ব্রিকস সামিটে মোদী।
অনেক কিছু করলাম আমরা।
জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করলাম। ক্ষতস্থান গোটা বিশ্বকে দেখালাম। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করলাম। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করলাম। সার্ক বাতিল করে দিলাম। ব্রিকস আর বিমস্টেকের সম্মেলনে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের ডেকে এনে রক্তিম গালিচাও বিছিয়ে দিলাম।
কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছলাম কি? ভারতের কূটনৈতিক মহল ঈষৎ বিভ্রান্ত।
পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদে ভারত অনেক দেশের সমর্থন পেয়েছে। ছোট, মাঝারি, বড়— বিভিন্ন স্তরের শক্তি পাশে দাঁড়িয়েছে। সর্বতো ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। সে সব নিশ্চয়ই খুব শ্লাঘার বিষয়। কিন্তু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রেক্ষিতে চিনের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ ভারতের পক্ষে। সেই অবস্থান কিন্তু মোটেই স্বস্তিদায়ক হল না।
পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের দীর্ঘ এবং গভীর মিত্রতা। সে রেশ বজায় রেখে চিন যে পাকিস্তানের পাশেই দাঁড়াবে, তা প্রত্যাশিতই। কিন্তু তার মধ্যেই ভারত সম্পর্কে কিছুটা ইতিবাচক এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত মজবুত একটা বার্তা চিনের থেকে আদায় করে নেওয়া লক্ষ্য ছিল ভারতের। তা তো হলই না, বরং চিন আরও স্পষ্ট উচ্চারণে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল। চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানাল, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তানের ত্যাগও উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানের সেই আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকেও আহ্বান জানাল বেজিং। যদিও চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই মন্তব্য করেননি, সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে এই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তবু এ কথা স্পষ্ট যে সরকারের শীর্ষকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া তিনি এ মন্তব্য করেননি। কারণ, কূটনীতিকরা ভালই জানেন, কী ভাবে অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে হয়। ভারত-পাকিস্তান বিবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে এই কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করার প্রশ্নে কোনও অস্বস্তি যে ছিল না এবং এই অবস্থান ব্যক্ত করার সুযোগের অপেক্ষাতেই যে বেজিং ছিল, তা চিনা বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতেই স্পষ্ট।
কেন এল এমন একটা ধাক্কা? একটা মহল বলছে, এ হল ভারতের ভ্রান্ত কূটনীতির মাশুল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার চেষ্টা ভারত আগেও করেছে, ভবিষ্যতেও করতে পারে। কিন্তু সব আন্তর্জাতিক মঞ্চকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়, এমনটা ভাবা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা। ব্রিকস সম্মেলন একটি বহুপাক্ষিক কর্মসূচি। তাকে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিবাদের সালিশি মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা বেশ অনভিপ্রেতই। সেই অনভিপ্রেত কাজটাই করতে চেয়েছিল নয়াদিল্লি, যা সম্ভবত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরেছে চিনের প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে।
ব্রিকসের মঞ্চে পাকিস্তান-কেন্দ্রিক আলোচনা অন্য দেশগুলির পক্ষেও হয়তো অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভদ্রতা ও সৌজন্যের মোড়ক ধরে রেখে তা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা। চিন তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই সৌজন্যের পথে হাঁটেনি। ঘনিষ্ঠ মিত্রের পাশে দাঁড়িয়ে আরও কঠোর কূটনৈতিক শব্দ প্রয়োগ করেছে।
কূটনৈতিক আগ্রাসন কখনও কখনও জরুরি। কিন্তু ভারসাম্যও আবশ্যক। কোনও সফল রণকৌশলই আদ্যন্ত আক্রমণাত্মক হতে পারে না। ভারতের কূটনৈতিক যোদ্ধাদের সে কথা বোঝা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy