Advertisement
E-Paper

ভয়ঙ্কর

এখন স্তব্ধ হইয়া ভাবিবারও সময় যে, ইহাই যদি মানুষের চিন্তা, ভাবনা ও কাজের নমুনা হয়, তাহা হইলে মানুষ নামক ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক জীব হইতে মানুষকে রক্ষা করিবার উপায় কী!

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
মসজিদের সামনে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জাপন।—ছবি এএফপি।

মসজিদের সামনে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জাপন।—ছবি এএফপি।

ভয়ঙ্কর কথাটিও যে এক দিন ভয়ঙ্কর রকমের দুর্বল শোনাইবে, তাহা বুঝাইয়া দিল নিউজ়িল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলা। আরও উত্তম কোনও প্রতিশব্দের অনুপস্থিতিতে ইহাকে শ্বেত-সন্ত্রাসই বলিতে হইবে। কী ভাবে আপাত-শান্তিময় একটি দেশের অন্তঃস্থলে এত বিষাক্ত বিদ্বেষ লুকাইয়া ছিল, তাহা গোটা দুনিয়ার নূতনতম চর্চার বিষয় হইবে। কিন্তু এই সময় নিছক চর্চার সময় নহে, তত্ত্বের সময় নহে, এমনকি বিলাপবাক্য আউড়াইবার সময়ও নহে। এখন স্তব্ধ হইয়া ভাবিবারও সময় যে, ইহাই যদি মানুষের চিন্তা, ভাবনা ও কাজের নমুনা হয়, তাহা হইলে মানুষ নামক ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক জীব হইতে মানুষকে রক্ষা করিবার উপায় কী! ধর্মস্থানে প্রার্থনা করিবার জন্য যাঁরা গিয়াছেন, নারী শিশু বৃদ্ধ সমেত সকলকে পিছন হইতে লাগাতার বন্দুক চালাইয়া মারিয়া ফেলাই কেবল এই ‘কাজ’-এর একমাত্র পরিচয় নহে, সঙ্গে সঙ্গে তাহার প্রত্যক্ষ চলমান ছবি তুলিয়া সারা পৃথিবীর মানুষকে এই রক্ত-উৎসব দেখাইবার ব্যবস্থা করাও ‘কাজ’-এর মধ্যে পড়ে। চলমান ছবি যাহাতে একেবারে ভিডিয়ো গেম-মাফিক হয়, তাহার জন্য ক্যামেরাটিকে শিরস্ত্রাণে বসাইয়া লইবার ভাবনাটিও অশ্রুতপূর্ব। বাস্তবিক, নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার সর্বাপেক্ষা ত্রাস-ধরানো, কম্পিত করিয়া দেওয়া বিষয় বোধ করি ইহাই। জঙ্গি হানায় রক্ত দেখিবার ও দেখাইবার এই আশ্চর্য ‘খেলা’ মানবসভ্যতা এমন ভাবে আগে দেখিয়াছে কি?

মুহূর্তমধ্যে এই ঘটনা যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অধিকার করিয়া বিশ্বব্যাপী অগণন মানুষের দ্রষ্টব্য হইয়া উঠিল, তাহাও রক্ত শীতল করিয়া দেয়। প্রযুক্তি আজ এমনই ক্ষমতা মানুষের হাতে দিয়াছে, আর মানুষ এমন ভাবেই তাহার অপব্যবহার শিখিয়াছে। ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি দ্রুত এই লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে, কিন্তু আরও অনেক দ্রুততার সহিত মানুষ বিশ্বের কোণে কোণে তাহা লুফিয়া লইয়াছে। মানুষের সঙ্গে যে প্রযুক্তি পাল্লা দিতে পারে না, পারিবে না, তাহার আর একটি দৃষ্টান্ত তবে ক্রাইস্টচার্চে দেখা গেল। কেবল সন্ত্রাস নয়, এই রক্তলোলুপ ডিজিটাল এজ-কে লইয়াই বা মানুষ কী করিবে, তাহাও অতঃপর গভীর দুঃখবোধের সহিত চিন্তা করিবার দরকার আছে। সিদ্ধান্ত হয়তো এই হইতে চলিয়াছে যে এই সভ্যতা এমন অসাধারণ অর্জনের যোগ্য নয়। এবং তাহাকে যোগ্য করিয়া তুলিবার আশাও— দুরাশা মাত্র।

দুঃখ, আতঙ্ক ও সমবেদনা, এই সবই আবার ক্রমে, ধীরে, এক ধরনের আশার প্রতিশ্রুতিতে লইয়া যাইতে পারে, যদি শুভবোধ জাগিয়া থাকে। নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন তাহার প্রমাণ। যে ভাবে তিনি ‘প্রত্যাখ্যান’-এর প্রতিশ্রুতি শুনাইয়াছেন, তাহা কেবল তাঁহার দেশকে নহে, বিশ্বের অপরাপর অনেক দেশকে— অনেক দেশের সন্ত্রাস-শোকাহত মানুষকে— স্বস্তির প্রলেপ দিবে। বহু দশক ধরিয়া তাঁহার দেশ বহুত্বের পীঠভূমি হইয়া উঠিয়াছে এবং হইতে পারিয়াছে বলিয়াই তাঁহার দেশকে এই আঘাত সহ্য করিতে হইল, এই কথাটি এমন স্পষ্ট ও নির্ভীক ভাবে বলিবার মধ্যে, এমনকি আপন পোশাক নির্বাচনের মধ্যে, বহুত্ব রক্ষার কঠিন প্রতিজ্ঞাটিও বিশ্রুত। তিনি আর একটি কথাও মনে করাইয়া দিলেন। ভারতে কিছু দিন আগেই একটি মর্মান্তিক সন্ত্রাস-আঘাত ঘটিয়া গিয়াছে, কিন্তু এই দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও স্বস্তির প্রলেপ দিবার চেষ্টাও করেন নাই, বক্তৃতা তো দূরস্থান, একটি টুইট ভিন্ন বহুভাষী প্রধানমন্ত্রী আর যাহা শুনাইয়াছেন, তাহা যুদ্ধের আহ্বান ও আরও রক্তপাতের শপথ। হিংসাকে কী ভাবে ‘প্রত্যাখ্যান’ করিতে হয়, তাহা হয়তো ভারতকে আজ নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিখিতে হইবে। শিখিবার ইচ্ছা আছে কি না, তাহা অবশ্য অন্য প্রশ্ন।

Gunman Attack New Zealand White Supremacy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy