Advertisement
E-Paper

এই মৈত্রী ইতিবাচক, কিন্তু ভবিষ্যৎ আরও আবর্তসঙ্কুল

ট্রাম্পের অধিকাংশ পদক্ষেপকেই সংশয়ের চোখে দেখেছে এ বিশ্ব। এত কিছু সত্ত্বেও কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভারতের লাভ-ক্ষতির প্রেক্ষিত থেকে বিচার করা হলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এখনও পর্যন্ত ইতিবাচকই প্রমাণিত হয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
ম্যানিলায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: পিটিআই।

ম্যানিলায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: পিটিআই।

ক্ষমতার শীর্ষে তাঁর আরোহণকে এ বিশ্বের প্রায় কোনও প্রান্তই খুব একটা ইতিবাচক চোখে দেখেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এক প্রবল কট্টরবাদী আমেরিকার নেতৃত্বে থাকলে আমেরিকার কোনও মঙ্গল নেই, বিশ্বেরও মঙ্গল নেই— এমন তত্ত্বে বিশ্বাসীরাই সম্ভবত দলে ভারী এ পৃথিবীতে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর যে কোনও নেতাই কার্যকালের মেয়াদের গোড়ার দিকটায় রাষ্ট্রের সঙ্গে ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ যাপনের সুযোগ পান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তাও হয়নি। ভাবমূর্তি এমনই তাঁর যে, হোয়াইট হাউসে পা রাখার মুহূর্ত থেকেই প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে ঘরে-বাইরে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ট্রাম্পের অধিকাংশ পদক্ষেপকেই সংশয়ের চোখে দেখেছে এ বিশ্ব। এত কিছু সত্ত্বেও কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভারতের লাভ-ক্ষতির প্রেক্ষিত থেকে বিচার করা হলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এখনও পর্যন্ত ইতিবাচকই প্রমাণিত হয়েছে।

আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের সূত্রপাত যে ট্রাম্প জমানায় শুরু হয়েছে, তা নয়। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সময়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন বাঁকের সূচনা। পরে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামার জমানায় ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় দ্রুত অগ্রগতি এবং অভূতপূর্ব উন্নতি। কিন্তু এই রাজনীতিকদের চেয়ে অনেক দূরের কোনও এক খামখেয়ালি গ্রহের বাসিন্দা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ঠিক কোন পথে যাবে, সে বিষয়ে নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিল না, ধোঁয়াশায় ছিল ওয়াশিংটনও। আশঙ্কা কিন্তু অমূলক প্রমাণিত হয়েছে ক্রমে। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হয়নি একেবারেই। অনেক ক্ষেত্রে বরং ভারতের প্রতি আগের চেয়েও বেশি আন্তরিকতার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে হোয়াইট হাউস।

প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে ভারতকে নিজেদের বৃহৎ সামরিক সহযোগীর মর্যাদা দিয়েছিল আমেরিকা। ব্যবসা-বাণিজ্যও বেড়েছিল অনেকটাই। ওবামার অনেক নীতিই ট্রাম্প জমানায় আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু ওবামার ভারত নীতির প্রতি কোনও বিতৃষ্ণা ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত দেখাননি। বরং সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ট্রাম্পের প্রশাসন আরও দৃঢ় করেছে সহযোগিতার বন্ধন। যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত নেই, সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েও ভারতের কথা বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সেই মঞ্চ থেকেও ভূয়সী প্রশংসা করছেন ভারতের আন্তর্জাতিক ভূমিকার— এমন দৃশ্য কিন্তু আগে তেমন একটা দেখা যায়নি। তাই আমেরিকায় ট্রাম্প জমানাকে নেতিবাচক চোখে দেখা নয়াদিল্লির পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: ফের বৈঠকে মোদী-ট্রাম্প, পরস্পরের ভূয়সী প্রশংসা ভারত-আমেরিকার

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক যেমন নতুন যুগে পৌঁছে গিয়েছে, তেমনই ভারত-চিন সম্পর্কও কিন্তু সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় টানাপড়েনের সাক্ষী হয়েছে চলতি বছরেই। চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা সরকার বহু দিন ধরেই চালাচ্ছে। চিনের তরফে তাতে ইতিবাচক সাড়াও রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ সবের মধ্যেই ডোকলামের মতো অভূতপূর্ব সঙ্কট মাথাচাড়া দিয়েছিল। সঙ্ঘাত এড়িয়ে সে সঙ্কটের নিরসন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু চিন তলে তলে ফের সঙ্ঘাতেরই ছক কষছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট পৌঁছেছে নয়াদিল্লিতে।

মোদী-ট্রাম্প অক্ষটা এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বৃহত্ প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা ভারতকে চালিয়ে যেতেই হবে। কিন্তু চিন যে তার চিরকালীন সম্প্রসারণবাদ এবং প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচ্ছন্ন নীতি থেকে কিছুতেই সরে আসবে না, তাও ভারতকে জেনে রাখতে হবে। ভারসাম্যটা ধরে রাখতে তাই এক অদ্ভুত মানসিক লড়াই প্রয়োজন এই মুহূর্তে। সেই মানসিক লড়াই বা স্নায়ুর লড়াইয়ে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন নৈকট্য বা মোদী-ট্রাম্প বন্ধুত্ব ভারতের জন্য খুব বড় ইতিবাচক বিষয়।

ভারসাম্যের খেলায় চিনের দিকে কী ভাবে নজর রাখবেন, আমেরিকাকে কী ভাবে জায়গা ছাড়বেন, কী ভাবে জায়গা নেবেন, তা মোদীকেই স্থির করতে হবে এবং অত্যন্ত সতর্ক ভাবে করতে হবে। এখনও পর্যন্ত সে লক্ষ্যে নয়াদিল্লি সফলই বলা চলে। তবে ভবিষ্যত্ আরও আবর্তসঙ্কুল বলেই প্রতীত হয়। সে লড়াইয়ের জন্য শুভেচ্ছা রইল মোদীর প্রতি। কিন্তু আগের চেয়েও বেশি সতর্কতা কাম্য।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় USA Donald Trump India Narendra Modi ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy