভরসা সম্ভবত তাঁহাদেরও ক্ষীণ হইতেছে, ফলে বাজেটে খয়রাতির বন্যা বহাইয়া দিয়াছেন। তাঁহারা হয়তো ভাবিয়াছেন, সাধারণ মানুষ পদ্ধতির খুঁটিনাটি বোঝেন না। ফলে, বাজেটটিকে তাঁহারা খোয়াবি পোলাও বানাইলেন। ইহাকে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাইবার অনৈতিক চেষ্টা ভিন্ন আর কী বলা যায়? ঘটনা হইল, বাজেট লইয়া রাজনীতি সব দলই করিয়া থাকে। পরিসংখ্যান গোপন করিবার চেষ্টাও নিতান্ত বিরল নহে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীর আমলে এই প্রবণতাগুলি ভীষণ রকম প্রকট, সম্পূর্ণ নির্লজ্জ। বাজেটের অব্যবহিত পূর্বে জিডিপির বৃদ্ধির হার লাফাইয়া বাড়িবার মধ্যেও সেই নির্লজ্জতা প্রকট। তাঁহারা ক্ষমতায় ফিরিবেন কি না, ইভিএম সেই উত্তর দিবে। কিন্তু, নির্বাচনী যুদ্ধে যাওয়ার পথে তাঁহারা যাবতীয় শিষ্টতা, নৈতিকতাকে লইয়া গেলেন।

Budget 2019 Union Budget Piyush Goyal Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy