Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

শিক্ষাঙ্গনে এই নৈরাজ্য কিন্তু বিষবৃক্ষ এক

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ হাসান খান ছাত্র সংসদের মধ্যেই নিগ্রহ করছেন কলেজের এক ছাত্রীকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরাও পড়েছে এই দৃশ্য। নিগৃহীতার অভিযোগ এবং সংবাদমাধ্যমের চড়া আলোকপাত শেষ পর্যন্ত কঠিন করে তুলল পরিস্থিতি, গ্রেফতার হলেন অভিযুক্ত, জেল হেফাজতে গেলেন।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা শাহিদ হাসান খান ছাত্র সংসদের মধ্যেই নিগ্রহ করছেন কলেজের এক ছাত্রীকে। ফাইল চিত্র।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা শাহিদ হাসান খান ছাত্র সংসদের মধ্যেই নিগ্রহ করছেন কলেজের এক ছাত্রীকে। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩২
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গনকে কলুষমুক্ত করবেন, নৈরাজ্য মুছে দেবেন— প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কলুষমুক্তি অনেক দূরের কথা, নৈরাজ্যের কোলাহল রোজ বাড়ার ইঙ্গিত নানা প্রান্ত থেকে।

রিষড়ার এক কলেজ থেকে যে ছবি উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ হাসান খান ছাত্র সংসদের মধ্যেই নিগ্রহ করছেন কলেজের এক ছাত্রীকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরাও পড়েছে এই দৃশ্য। নিগৃহীতার অভিযোগ এবং সংবাদমাধ্যমের চড়া আলোকপাত শেষ পর্যন্ত কঠিন করে তুলল পরিস্থিতি, গ্রেফতার হলেন অভিযুক্ত, জেল হেফাজতে গেলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন যে কোনও পদক্ষেপ করেনি, তা স্পষ্ট। আর ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনাটি গোটা রাজ্যের রাজনীতিতে ইস্যু হয়ে ওঠার পরেও যে স্থানীয় উপ-পৌরপ্রধানের পুত্র তথা রিষড়া কলেজের ছাত্রনেতা শাহিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সাহস স্থানীয় প্রশাসন দেখাতে পারেনি, সে আরও স্পষ্ট। কারণ শাহিদকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা যায়নি, তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন, তাই শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা যে শুধু রিষড়ার কলেজটাতে সীমাবদ্ধ নেই, রাজ্যের একের পর এক ক্যাম্পাস থেকে নৈরাজ্যের ছবি উঠে আসছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন, শিক্ষাঙ্গনে অনাকাঙ্খিত আচরণ বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় একাধিক অবকাশে কঠোর অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্তও বার বার বলেছেন, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা কিছুতেই চলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু সতর্কবার্তা, হুঁশিয়ারি, তর্জন— কোনও কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিচ্ছেই।

আরও পড়ুন: রিষড়া-কাণ্ডে সামনে আসছে বহু গাফিলতি

আরও পড়ুন: কলেজ ছাত্রীকে চড়-থাপ্পড়-লাথি মারলেন তৃণমূল ছাত্রনেতা

কখনও জয়পুরিয়া কলেজ, কখনও চারুচন্দ্র কলেজ, কখনও রিষড়ার কলেজ— বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যের জেরে নিয়মিত সংবাদ শিরোনামে থাকছে রাজ্যের কোনও না কোনও ক্যাম্পাস। কোথাও পড়ুয়াদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়ে উঠছে কলেজ ক্যাম্পাস। কোথাও অধ্যক্ষকে চরম হেনস্থার মুখে ফেলা হচ্ছে। কোথাও অধ্যাপককে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে। কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সংগঠনেরই মহিলা কর্মীকে নিগ্রহ করছেন। প্রত্যেকটি ছবিই সমপরিমাণ লজ্জাজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক।

ছাত্র রাজনীতিতে নৈরাজ্যের এই দাপট কিন্তু বিষবৃক্ষ এক। এই প্রবণতার সমূল বিনাশ দরকার। নচেৎ মহীরূহের আকার নেবে এই বিষবৃক্ষ। রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মটাই নৈরাজ্যের গ্রাসে চলে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE