Advertisement
E-Paper

তামিলনাড়ুকে কি পরিহাস করছে গণতন্ত্র?

গণতন্ত্রের এক নিষ্ঠুর পরিহাস যেন মঞ্চস্থ হতে দেখছি। তামিলনাড়ুতে মঞ্চস্থ হচ্ছে সে কুনাট্যরঙ্গ। তামিলনাড়ুই সে পরিহাসের শিকার হচ্ছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫২

গণতন্ত্রের এক নিষ্ঠুর পরিহাস যেন মঞ্চস্থ হতে দেখছি। তামিলনাড়ুতে মঞ্চস্থ হচ্ছে সে কুনাট্যরঙ্গ। তামিলনাড়ুই সে পরিহাসের শিকার হচ্ছে।

ভারতের অন্য প্রদেশগুলি যে পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তামিলনাড়ুও সে ভাবেই নির্বাচনে অংশ নেয়। গণতন্ত্রের অনুশীলন সর্বত্র যে ভাবে হয়, তামিলনাড়ুতে তার চেয়ে কোনও অংশে কম হয় না। তবু বার বার ‘পুতুল-মুখ্যমন্ত্রী’রা ফিরে ফিরে আসেন ভারতের সুদূর দক্ষিণতম প্রান্তের রাজ্যটিতে।

জয়ললিতার নামে বার বার রায় দিয়েছে তামিল জনতা, আর কোনও এক অমোঘ ভবিতব্যের টানে তিনি বার বার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। প্রতি বারই তাঁর পরিবর্ত হিসেবে মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেয়েছেন ও পনীরসেলভম। কিন্তু নামেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেয়েছেন তিনি। কারান্তরাল থেকে হোক বা দৃশ্যান্তরাল থেকে, জয়ললিতাই বরাবর নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন পুতুল-মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভমকে।

জয়ার প্রয়াণের পর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয় বারের জন্য পনীরসেলভমের অভিষেক ঘটল। যে হেতু জয়া বার বার নিজের পদ সঁপে যেতেন পনীরসেলভমের হাতে, সে হেতু জয়ার প্রয়াণে তিনিই স্বাভাবিক উত্তরসূরি, অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এমন। কিন্তু তামিলনাড়ুর ভবিতব্য বা নিয়তি সম্ভবত অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। আসলে পনীরসেলভমকে অস্থায়ী ভাবে সামনে রেখে একটা আবডাল তৈরি করা হয়েছিল। সেই আবডালটাকে ব্যবহার করে অন্য কারও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিল। স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, জেনে হোক বা না জেনে, পনীরসেলভম আরও এক বার পুতুল-মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন।

আবডালটা যে মুহূর্তে খসল, প্রয়াত জয়ললিতার দলের অন্দরমহলটা সেই মুহূর্তেই লজ্জাজনক ভাবে বেআব্রু হয়ে পড়ল। পনীরসেলভম আর পুতুল থাকতে রাজি নন। শশিকলা নটরাজনও নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নন। এমন এক সন্ধিক্ষণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানাল, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় বিচারপতিরা শশিকলাকে রেহাই দিতে রাজি নন। অতএব তামিলনাড়ু আবার সেই নিষ্ঠুর পরিহাসের মুখে। কারান্তরালবর্তী হওয়ার আগে বিদ্রোহী পনীরসেলভমের উৎপাটন এবং অনুগত পালানিসামির আরোহন সুনিশ্চিত করার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখলেন না শশিকলা নটরাজন। বিধায়কদের এ যাবৎ গতিপ্রকৃতি বলছে, পালানিসামির পাল্লাই ভারী। তাই যদি হয়, তা হলে আরও এক পুতুল-মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পড়তে চলেছে তামিলনাড়ু, কারান্তরাল থেকে যাঁকে চালনা করবেন শশিকলা নটরাজন।

তামিলনাড়ুতে গণতন্ত্রের পরিহাস শুধু এটুকুতে সীমাবদ্ধ নেই। পরিহাসের ছায়াপাত শাসকের পরিষদীয় দলের কার্যকলাপেও। যে শশিকলা নটরাজন কস্মিন কালে রাজনীতিতে ছিলেন, যে শশিকলা নটরাজন কখনও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হননি, সর্বোপরি যে শশিকলা নটরাজনকে জয়ললিতা নিজে কখনও রাজনীতিতে আনেননি, সেই শশিকলাই আজ জয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হয়ে উঠতে উদগ্র। আর গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে আসা এআইএডিএমকে পরিষদীয় দলের সিংহ ভাগ শশিকলার সেই মূলব্যবোধহীন এবং নির্লজ্জ উচ্চাকাঙ্ক্ষার সামনে নতমস্তক। বিধায়করা যেন বিস্মৃত যে তাঁদের দায়বদ্ধতা জনাদেশের প্রতি, সংবিধানের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি, জয়ললিতার বান্ধবীর অযাচিত এবং অনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি নয়।

গণতন্ত্রের নিষ্ঠুর পরিহাসই কি তা হলে ভবিতব্য তামিলনাড়ুর? এর থেকে কি মুক্তি নেই তামিল জনতার? ব্যক্তি-পূজার মধ্যে রাজনৈতিক অবলম্বন খোঁজার চেষ্টা যত দিন না বন্ধ হবে সুদূর দক্ষিণে, তত দিন এই পরিহাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যিই কঠিন।

Jayalalitha News Letter panneerselvam Sasikala Anjan Bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy