Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

তিল হইতে

প্রোটনের ভর মাপা সহজ নহে। পারমাণবিক ওই কণার ওজন ১ মিলিগ্রামের ১ কোটি কোটি কোটি বা এক সহস্র পরার্ধ (১-এর পরে ২১টি শূন্য) ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

জার্মানিতে কতিপয় পদার্থবিজ্ঞানী সম্প্রতি পরীক্ষার যে ফলাফল ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহাতে ব্রহ্মাণ্ডের প্রকাণ্ড এক রহস্য সমাধানের সম্ভাবনা উঁকি দিতেছে। বিজ্ঞানের ধর্মই এই রূপ। সামান্য সূত্র অতিকায় রহস্য সমাধান করিয়া থাকে। সূত্র দেখিয়া সাধারণ মানুষ যখন প্রায় কিছুই বুঝিতে পারেন না, তখন বিশেষজ্ঞরা তাহার মধ্যে গভীর ইঙ্গিতটি খুঁজিয়া পান। জার্মান পরীক্ষকগণ ব্যাপৃত ছিলেন পরমাণুর কণা প্রোটন-এর ভর নির্ণয়ে। এই প্রচেষ্টা নূতন নহে। বিজ্ঞানের পরীক্ষাদির অনেকাংশ পরিমাপন প্রক্রিয়ার সহিত যুক্ত। কোনও জিনিসের ঠিক মাপ জানিলে তাহা নানা পরিস্থিতিতে কী রূপে বদলায়, বুঝা সহজ হয়। প্রোটন পরমাণুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, সুতরাং উহার ঠিক ভর না জানিলে পরমাণু সম্পর্কে জ্ঞান অসম্পূর্ণ থাকে। অসম্পূর্ণতা দূরীকরণের নিমিত্ত বিজ্ঞানীগণ বহু দেশে পৃথক ভাবে প্রোটনের ভর মাপিবার কার্যে মগ্ন আছেন। জার্মান পরীক্ষকগণের পরীক্ষালব্ধ ফল ফিজিকাল রিভিউ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত হইয়াছে।

প্রোটনের ভর মাপা সহজ নহে। পারমাণবিক ওই কণার ওজন ১ মিলিগ্রামের ১ কোটি কোটি কোটি বা এক সহস্র পরার্ধ (১-এর পরে ২১টি শূন্য) ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি। ওই রূপ কণার ভর সাধারণ পদ্ধতিতে মাপা যায় না, বিশেষ কৌশল আবশ্যক। জার্মান বিজ্ঞানীগণ এক বিশেষ ধরনের পন্থা অনুসরণ করিয়াছিলেন। দেখা যায় পূর্বের পরীক্ষায় প্রোটনের যে ভর নির্মিত হইয়াছিল তাহা অপেক্ষা বর্তমানের পরীক্ষায় ওই কণার ভর কম মিলিতেছে। কতটা কম? এক শতাংশের একশো কোটি ভাগের ত্রিশ ভাগ কম। এত কম হেরফের সাধারণ মানুষের ঔদাসীন্য কিংবা উপেক্ষার শিকার হইতে পারে, কিন্তু বিশেষজ্ঞ মহলে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে। রীতিমত বিতর্ক চলিতেছে এই প্রশ্নে যে, জার্মান গবেষকগণের পরীক্ষা ত্রুটিমুক্ত কি না। পরীক্ষাটি সম্পর্কে সন্দিহান বিজ্ঞানীরা পুনঃপরীক্ষার দাবিতে সরব হইয়াছেন। যে কোনও দাবি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ বিজ্ঞানে সমীচীন বলিয়া বিবেচিত হয়।

যে সব বিজ্ঞানী পরীক্ষাটি সম্পর্কে সন্দিগ্ধ নহেন, তাঁহারা বরং পরবর্তী ধাপের দিকে অগ্রসর হইতেছেন। তাঁহারা অ্যান্টিপ্রোটন নামক কণাটির ভর মাপিতে উদ্যোগী হইয়াছেন। অ্যান্টিপ্রোটন প্রোটনেরই দোসর, কেবল তাহার তড়িৎ-আধান প্রোটনের বিপরীত। প্রচলিত বিশ্বাস, অ্যান্টিপ্রোটন কণার ভরও প্রোটনের সমান। কিন্তু সত্যই কি উহাদের ভর এক? জার্মান বিজ্ঞানীগণের পরীক্ষার ফল দেখিয়া এই সংশয় জাগিতে পারে যে, উহাদের ভর কিঞ্চিৎ আলাদা। আশঙ্কাটি সত্য হইলে ব্রহ্মাণ্ডের এক প্রকাণ্ড রহস্যের সমাধান মিলিবে। ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের পর প্রোটন ও অ্যান্টিপ্রোটন সমান পরিমাণে সৃষ্টি হইয়াছিল। তথাপি কোনও অজ্ঞাত কারণে আজিকার বিশ্বে অ্যান্টিপ্রোটন আর দেখা যায় না। চারিদিকে কেবল প্রোটন। অ্যান্টিপ্রোটনেরা গেল কোথায়? প্রোটন ও অ্যান্টিপ্রোটনের ভরের তারতম্য থাকিলে ওই দ্বিতীয় কণাটির নিরুদ্দেশের হদিশ বিজ্ঞান দিতে পারিবে বলিয়া বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস। এই কারণে অ্যান্টিপ্রোটনের ভর মাপার ব্যাপারে একদল বিজ্ঞানী ঘোরতর উৎসাহী। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ভর মাপিয়া যদি ব্রহ্মাণ্ডের এক বিশাল রহস্যের কিনারা মিলে, মন্দ কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

universe mystery প্রোটন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE