Advertisement
E-Paper

অন্ধকার সময়ে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফেরাবে এই রায়

এমন একটা রায় দিল, যে রায় সাধারণ নাগরিককে বলতে পারে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর থেকে আস্থা হারানোর কোনও কারণ ঘটেনি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৬
কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় বলিউডের সুপারস্টার সলমন খানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিল জোধপুর আদালত।

কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় বলিউডের সুপারস্টার সলমন খানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিল জোধপুর আদালত।

ভারতের বিচারব্যবস্থা আবার কিছুটা আশার আলো দেখাল দুঃসময়ে। আবার এমন একটা রায় দিল, যে রায় সাধারণ নাগরিককে বলতে পারে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর থেকে আস্থা হারানোর কোনও কারণ ঘটেনি।

কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার মামলায় বলিউড সুপারস্টার সলমন খানকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে জোধপুরের আদালত। অনেকেই ভেবেছিলেন, বিশ্বাস করেছিলেন, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন— সলমন খান বেকসুর খালাস পেয়ে যাবেন এই মামলাতেও, ঠিক যেমন পেয়েছিলেন হিট অ্যান্ড রান মামলায়। অতুল প্রভাবশালী এই অভিনেতা প্রভাব খাটিয়ে আইনের ফাঁস এড়িয়ে যাবেনই, এমনটাই ভেবেছিলেন অধিকাংশ। কিন্তু সে ভাবনা ভুল প্রতিপন্ন হল। আইনের ফাঁস বলিউড সুপারস্টারের গলাতেও বেশ জোরেই চেপে বসল।

১৯৯৮ সালের মামলা, সাজা ঘোষণা হল ২০১৮ সালে। অর্থাৎ ২০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সলমন খান কৃষ্ণসার হরিণ যে মেরেছিলেন, তা প্রমাণ করতে দু’দশক সময় লেগে গেল। অনেকে বলছেন, বিলম্বিত বিচার। এই তর্ক থাকতেই পারে। এই মামলার বিচার আরও তাড়াতাড়ি হতে পারত কি না, আসামি সলমন খানের বদলে অন্য কেউ হলে, রায় আরও অনেক তাড়াতাড়ি ঘোষিত হতে পারত কি না, সে নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু সলমন খানের মতো প্রভাবশালী নাগরিককেও জেলে ঢুকতে হয়, এই ছবি ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ঋজুতার অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সলমনকে আদৌ জেলে রাখা যাবে কি না, আইনের ফাঁক গলে সলমন খান খুব দ্রুত আবার বেরিয়ে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়েও তর্ক চলছে। সে তর্ক চলতেই পারে, জবাব ভবিষ্যতই দেবে। কিন্তু তার আগে এটা প্রমাণ হয়ে গেল, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সামনে সাধারণ নাগরিক এবং প্রভাবশালীর ফারাক তেমন নেই।

আরও পড়ুন :
কয়েদি নম্বর ১০৬!

সলমন নাকি হরিণকে জল দেন, বিস্কুটও!

ভারত আজ যে সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে এরকম একটা রায় অত্যন্ত জরুরি ছিল। ললিত মোদী, বিজয় মাল্য, নীরব মোদীরা বিপুল অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত, অভিযোগ অন্তত তেমনই। এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন তাঁরা। ভারত দেখেছে, কালো টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে বিপুল ঢক্কানিনাদ কতটা অসারগর্ভ হয়। ভারত দেখেছে, কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কতটা সারবত্তাহীন হয়। ভারতের কোনও প্রান্ত আজ দেখছে, নির্বাচনের নামে কী রকম প্রহসন সাজানো হয়, কী ভাবে প্রকাশ্য রাজপথে দুষ্কৃতী-রাজ কায়েম হয়, কী ভাবে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা-গুলির ব্যবহার চলতে থাকে, কী ভাবে বিরোধীকে খুন করে দেওয়া হয়। এত রকম নেতির সমন্বয়ে অন্ধকার দিন ছাড়া অন্য কিছুর জন্ম হতে পারে না। এইসব ঘটনা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে নাগরিকের বিশ্বাসের ভিতটাকে আলগা করে দেয়। এমন এক অন্ধকার সময়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল জোধপুরের আদালত। নেতির কালো ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ল রাষ্ট্রের প্রতি সাধারণ নাগরিকের আস্থার আলো।

সলমন খানকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সলমন খান জেলেও ঢুকেছেন। কিন্তু আগামী ৫ বছর কি সলমন খান সত্যিই কারান্তরালে কাটাবেন? নাকি আইনের নানা ফাঁক খুঁজে নেবেন অথবা প্রভাব খাটিয়ে ফাঁক তৈরি করে নেবেন? এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে নানা মহলে। এ বিতর্কও চলতেই পারে। কিন্তু সব বিতর্কের মাঝে মাথা উঁচু করে উজ্জ্বল আজ জোধপুর আদালতের একটা রায়। এই রায় বার্তা দিচ্ছে, ভারতের বিচারব্যবস্থা কর্তব্যে অটল, দায়বদ্ধতায় অবিচল। ভারতীয় গণতন্ত্রের অস্তিত্বে যে সুবিচারের আশ্বাস রয়েছে, সে আশ্বাস যে এখনও মরে যায়নি, জোধপুর আদালতের রায় তা আরও একবার প্রমাণ করল।

Blackbuck Salman Khan Newsletter Anjan Bandyopadhyay সলমন খান অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy