কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, ২০১৬ সালের সারোগেসি (রেগুলেশন) বিলটিকে আইনে পরিণত করার জন্য মন্ত্রিসভার সম্মতি মিলেছে। বাণিজ্যিক গর্ভ ভাড়ার প্রথা রদ করে অলট্রুয়িস্টিক বা পরার্থবাদী গর্ভ ভাড়া দেওয়াকেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে। ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডায় যে পরার্থবাদী ব্যবস্থা চালু, তার সঙ্গে ভারতের ব্যবস্থার ফারাক আছে। সে দেশগুলোতে যে কোনও মহিলা অর্থবিনিময় না করে আইভিএফ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য কারও জন্য গর্ভধারণ করতে পারেন। ভারতের নিয়ম, কমপক্ষে পাঁচ বছর যাবৎ বন্ধ্যাত্বে পীড়িত এমন ভারতীয় দম্পতিরাই ‘নিকট আত্মীয়া’র গর্ভ ব্যবহার করতে পারবেন।
চিকিৎসাশাস্ত্র বলবে, আত্মীয়তার চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কিছু শর্ত পূরণের প্রয়োজন থাকে। গর্ভ ভাড়া প্রসঙ্গে রোগীর স্বাধিকার বা সার্বভৌমত্বের কথা ওঠে বন্ধ্যাত্ব-পীড়িত দম্পতির কথা মাথায় রেখেই। কারণ রোগ বা তার চিকিৎসার উপায় এবং সেই সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে সামাজিক ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নিছক বিলাসিতা নয়। অন্তত সামাজিক আন্দোলন, ধারণাগত বিপ্লব বা বিশেষ বিশেষ রোগের প্রতি সামগ্রিক নৈতিক মননের পরিবর্তন না ঘটলে সে দাবি করাই অসম্ভব। কিন্তু এ সব যুক্তিতে জল ঢেলে ভারতে সারোগেসিকে একটা নতুন অবয়ব দেওয়া হচ্ছে। পরার্থবাদের এক নতুন সীমারেখা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে কারণ সারোগেসি এখন থেকে হতে চলেছে একটি পারিবারিক দায়বদ্ধতা— প্রজনন অক্ষমতা থেকে নিকট আত্মীয়দের উদ্ধার করে মমত্ব, সহানুভূতি ও বাৎসল্য প্রদর্শনের একটা জায়গা।
অনেকের মত, ‘ভাড়াটে গর্ভ’ হল মাতৃত্বের অবমাননা। টাকা না নিয়ে সারোগেসি করলে ‘নিকট আত্মীয়া’র দেহ ও মর্যাদার কী ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে যদিও কেউ ভাবিত নন। আইভিএফ প্রক্রিয়া যদি এই দুই শ্রেণির মহিলার উপরেই একই ভাবে প্রয়োগ করা হয়, তা হলে টাকা নেওয়া বা না নেওয়ায় তাঁদের সামাজিক ও শারীরিক পরিণাম কেন আলাদা হবে? সারোগেসি করে অর্থোপার্জন সম্ভব হলে কোনও গরিব মহিলার কাছে দ্বিতীয় বার সারোগেট হওয়ার বা অনাবশ্যক ঝুঁকি নেওয়ার হাতছানি থাকে বটে। কিন্তু নজরদারি ব্যবস্থা নড়বড়ে হলে এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আইন প্রণয়ন না করে, দফায় দফায় প্রকাশিত ও পরিবর্তিত বিলের ভরসায় দেশে সারোগেসি চালিয়ে গেলে এমনটা হওয়ার সম্ভাব্যতা বেশি হতেই পারে।