Advertisement
E-Paper

দূষণে প্লাস্টিক

সম্প্রতি গ্রিনপিস ‘ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হইয়া বিয়াল্লিশটি দেশের উপর একটি সমীক্ষা চালায়। উদ্দেশ্য, প্লাস্টিকজাত পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন বৃহদায়তন সংস্থার নেপথ্য ভূমিকার একটি সুস্পষ্ট ছবি জনসমক্ষে তুলিয়া ধরা।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৬

প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা গিয়াছে। অপরাধী, পৃথিবীর তিন বিখ্যাত নরম পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা। কৃত অপরাধের গুরুত্বটি কম নহে। পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিস-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠিয়া আসিয়াছে, পৃথিবীর বৃহত্তম প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎপাদনকারী তাহারাই। সম্প্রতি গ্রিনপিস ‘ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হইয়া বিয়াল্লিশটি দেশের উপর একটি সমীক্ষা চালায়। উদ্দেশ্য, প্লাস্টিকজাত পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন বৃহদায়তন সংস্থার নেপথ্য ভূমিকার একটি সুস্পষ্ট ছবি জনসমক্ষে তুলিয়া ধরা। দেশগুলি হইতে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্যে এই তিন সংস্থার সাড়ম্বর উপস্থিতি প্রমাণ করিয়াছে, পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সন্দেহটি সর্ব্বৈ সত্য এবং সমস্যাটিও অত্যন্ত গভীর।

গভীরতার কারণ, বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তার নিরিখে সংস্থা তিনটি প্রথম সারিতে বর্তমান। অর্থাৎ, রাতারাতি ব্যবহার কমাইয়া নিষ্কৃতি মিলিবে না। একমাত্র সমাধান হইতে পারিত, সংস্থাগুলি যদি স্ব-উদ্যোগে ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য’ প্লাস্টিক বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করিত। তাহার আশা যে একেবারে নাই, তাহা নহে। সংস্থার কর্ণধাররা এই কর্মসূচি এবং লক্ষ্যের সঙ্গে সহমত। অঙ্গীকার করিয়াছেন ২০৩০ সালের মধ্যে তাঁহারা প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ব্যবহার করিবে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতায় বিশ্ব এখন যে জায়গায় অবস্থান করিতেছে, তাহাতে এই সময়সীমা কিছু অধিক বলিয়াই বোধ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশ হইতে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে মিলিয়াছে পলিস্টিরিন, যাহা মূলত প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হইয়া থাকে এবং ফোম-নির্মিত কফি কাপও। পেট-বোতল এবং কন্টেনার-এর স্থান তাহার পরই। অর্থাৎ, দৈনন্দিন ব্যবহার্যও অনায়াসেই ঢুকিয়া পড়িতেছে দূষণের তালিকায়। দীর্ঘ দিনই পরিবেশবিদরা সতর্কবার্তা দিতেছেন প্লাস্টিকদূষণ লইয়া। ভারতেও এই দূষণের প্রভাব কিছুমাত্র কম নহে। এই দেশের সামুদ্রিক জীবন এবং বৃহৎ শহরগুলির নিকাশিব্যবস্থা ইহার কারণে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সতর্কবার্তা মানিতে যে যুদ্ধকালীন তৎপরতার প্রয়োজন ছিল, তাহা হয় নাই। কিছু রাজ্য এবং বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু অঞ্চল ব্যতিক্রম হইতে পারে। সার্বিক ভাবে প্রশাসনিক তরফে সময়সীমা বাঁধিয়া দেওয়া ছাড়া কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নজরদারি ঘোরতর ভাবে অনুপস্থিত।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্রাথমিক দায়টি সরকারেরই, সন্দেহ নাই। কিন্তু নাগরিক দায়িত্ব তাহাতে কম হইয়া যায় না। আইন না-মানিবার একটি সহজাত প্রবণতা এই দেশের নাগরিকদের মধ্যে বর্তমান। যত্রতত্র ব্যবহৃত বোতল এবং প্লাস্টিকের কাপ ফেলিয়া দেওয়া, পরিবেশবান্ধব দ্রব্যের বদলে মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিকপ্রিয়তাও এই দূষণে প্রতিনিয়ত ইন্ধন জোগাইয়া চলিতেছে। বিদেশে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ফেলিবার আলাদা ব্যবস্থা থাকে। নাগরিকরাও তাহা মানিয়া চলেন। অন্যথায় কড়া শাস্তির বিধান আছে। এই দেশে সেই সচেতনতা নাই, অ-সচেতন নাগরিককে সচেতন করিবার প্রয়াসও নাই সরকারের তরফে। বর্ষাকালে নিকাশি বন্ধ হইয়া শহরে ভয়ঙ্কর বন্যার উপক্রম হইলে সরকার নাগরিকের উপর দোষ চাপায়, নাগরিক সরকারের উপর। এই বহতা ঐতিহ্যের শেষ কবে, কেহ জানে না।

Pollution plastic Greenpeace Soft Drinks company
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy