Advertisement
E-Paper

তবুও শাস্তি নহে?

বিপদ অবশ্য শুধু আগুনেরই নহে। কলিকাতা মেট্রো যে ভঙ্গিতে চলে, তাহাতে প্রতি দিনই আরও অনেক বিপদের আশঙ্কা।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৪

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেট্রো রেলে আগুন লাগিল কেন, সেই কারণ নিশ্চয় খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। কিন্তু, সেই কারণটি সম্ভবত আপাতদৃষ্ট। মূল তথা গূঢ় কারণটির নাম, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ঘটনাক্রমের প্রতিটি ধাপে তাহার ছাপ স্পষ্ট। প্রথমত, বিদ্যুৎ সংযোগকারী যে অংশ হইতে আগুন লাগিবার সম্ভাবনা থাকে, তাহার রক্ষণাবেক্ষণে এমন গাফিলতি কেন? প্রাত্যহিক নজরদারিতে বিপদের সম্ভাবনাটি কেন ধরা পড়িল না? তবে, যে কোনও ব্যবস্থাতেই দুর্ঘটনা ঘটিতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে আপৎকালীন ব্যবস্থায় এ হেন খামতিই বা কেন? ইহা দ্বিতীয় প্রশ্ন। যেখানে ট্রেনটি দাঁড়াইয়া ছিল, সংবাদে প্রকাশ, ময়দান স্টেশন হইতে তাহার দূরত্ব মাত্র ৪০ মিটার। সেই দূরত্বে সাহায্য পৌঁছাইতে কুড়ি মিনিট লাগে কোন যুক্তিতে? যাত্রীদের অভিযোগ, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ করিবার জন্য যে ফোন নম্বরটি দেওয়া থাকে, তাহা কাজ করে নাই। ট্রেনের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমও নীরব ছিল। যাত্রীরাই শেষ অবধি ট্রেনের জানালা ভাঙিয়া বাহির হইয়াছেন। কেন এই উদাসীনতা, গাছাড়া মনোভাব, তাহার কারণ সন্ধান করিলে একটি মানসিকতার খোঁজ মিলিবে— যাত্রীদের যথেষ্ট ‘মানুষ’ জ্ঞান না করা। উর্দির সহিত ক্ষমতার কী সম্পর্ক, মিশেল ফুকো বলিয়া গিয়াছেন। মেট্রো রেলের উর্দিতেও কর্মীরা সেই উচ্চাবচতা প্রতিষ্ঠা করিয়া লন বলিয়াই এই উদাসীনতা।

বিপদ অবশ্য শুধু আগুনেরই নহে। কলিকাতা মেট্রো যে ভঙ্গিতে চলে, তাহাতে প্রতি দিনই আরও অনেক বিপদের আশঙ্কা। এখনও বহু মেট্রো স্টেশনেই এক্স রে স্ক্যানার অকেজো। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়সারা ভঙ্গিতে ব্যাগ পরীক্ষা করেন, এবং বহু ক্ষেত্রে সেইটুকুও করেন না। স্মার্ট গেট অকেজো। এখনও অবধি যে নিরাপত্তার সেই ফাঁক গলিয়া কোনও বড় মাপের বিপদ হয় নাই, তাহা নেহাতই দৈবকৃপা। প্ল্যাটফর্মেও বিশৃঙ্খলা। অফিসবেলায় মেট্রো প্রায় কখনও সময়ে চলে না, ফলে প্রায়শই ভি়ড় উপচাইয়া পড়ে। ট্রেনে ওঠানামার সময় বিপুল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাহাও যে কোনও দিন দুর্ঘটনার কারণ হইয়া দাঁড়াইতে পারে। প্ল্যাটফর্মের সহিত ট্রেনের পাদানির উচ্চতার ফারাকও বিপদের কারণ হইতে পারে। অল্প কথায় বলিলে, মেট্রোর শুরু হইতে শেষ অবধি একের পর এক গাফিলতির সারি। তাহার কোনও একটি যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটাইবে, সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে তাহা কার্যত অনিবার্য ছিল। বৃহস্পতিবারের আগুন যে শেষ অবধি বড় কোনও ক্ষতির কারণ হয় নাই, তাহার জন্য কর্তৃপক্ষ ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে পারেন।

আসল সমস্যা মানসিকতায়। আরও স্পষ্ট ভাষায় বলিলে, ‘যেমনটা চলিতেছে, চলিতে থাকুক’— এই বঙ্গ-মানসিকতায়। নন্দরাম, স্টিফেন কোর্ট বা বাগড়ি বাজারে যে কারণে আগুন লাগে, মেট্রোর আগুন কি চরিত্রে তাহার তুলনায় খুব পৃথক? মেট্রো রেল দাহ্যবস্তু জড়ো করিয়া রাখে নাই, সত্য— কিন্তু, ওই অবধিই ফারাক। বিপদ ঘটিবার পূর্বেই সচেতন হওয়ার যে রীতি সভ্য সমাজে প্রচলিত, পশ্চিমবঙ্গের মাটির নীচে বা উপরে তাহার নামগন্ধ নাই। বৃহস্পতিবারের আগুন কি মেট্রোর হুঁশ ফিরাইবে? রক্ষণাবেক্ষণে গতি আসিবে, নজরদারির মাত্রা বাড়িবে? ভূপৃষ্ঠের উদাহরণ ভূগর্ভ বিষয়ে বিশেষ ভরসা দেয় না। অবশ্য, ভরসার কারণও নাই। যেখানে শাস্তির আশঙ্কা থাকে, সংশোধন সেখানেই হয়। অদ্যাবধি মেট্রো রেলে যত দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, যত বার যাত্রীদের হয়রান হইতে হইয়াছে, কোনও ক্ষেত্রে এক জন আধিকারিকেরও শাস্তি হইয়াছে কি? তাঁহারা জানেন, যে অপরাধই ঘটুক, শাস্তি হইবে না। ফলে, ভুল শুধরাইয়া লইবার তাগিদ যে তাঁহাদের থাকিবে না, আশ্চর্য কী? এই বার অন্তত কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হউক। মেট্রোর ভবিষ্যতের স্বার্থেই।

Kolkata Metro Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy