Advertisement
E-Paper

বিষাক্ত

একটি অনলাইন সমীক্ষায় প্রকাশ, বিষাক্ত বিশেষণটি এখনও সর্বাধিক প্রযুক্ত হইতেছে আক্ষরিক অর্থেই, রাসায়নিকের সহিত। কিন্তু, সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করিয়াছে পৌরুষ।

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৫

স‌ংশয় ছিল, গরলই প্রকৃত পানীয় কি না। ২০১৮ সাল নিঃশেষে মুছিয়া লইয়াছে যাবতীয় প্রশ্ন, দ্বিধা। অতঃপর আশ্চর্য কী যে এই বৎসরের শব্দ হিসাবে ইংরাজি ভাষার একটি অগ্রগণ্য অভিধান ‘টক্সিক’ শব্দটিকে বাছিয়া লইবে। বিষাক্ত। সম্ভবত, এই সময়ের জন্য সর্বাপেক্ষা সুপ্রযোজ্য বিশেষণ। সময়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগে ইংরাজি ভাষায় যখন শব্দটির ব্যবহার আরম্ভ হইয়াছিল, তাহার পরবর্তী তিন শতক শব্দটির অর্থ শুধুমাত্র আক্ষরিক ছিল। গ্রিক শব্দবন্ধ ‘টক্সিকন ফার্মাকন’ হইতে শব্দটির উৎপত্তি। আদি ভাষায় তাহার অর্থ ছিল বিষ মাখানো তির (যদিও, গ্রিক হইতে ইংরাজিতে আসিবার সময় বিষ বুঝাইতে গৃহীত হয় সেই শব্দটি, যাহার অর্থ ছিল তির)। আলঙ্কারিক অর্থে শব্দটির ব্যবহার আরম্ভ হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। কিন্তু, সেই ব্যবহার ছিল অতি সীমিত। আলঙ্কারিক ব্যবহারের বিস্ফোরণ ঘটিল একবিংশ শতকে— আরও নিখুঁত হিসাবে বলিলে, ২০১৮ সালে। অনিবার্যই বটে, কারণ জাতীয়তাবাদ হইতে পৌরুষ, পরিবেশ হইতে অস্মিতা, এই সময়ে সবই বিষাক্ত হইয়াছে। এমনই ক্ষমতা অর্জন করিয়াছে যে সেই বিষের প্রাবল্যে ভাসিয়া যাইতেছে সভ্যতার যাবতীয় অর্জন।

একটি অনলাইন সমীক্ষায় প্রকাশ, বিষাক্ত বিশেষণটি এখনও সর্বাধিক প্রযুক্ত হইতেছে আক্ষরিক অর্থেই, রাসায়নিকের সহিত। কিন্তু, সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করিয়াছে পৌরুষ। ‘মি টু’ নামক সুনামির পর বুঝিতে কোনও সমস্যা থাকে না যে পৌরুষ এবং পৌরুষতন্ত্র বস্তুটি কতখানি বিষাক্ত, কতখানি ক্ষতিকারক হইয়া উঠিতে পারে। পৌরুষ সেখানে ক্ষমতাকে ব্যবহার করিয়া ধ্বস্ত করিয়া দিতে চাহে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নারীর অর্জিত দাঁড়াইবার জায়গাটুকু। আর, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরঁ দুনিয়াব্যাপী তিরস্কার কুড়াইতেছেন এই কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া যে (বিষাক্ত) উগ্র জাতীয়তাবাদে নষ্ট হইয়া যায় জাতির নৈতিকতা। যাঁহারা মাকরঁর প্রতি খড়্গহস্ত, এই বিষের মাহাত্ম্য তাঁহারা বিলক্ষণ বোঝেন। এবং জানেন, ধর্ম বা আফিমের ন্যায় উগ্র জাতীয়তার বিষও বহু মানুষকে বহু দিন অবধি আচ্ছন্ন করিয়া রাখিতে পারে। তাহাতে মেক্সিকোর সীমান্তে অথবা অসমের গ্রামে বিচ্ছিন্ন হয় পরিবার; তাহাতে বহু কষ্টে গড়িয়া তোলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কাঠামোটি ভাঙিয়া পড়িবার আশঙ্কা জন্মায়; তাহাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আশঙ্কায় বাঁচিতে হয়। কিন্তু, তাহাতে ক্ষমতাও স্থায়ী হইবার আশ্বাস মিলে।

রাজনীতির কীট কী ভাবে কাটিয়া দিতে পারে একটি দেশের বহু কষ্টে বুনিয়া তোলা ধর্মনিরপেক্ষতার গালিচা, ভারত টের পাইয়াছে। উগ্র হিন্দুত্বের আগাপাছতলা টক্সিক, বিষাক্ত। মনের গভীরে থাকা সাম্প্রদায়িকতার যে চোরা স্রোতকে মানুষ লুকাইয়া রাখিত লজ্জায়, এখন তাহারই উদ্‌যাপন হয়। যাবতীয় আগ্রাসনই এখন উদ্‌যাপনের বিষয়। ভারতবাসী অভিজ্ঞতায় জানে, রাজনীতি আর রাষ্ট্রক্ষমতা মিলিয়া কী ভাবে সেই টক্সিক সংস্কৃতিকেই দেশের মূলধারায় প্রতিষ্ঠা করিয়া ফেলিল। বিশ্ববাসীর অভিজ্ঞতাও সমরূপ। এই সময়ের জন্য আর কোনও বিশেষণ কি খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব ছিল? দশ দিকে নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত তিরের ব্যঞ্জনা কি অন্য কোনও শব্দ ধরিতে পারিত?

MeToo Toxic Emmanuel Macron
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy