Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কঞ্চির ভূমিকা পালন করে এমন হাস্যকর কার্যকলাপের প্রয়োজন কী?

বাঁশের চেয়ে কঞ্চি যে বেশি দড় হতে চায়, তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তা যে বেশ বিরক্তিকর, সেও জানি। বাবু যত বলেন, পারিষদ দল যে সব সময় তার শত গুণ বলতে চায়, এ কারও অজানা নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

বাঁশের চেয়ে কঞ্চি যে বেশি দড় হতে চায়, তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তা যে বেশ বিরক্তিকর, সেও জানি। বাবু যত বলেন, পারিষদ দল যে সব সময় তার শত গুণ বলতে চায়, এ কারও অজানা নয়। কিন্তু পারিষদ দলের সে আচরণ যে শুধু বিদ্রূপেরই যোগ্য, সেও সকলেরই জানা। তা সত্ত্বেও বার বার এই প্রবাদ-প্রবচন হয়ে ওঠা পঙ্‌ক্তিগুলোর সত্যতা প্রমাণে উঠে-পড়ে লাগেন কেউ কেউ। মদন মিত্র, নির্মল মাজি এবং তাঁদের আরও অনেক রাজনৈতিক সহকর্মী সেই গোত্রেই পড়েন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতালের আর্থিক জুলুমের বিরুদ্ধে সরব হলেন। প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষকর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন। এই পর্যন্ত প্রায় সবই ঠিক ছিল। কিন্তু নেত্রীর পদক্ষেপ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মদন মিত্র আচমকা অতি-সাংবিধানিক হয়ে উঠলেন এবং সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষী রেখে বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষকর্তাকে চরম শাসানি দিলেন। নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মোটেই পছন্দ করেননি মদন মিত্রের এই ভূমিকা। সে বার্তা যে মুহূর্তে পেয়েছেন, সেই মুহূর্ত থেকে মদন ফের যেন খোলসের মধ্যে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সদ্যোজাত শিশু চুরি গেল। প্রবল হইচই তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করতে বৈঠক ডাকলেন। হাসপাতালে আয়া-রাজ নিয়ন্ত্রণে আনার কথাও সম্ভবত ভাবছিলেন তিনি। কিন্তু আর এক পারিষদ নির্মল মাজি আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করে দিলেন, আয়া-রাজের পরিসমাপ্তি ঘটেছে রাজ্যে। তা নিয়ে জটিলতা, তা নিয়ে ক্ষোভ, তা নিয়ে অভিমান এবং তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল উষ্মা। উষ্মাটি টের পেয়েই গুটিয়ে গেলেন নির্মল।

এমন হাস্যকর কার্যকলাপের প্রয়োজন কী? নিজেদের এত হাস্যকর করে তোলার দরকারটাই বা কোথায়? মদন মিত্র, নির্মল মাজি এবং তাঁদের আরও অনেক রাজনৈতিক সহকর্মীর কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা একান্ত নিজস্ব রাজনৈতিক ঘরানা রয়েছে। সে ঘরানায় কিছু আচম্বিত কার্যকলাপ মানিয়ে যায়। তাঁকে অনুসরণ করা যেতে পারে, কিন্তু অনুকরণটা অনেক ক্ষেত্রেই বেমানান হয়ে যায়। পারিষদবর্গ কিন্তু অনুকরণেই অভ্যস্ত। অতএব বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।

দলের কর্মীরা নেতা বা নেত্রীর মতোই হতে চাইবেন, তাঁকেই নকল করতে চাইবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জনসংযোগে জোর দেওয়া জরুরি, প্রতি মুহূর্তে জনমতের গতিপ্রকৃতি অভ্রান্ত ভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি, যে রাজনৈতিক মুন্সিয়ানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ভুল ভাবে বুঝে নেন জন-আবেগের প্রতিটি মোড়, সেই মুন্সিয়ানাকে রপ্ত করা জরুরি। পারিষদরা তা করেন না। তাঁরা কঞ্চির ভূমিকা পালন করেন, নেতা যা বলেন বা করেন, পারিষদরা তা-ই অন্ধ ভাবে শতগুণে বলতে বা করতে থাকেন। এই অভ্যাস যত দিন থাকবে, তত দিন পরিহাস আর বিদ্রূপেরই পাত্র হয়ে থাকতে হবে। নেতা-সুলভ শ্রদ্ধা অর্জন করা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE