জীবনদাতা: দ্বারভাঙার হাসপাতালে সদ্যোজাতকে রক্তদান আশফাকের। নিজস্ব চিত্র।
নকল একটা ভারতকে সামনে এনে আসল ভারতের ছবিটাকে আড়ালে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে ইদানীং। কিন্তু সত্যের শক্তি অমোঘ। তাকে চিরতরে মুছে বা ঢেকে দেওয়া অসম্ভব। বিভ্রান্তির মেঘ সাজিয়ে সাময়িক ভাবে ঘিরে হয়তো ফেলা যায় সত্যকে। কিন্তু অন্তরের দীপ্তি অচিরেই বাধা ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। সেই বিচ্ছুরণই দেখা গেল বিহারের দ্বারভাঙায়, দেখা গেল বাংলার বাদুড়িয়ায়।
সাম্প্রদায়িক হিংসা, ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি আজ দেশের নানা প্রান্তে। রক্তাক্ত ভারতীয়ত্ব, রক্তাক্ত মানবতা। সঙ্ঘাত বা সংঘর্ষে উদ্যত যাঁরা, তাঁরা বুঝছেন না, এই রক্তপাত প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্তপাত। কারণ প্রত্যেক ভারতীয়ের শিরা-ধমনীতে যে রক্ত ছুটছে অহোরাত্র, তার কণায় কণায় ভারতীয়ত্ব। আর ভারতীয়ত্বের কণায় কণায় হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পারসিক-মুসলমান-খ্রিস্টান অথবা শক-হুন-পাঠান-মোগল। যে দেশে এক দেহে লীন হয়েছে এত জাতি, যে দেশের রক্তে মিশেছে এত রকম সভ্যতা তথা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার, সেই দেশে রক্তে-রক্তে ভেদাভেদ খুঁজে বার করার চেষ্টাও হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক কাটাছেঁড়ায় ভারতীয়ত্বকে টুকরো টুকরো করে ভিন্ন ভিন্ন অস্তিত্ব খুঁজে বার করার চেষ্টা হচ্ছে। কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এই কাটাছেঁড়া, আন্দাজ করা শক্ত নয়।
কিন্তু ভুলে গেলে চলে না, সত্যের শক্তি অমোঘ। তাতে ভর করেই বার বার ঘুরে দাঁড়ায় চিরন্তন ভারতীয় মানবতা, বার বার আক্রান্ত হয়েও ফের সে মাথা তোলে। মাথা তোলে দ্বারভাঙার যুবক আশফাকের হাত ধরে, রমেশকুমারের সদ্যোজাত সন্তানকে রক্ত দিতে যে আশফাক রোজা ভাঙেন। মাথা তোলে বাদুড়িয়ার পান্তাপাড়ার হাত ধরে, যেখানে রমজানের মাঝেই মিঞারাজ মণ্ডল-হিরণ আহমেদরা সামিল হন সাবিত্রী শীলের অন্ত্যেষ্টিতে। মাথা তোলে কলকাতার প্রান্তে বসবাসকারী কোনও হিন্দু পরিবারের হাত ধরে, দশকের পর দশক ধরে নিজের উঠোনে পরম যত্নে একটা মসজিদ আগলে রেখেছে যে পরিবার।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আশার সব দীপ নির্বাপিত হয়নি এখনও। সে দীপ্তি নিঃশেষে নির্বাপিত হওয়ারও নয়। অন্ধকার সময় আসে, ভয়াল মূর্তি নিয়ে কৃষ্ণবর্ণ মেঘ জমাট বাঁধে আকাশের কোনায় বা আকাশ জুড়ে। কিন্তু সে শাসানির কাছে আত্মসমর্পণ করলে চলবে না। মনোবল হারালে চলবে না। মনে রাখতে হবে, শত-সহস্র বছরের ভারতীয়ত্বই এ ভূভাগের সবচেয়ে বড় সত্য, হানাহানি তার চেয়ে বড় নয়। হানাহানির ছাপ অতীতেও রয়েছে, বর্তমানেও তার পদধ্বনি শ্রুত হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, হানাহানি এ দেশে চিরস্থায়ী হতে তো পারেইনি, দীর্ঘস্থায়ীও হয়নি কখনও।
আরও পড়ুন: সদ্যোজাতকে রক্ত দিতে রোজা ভাঙলেন তরুণ
অন্ধকার ফুঁড়ে ভারতীয় মানবতার বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে এ মেঘাচ্ছন্ন সময়েও। ফের একটা মেঘমুক্ত আকাশ দেখতে পাওয়ার ক্ষণটাও অতএব খুব দূরে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy