Advertisement
E-Paper

দেরিতে হইলেও

যতই রামনবমীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাউক, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখনও তুলনায় ক্ষীণবল। ফলে, প্রবাদোক্ত নেপো হওয়াই দলের প্রধানতম রাজনৈতিক কৌশল। অনুমান করা চলে, পাহাড়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম বিমল গুরুঙ্গের দ্বৈরথে ফাঁকেতালে কিছু সুবিধা পাওয়াই দলের লক্ষ্য ছিল।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০০:১৩

একচল্লিশ সংখ্যাটি যে এক অপেক্ষা— অঙ্কের হিসাবে ঠিক একচল্লিশ গুণ, এবং রাজনৈতিক তাৎপর্যে তাহারও বহু গুণ— বেশি, এই কথাটি বুঝিতে কি অশোক রোডের কর্তাদের ভয়ানক রকম বিলম্ব হইল না? পাটিগণিতের হিসাবটি বঙ্গরাজনীতিতে দার্জিলিং-এর আপেক্ষিক গুরুত্বের। সমতলে লোকসভা আসনের সংখ্যা একচল্লিশ, পাহাড়ে সাকুল্যে একটি। কেহ যদি অনুমান করেন, রাজনাথ সিংহের শান্তি-বার্তা আসলে এই হিসাবের মর্মার্থ অনুধাবন করিবার ফল, খুব ভুল হইবে কি? বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় অনুমান, মুখ্যমন্ত্রী প্যাঁচে পড়িতে পারেন, এমন একটি সম্ভাবনায় তাঁহারা উৎসাহ পাইয়াছিলেন। কিন্তু, সপ্তাহখানেকের মধ্যে দিলীপ ঘোষ বলিয়া দিয়াছিলেন, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তাঁহাদের শরিক নহে, নির্বাচনের সময় দুই দলের জোট হইয়াছিল মাত্র। অতঃপর রাজনাথ সিংহের বার্তা শোনা গেল। অবস্থানের পরিবর্তনগুলি লক্ষণীয়। মোর্চা যত বেশি চরমপন্থী হইয়াছে, বিজেপি-র অস্বস্তিও আনুপাতিক হারে বাড়িয়াছে, কারণ পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান যে সমতলে তাঁহার প্রতি সমর্থনের মাত্রা আরও বাড়াইতেছে এবং বাড়াইবে, এই কথাটি কাহারও চোখ এ়ড়াইবার নহে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পাহাড়ের গুরুত্ব প্রান্তিক। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বঙ্গবিজয়ের চিত্রনাট্যেও তাহার গুরুত্ব, অতএব, বিপুল নহে। মুরলীধর সেন লেনের নীরবতা, দার্জিলিং-এ সুরিন্দরজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়ার অনুপস্থিতি, বিজেপি-র প্রতি মোর্চার প্রকাশ্যে ক্ষোভজ্ঞাপন— সবই সেই বৃহত্তর রাজনৈতিক সমীকরণের ফল। শুধু, হিসাবটি বুঝিতে এত দেরি হইল কেন, সেই উত্তর অজ্ঞাত।

যতই রামনবমীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাউক, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখনও তুলনায় ক্ষীণবল। ফলে, প্রবাদোক্ত নেপো হওয়াই দলের প্রধানতম রাজনৈতিক কৌশল। অনুমান করা চলে, পাহাড়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম বিমল গুরুঙ্গের দ্বৈরথে ফাঁকেতালে কিছু সুবিধা পাওয়াই দলের লক্ষ্য ছিল। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে যেন ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রতি কোনও অনাস্থা ফুটিয়া না উঠে, অর্থাৎ দার্জিলিং যেন কাশ্মীর না হইয়া যায়, তাহা নিশ্চিত করিতে যে পরিমাণ যত্নের প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে, তাহা কি সম্পূর্ণত মোর্চার মস্তিষ্কপ্রসূত? কিন্তু, পাহাড়ের অঙ্ক বুঝিতে বিজেপির ভুল হইয়াছিল। গুরুঙ্গ সর্বস্ব পণ করিয়া ল়়ড়িতেছেন— বাজি জিতিলে পাহা়ড়ে তাঁহার আধিপত্য ফের নিরঙ্কুশ হইবে, আর হারিলে তাঁহার রাজনৈতিক বানপ্রস্থের সম্ভাবনা বা়ড়িবে। অন্য দিকে, পাহাড়ের হাওয়া উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের জমি মজবুত করিতেছে। বিজেপির জন্য পাহাড়ে বিশেষ কিছু পড়িয়া নাই।

কিন্তু, এই ঘোলাজলে প্রথমেই পা ফেলিয়া বিজেপি নেতৃত্ব নিজেদের জন্য সমস্যা তৈরি করিয়াছেন। এখন মোর্চার পার্শ্বে দাঁড়াইলে সমতলে তাহা বাংলার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবেই দৃশ্যমান হইবে। বিজেপির অবস্থানকে মানুষ যেন সে ভাবেই দেখেন, তাহা নিশ্চিত করিতে তৃণমূল কংগ্রেস কসুর করিবে না বলিয়াই আঁচ করা চলে। আর, বিজেপি যদি নিজের অবস্থান বদলাইয়া ফেলে, তবে তাহা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়া লওয়া হইবে। এই উভয়সংকট হইতে পরিত্রাণের একটিই পথ— এবং, রাজনাথ সিংহের শান্তি-বার্তা বলিতেছে, বিজেপি সেই পথে হাঁটাই মনস্থ করিয়াছে। পথটি রাজ্যের রাজনীতি হইতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া কেন্দ্রীয় সরকার হিসাবে প্রশাসনিকতায় জোর দেওয়ার, রাজ্য প্রশাসনকে প্রয়োজন অনুসারে সাহায্য করার। রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকিতে হইলে আপাতত রাজনীতিকে বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়। অমিত শাহের দল অতি বিলম্বে হইলেও সম্ভবত কথাটি বুঝিয়াছে।

BJP GJM Darjeeling Amit Shah অমিত শাহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy